৭২তম মিনিটে লুইস দিয়াসের বদলি নামলেন রবের্তো ফিরমিনো। কিন্তু তখন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে নিয়ে উচ্ছ্বাস জানানোর অবস্থায় নেই লিভারপুল সমর্থকরা। দল যে ছিল পিছিয়ে। শেষ দিকে ফিরমিনো নিজেই দলকে পথ দেখালেন। বুদ্ধিদ্বীপ্ত গোলে সমতার স্বস্তি দিলেন দলকে, হাসি ফোটালেন সমর্থকদের মুখে। অ্যানফিল্ডে ‘অলরেড’দের হয়ে নিজের শেষ ম্যাচটি জয়ে রাঙাতে না পারলেও হার এড়ানোর তৃপ্তি নিয়ে মাঠ ছাড়লেন ফিরমিনো।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে শনিবার ঘরের মাঠে অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে ১-১ ড্র করে লিভারপুল। জ্যাকব র্যামজির গোলে পিছিয়ে পড়া দলকে ৮৯তম মিনিটে সমতায় ফেরান ফিরমিনো।
৩৭ ম্যাচে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে থাকা লিভারপুলের চতুর্থ হওয়ার আশা টিকে থাকল কাগজে-কলমে। নিউক্যাসল ইউনাইটেড ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ৬৯ করে পয়েন্ট নিয়ে যথাক্রমে আছে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে। এই দুই দল অবশ্য লিভারপুলের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলেছে।
ম্যাচের শুরুর আবহ ছিল ফিরমিনোকে ঘিরেই। তখনও কিক অফের বাঁশি বাজেনি। গ্যালারিতে ভেসে উঠল ট্রফিতে ফিরমিনোর চুমু আঁকা ছবি, সুরে-সুর মিলিয়ে লিভারপুল সমর্থকরা গেয়ে উঠলেন গান, ‘ইউ উইল নেভার ওয়াক এলন।‘ ‘সি সেনোর’ ধ্বনিও প্রতিধ্বনিত হলো চারপাশে।
ফিরমিনোকে বেঞ্চে রেখেই অবশ্য একাদশ সাজান লিভারপুল কোচ। ম্যাচ শুরুর আগে এক ঝলক দেখা মেলে এই ফরোয়ার্ডের। চোখে-মুখে বিষণ্নতার লুকোচুরি খেলা চলছে।
২১তম মিনিটে স্নায়ু চাপের লাগাম যেন মুঠোয় রাখতে পারলেন না অ্যাস্টন ভিলার আর্থার ওয়াটকিন্স। পোস্টের বাইরে মেরে বসেন স্পট কিক। বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা এই ইংলিশ ফরোয়ার্ডকে বক্সে ইব্রাহিমা কোনাতে ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি।
লিভারপুলের রক্ষণে চাপ ধরে রেখে ছয় মিনিট পরই গোল তুলে নেয় অ্যাস্টন ভিলা। দগলাস লুইসের ক্রসে ডাইভিং হেডে আলিসনকে পরাস্ত করেন জ্যাকব র্যামজি। স্বাগতিক সমর্থকদের স্তব্ধ করে দিয়ে নেচে ওঠে ভিলার সমর্থকরা।
প্রথমার্ধে চারটি আক্রমণ শাণালেও কোনোটিই লক্ষ্যে রাখতে পারেনি লিভারপুল। অন্যদিকে চার শটের দুটি লক্ষ্যে রেখে একটি থেকে গোল আদায় করে নেয় অ্যাস্টন ভিলা।
৫১তম মিনিটে মোহামেদ সালাহর দূরের পোস্টে নেওয়া শট আটকান এমিলিয়ানো মার্তিনেস। একটু পর কোডি হাকপো জালে বল জড়ালে ক্ষণিকের জন্য স্বস্তি ফেরে লিভারপুল শিবিরে, কিন্তু তা উবে যায় ভিএআরে অফসাইড ধরা পড়ায়।
আক্রমণের ধার বাড়াতে ৭২তম মিনিটে একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন করেন লিভারপুল কোচ। ফিরমিনোসহ মাঠে নামেন চলতি মৌসুম শেষে লিভারপুল ছাড়ার অপেক্ষায় থাকা জেমস মিলনার। এই মৌসুম শেষে নাবি কেইতা ও অ্যালেক্স অক্সলেড-চেম্বারলেইনও হবেন দলছুট।
কিন্তু প্রতিপক্ষের চাপে তেমন কেনো আক্রমণ শাণাতে পারছিল না লিভারপুল। অবশেষে ৮৯তম মিনিটে আড়াল ভেঙে বেরিয়ে আসেন ফিরমিনো। সালাহর ক্রসে নিখুঁত টোকায় বল জড়ান জালে। উল্লাসে কেঁপে ওঠে গ্যালারি। বিদায়বেলার সেরা মুহূর্তটি তখন ফিরমিনো আকাশের দিকে তাকিয়ে উদযাপনে ব্যস্ত।
সাফল্যের সোনার হাসিতে মোড়ানো আটটি বছরে দলটির হয়ে ফিরমিনোর মোট গোল হলো ১১০টি।
এরপর যখন বাজল ম্যাচ শেষের বাঁশি, ফিরমিনোর বিষণ্ন মুখটি ভেসে উঠল টিভি পর্দায়। প্রতিপক্ষ, সতীর্থরা একে একে বাঁধতে লাগলেন আলিঙ্গণে।