নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা সমতায় শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে জিতেছে প্রতিযোগিতার রেকর্ড চ্যাম্পিয়নরা।
Published : 04 Jul 2023, 11:14 PM
কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারি। এক কোণে হলুদ ব্যানারে কালো কালিতে লেখা ‘বিলিভ,’ পাশেই যথারীতি কিংবদন্তি সুনিল ছেত্রিকে নিয়ে টাঙানো আরেকটি ব্যানার, ‘ইম্মোর্টাল নাম্বার-১১।‘ কিক অফের বাঁশি বাজতেই গ্যালারিতে কাঁপন উঠল স্লোগানে, ‘সুনিল লেটস গো’, ‘ইন্ডিয়া লেটস গো’, ‘ব্লু টাইগার লেটস গো।' সুরের কিংবদন্তি এ আর রহমানের ‘মা তুঝে সালাম’ গানও সমর্থকদের কণ্ঠে বেজে উঠল কোরাসের মতা। লড়াইও হলো জমজমাট। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা সমতায় শেষের পর রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকে জিতে বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট ধরে রাখল ভারত।
বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার টাইব্রেকারে কুয়েতকে ৫-৪ গোলে হারায় ভারত।
কুয়েতকে এগিয়ে নিয়েছিলেন শাবাইব আল খালিদি। প্রথমার্ধেই সমতা ফেরান লাল্লিয়ানজুয়ালা চাংতে। নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ সমতায় শেষের পর ম্যাচের ভাগ্য গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
টাইব্রেকারে ভারতের শুরুর পাঁচ শটের মধ্যে জালের দেখা পান ছেত্রি, সন্দেশ জিঙ্গান, চাংতে ও শুভাশীষ বোস। চতুর্থ শটে মিস করেন উদান্ত সিং, তার শট ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়ে যায়।
কুয়েতের মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর প্রথম শট ক্রসবার কাঁপিয়ে ফেরে। পরে জালের দেখা পান ফাওয়াজ আল ওতাবি, আহমেদ আলদেফেরি, আব্দুল আজিজ মাহরান ও আল খালিদি।
এরপর এক শটের লড়াইয়ে ভারতের মনি সিং পান জালের দেখা। অন্যদিকে খালেদ হাজিয়াহর শট গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে ফেরালে জয়ের বাঁধহারা উৎসবে মেতে ওঠে ভারত।
আগে থেকেই সাফের রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন ছিল ভারত। নবম শিরোপা জিতে রেকর্ডটাকে আরেকটু উঁচুতে তুলল তারা।
অপরাজিত থেকে ফাইনালের মঞ্চে ওঠার পর আসল ম্যাচেই হারের তেতো স্বাদ পেল অতিথি দল কুয়েত। পরিসংখ্যানের পাতায় সমতা ফেরাল ভারত, আগের চার মুখোমুখির হিসেবে কুয়েতের জয় ছিল দুটি। ভারতের জয় হলো দুটি। অন্য ম্যাচটি ড্র।
আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে শুরু থেকে জমে ওঠে ম্যাচ। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে কষ্টের জয় পাওয়া কুয়েত ফাইনালে এগিয়ে যায় চতুর্দশ মিনিটেই।
প্রতিআক্রমণ থেকে সতীর্থের আড়াআড়ি ক্রসে নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন শাবাইব আল খালিদি। সাফে এটি তার দ্বিতীয় গোল। গ্রুপ পর্বে নেপালকে ৩-১ গোল উড়িয়ে দেওয়া ম্যাচেও জালের দেখা পেয়েছিলেন এই ফরোয়ার্ড।
পরের মিনিটেই সমতায় ফিরতে পারত ভারত, কিন্তু বক্সের বাইরে থেকে সাহাল আব্দুল সামাদের শট ঝাঁপিয়ে আটকান কুয়েত গোলরক্ষক। ফিরতি শট নিয়েছিলেন ভারতের কিংবদন্তি ফরোয়ার্ড ছেত্রি, কিন্তু এবারও তার শট ফেরান আব্দুল রহমান মারজুক।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে সমতার স্বস্তি ফিরে প্রতিযোগিতার রেকর্ড চ্যাম্পিয়নদের শিবিরে। সাহালের আড়াআড়ি পাসে দূরের পোস্টে থাকা চাংতে।
দ্বিতীয়ার্ধেও লড়াই সমানে সমান। যদিও আল খালিদি, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহরা পায়ের কারিকুরিতে প্রায়ই ভারতের রক্ষণে তুলছিলেন কাঁপন, কিন্তু কাঙিক্ষত গোল মেলেনি তাদের। ছেত্রি, সাহালরাও নির্ধারিত সময়ে পারেননি ভারতকে এগিয়ে নিতে। অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় খেলা।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথম অর্ধে কুয়েত চাপ দিতে থাকে ভারতের রক্ষণে। কয়েক বার আল খালিদি ডান দিকে দিয়ে বক্সে হানাও দেন, কিন্তু আকাশ মিশ্র-মেহতাব সিংদের রক্ষণে চিড় ধরাতে পারেননি।
দ্বিতীয় অর্ধের শুরুতেই ফাওয়াজ আল ওতাবির কোণাকুণি শটে ব্লকড হয় রক্ষণে। ১১৮তম মিনিটে চাংতের শট যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। কোনো দল জালের দেখা না পেলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেই বাজিমাত করে ভারত।