উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ
উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানের বিপক্ষে সেমি-ফাইনাল সামনে রেখে নেওয়া শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে থাকল রকমারি রসদ!
Published : 26 Oct 2024, 07:23 PM
প্রস্তুতির শুরু আর শেষের আবহে এত বদল! শুরুতে মারিয়া-মনিকারা সবাই হাসিখুশি। কোচ পিটার জেমস বাটলারও ব্যস্ত সময় কাটালেন ভুটান ম্যাচের ছক বুঝিয়ে দিতে। এরপর কোচ গণমাধ্যমের সামনে এসে বিস্ফোরক মন্তব্য করতে থাকলেন একের পর এক! ভুটান ম্যাচের প্রসঙ্গ সেখানে থাকল যৎসামান্যই!
প্রস্তুতিতে অদৃশ্যভাবে থাকলেন মেয়েদের সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নাম না জানা কারো কারো উপস্থিতিও। এমনকি জ্বরে আক্রান্ত অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের সাথে শনিবার দেখা, কথা-কোনোটাই হয়নি, এমন কথাও বললেন বাটলার। অথচ প্রস্তুতিতে নামার আগের পরিবেশ ছিল একেবারেই আলাদা।
ভুটানের অনুশীলন চলায় শনিবার আর্মি হেডকোয়ার্টার্স স্টেডিয়ামের বাইরে বেশ খানিকটা সময় অপেক্ষায় থাকতে হয় বাংলাদেশ কোচ, খেলোয়াড় সবাইকে। এই সময়ে খোশগল্পে মেতে থাকতে দেখা গেল মেয়েদের। অপেক্ষা শেষে মাঠে ঢোকার সময় দেখা গেল দলনেতা সাবিনা নেই। দলের সুত্রে জানা গেল, জ্বরের কবলে পড়েছেন অধিনায়ক।
প্রস্তুতিতে সেরা একাদশের ইঙ্গিত দিলেন বাটলার। পোস্টের নিচে যথারীতি রূপনা চাকমা। রক্ষণে আফিদা খন্দকার, মাসুরা পারভীন, শামসুন্নাহার জুনিয়র ও শিউলি আজিম। মাঝমাঠে মনিকা চাকমা, মারিয়া মান্দা ও স্বপ্না রানী। আক্রমণভাগে তহুরা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা, শাহেদা আক্তার রিপা। এদের মধ্যে জ্বর সেরে অনুশীলনে ফিরেছেন আফিদা।
পাকিস্তান ম্যাচে গোল করা শামসুন্নাহার জুনিয়রকে দেখা গেল অধিকাংশ সময় বসে সময় কাটাতে। পায়ে হালকা ব্যথা থাকায় তেমন কোনো অনুশীলনই করলেন না এই ফরোয়ার্ড। এক-দুবার বলে লাথি দিয়ে ফের মাঠের কোণায় এসে বসে থাকলেন তিনি।
সেমি-ফাইনাল বলে টাইব্রেকারের প্রস্তুতি হলো। ঋতুপর্নার শট উড়ে গেল ক্রসবারের উপর দিয়ে। ভারত ম্যাচে জোড়া গোলের আনন্দে ডানা মেলা তহুরা নিখুঁত শটে জাল খুঁজে নিলেন। টাইব্রেকারের অনুশীলনে কয়েকবার পরাস্ত হলেন রূপনা, তার সঙ্গে পোস্টের নিচে ব্যস্ত সময় কাটালেন দ্বিতীয় গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগমও।
প্রস্তুতি শেষে কথা বলতে এলেন বাটলার ও মারিয়া মান্দা। মারিয়া খেলার আলোচনাতেই থাকলেন। কিন্তু বাটলার হাঁটলেন উল্টো পথে, করতে থাকলেন বিস্ফোরক সব মন্তব্য। দলের অন্দরে যে কোন্দলের চোরাস্রোত বইছে প্রবলভাবে, পেছন থেকে কারা কলকাঠি নাড়ছে-এগুলো নিয়েই উষ্মা, ক্ষোভ ঝাড়তে থাকলেন বাটলার!
নাম উল্লেখ না করলেও বাটলারের অভিযোগের তীর সাফ জয়ী সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনসহ আরও অনেকের দিকে! সুদূর ইংল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে আসার কারণ এই দলের উন্নতি, এ কথাও তিনি বললেন দৃঢ় কণ্ঠে।
“দেখুন আপনি যখন কোনো টুর্নামেন্টে খেলতে নামবেন, তখন সবকিছুই ট্যাকটিক্যাল ও টেকনিক্যাল বিষয় নয়, আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে, খুব বেশি খেলোয়াড়ও যেন চোটের শিকার না হয়। দুজন খেলোয়াড়ের ইনজুরি আছে। কয়েকজন খেলোয়াড় জ্বরের কবলে পড়েছিল…আবারও বলছি, আমি আশা করি না, এই মেয়েদের কেউ প্ররোচিত করুক। যেভাবে মেয়েরা খেলছে, আমি তাদের নিয়ে ভীষণ খুশি। আশা করি, আমরা এভাবে চালিয়ে যেতে পারব। লক্ষ্য হচ্ছে ফাইনাল খেলা। আমি অনেক দূর এসেছি এবং আসলেই চাই, বাংলাদেশ এই ট্রফি জিতুক।”
দুই বছর আগে এই ট্রফি জয়ের পথে সেমি-ফাইনালে ভুটানকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে হ্যাটট্রিকের আলো ছড়িয়েছিলেন সাবিনা। এবার তার খেলা নিয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না বাটলার। বরং সাবিনাকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি যা বললেন, সেখানেও থাকল দলের মধ্যে চলা অস্থিরতার প্রমাণ।
“সাবিনার জ্বর হয়েছে, সে অসুস্থ। তার সাথে আমার (আজ) কথা হয়নি। গতকাল আমি তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছি। এরপর তার সাথে আমার দেখা হয়নি। দেখুন, আমি ইংল্যান্ড থেকে এসেছি, বাংলাদেশের (দলের) সর্বোচ্চ ভালোর জন্য চেষ্টা করছি। আশা করি, সাফল্য নিয়ে এখান থেকে ফিরতে পারব।
ভুটানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেই জাতীয় দলে অভিষেক রাঙিয়েছিলেন সাগরিকা। সাবিনার বিকল্প হিসেবে তাকে ভেবে রেখেছেন বলেও জানালেন বাটলার।
“আমি আসলেই জানি না (সাবিনা খেলতে পারবে কিনা)। আগামীকাল এটা দেখব, ম্যাচগুলো খুব দ্রুত চলে আসছে। দলে মনিকা, সাগরিকা-আমার হাতে আক্রমণভাগেও বিকল্প খেলোয়াড় আছে। আমি মনে করি না, সাবিনা না খেলতে পারলে সমস্যা আছে। তাকে আমরা মিস করব। অনেককেই মিস করব। তবে আমি মনে করি, আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে।”
সব মিলিয়ে বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশ দলের বর্তমান অবস্থা অনেকটা সুপ্ত অগ্নিগিরির মতো। হুট-হাট লাভা বেরিয়ে আসছে! সেই আগুনে ভুটান নাকি বাংলাদেশ নিজেই-কে পুড়বে, কে জানে!