আতশবাজির রঙিন দ্যুতি আলো ছড়ালো টোকিওর আকাশে, মহামারীর অশুভ ছায়া তাতে কাটল?
Published : 23 Jul 2021, 07:33 PM
আয়োজনে বহু কাটছাঁট হলেও ঐতিহ্য মেনে দলে দলে হেঁটে গেলেন দুই শতাধিক দেশ থেকে আসা ক্রীড়াবিদরা। তাদের মুখের হাসি ঢাকা থাকল মাস্কের নিচেই।
আলোচনা, সমালোচনা, প্রশ্ন-ক্ষোভ সব কিছু সঙ্গে নিয়েই শুক্রবার রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দা উঠল টোকিও অলিম্পিকসের।
জাপানের সম্রাট নারুহিতো এমন এক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়াযজ্ঞের উদ্বোধন ঘোষণা করলেন, যখন পৃথিবী শাসন করছে এক প্রাণঘাতী ভাইরাস।
সেই ভাইরাস থেকে বাঁচতেই স্টেডিয়াম প্রায় খালি রেখে শুরু হল ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। আধুনিক অলিম্পিকসের ৩২তম আসরে বিশ্বের আশার মশাল জ্বাললেন জাপানের টেনিস তারকা নাওমি ওসাকা।
এ পর্যন্ত এই তারকা অ্যাথলেটের অর্জনের শোকেসে আলো ছড়াচ্ছে দুটি ইউএস ওপেন ও দুটি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন শিরোপা।
এবারের আসরে স্বাগতিক জাপানের ৫৫২ জন অ্যাথলেট অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ২৯৩ পুরুষ ও ২৫৯ জন নারী।
অবশ্য এ আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন এখনও থেমে নেই। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন বাড়ছে, তখন এভাবে অলিম্পিকসের আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ জাপানিরাই।
শঙ্কা জেগেছিল শেষ মুহূর্তে সবকিছু ভেস্তে যাওয়ার। কিন্তু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সেই শঙ্কার আপাত অবসান হলো।
মার্চ পাস্টে সবার আগে ছিল গ্রিস, যারা অলিম্পিক গেমসের প্রথম আয়োজক। এরপর অলিম্পিকসের রিফিউজি দল এবং সবশেষে আসে স্বাগতিক জাপান দল। সব মিলিয়ে ২০৭টি দেশ এবারের আসরে অংশ নিচ্ছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রায় ৬৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ছিল না সাধারণ দর্শক। ২০৭টি দেশের অ্যাথলেট, কোচ, কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছিলেন জাপানের সম্রাট নারুহিতো এবং এক হাজার ভিআইপি।
বাংলাদেশের হয়ে এই আসরে অংশ নেবেন মোট ৬ অ্যাথলেট। বাকিরা হলেন সাঁতারু জুনাইনা আহমেদ, আর্চার রোমান সানা, স্প্রিন্টার জহির রায়হান ও শুটার আব্দুল্লাহ হেল বাকি।
মার্চ পাস্ট শুরুর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন শান্তিতে নোবেল জয়ী বাংলাদেশি মোহাম্মদ ইউনুস। তখন তার হাতে ছিল অলিম্পিকের লোগো সংবলিত অলিম্পিক লরেল। টোকিওর আসরের শুভকামনা জানান তিনি।
করোনাভাইরাসের থাবায় এখন বিপর্যস্ত সরাবিশ্ব। ঘরবন্দি মানুষ। এই কঠিন সময়ে অ্যাথলেটদের কীভাবে কাটাতে হয়েছে, প্রস্তুতি নিতে হয়েছে, তা তুলে ধরেন তোসুবাতা আরিসা; যিনি একই সঙ্গে নার্স ও বক্সার।
ফিট থাকতে ট্রেড মিলে দৌড়েছেন আর্সিয়া। মহামারীর সময়ে সারা বিশ্বের অ্যাথলেটরা ঘরে একা অনুশীলন চালিয়ে যেতে কতটা কষ্ট করেছেন, তা ফুটে উঠেছে তার কথায়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নানা প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয় বিভিন্ন দেশের শিল্প-সংস্কৃতি। বৈশ্বিক সম্প্রীতি ও ঐক্যের বার্তা দিয়ে শিল্পীরা গেয়ে ওঠেন জন লেননের বিখ্যাত ‘ইমাজিন’ গানটি।
সুঙ্গিনামী জুনিয়র কোরাস দলের সঙ্গে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে রেকর্ড করে আনা অ্যাঞ্জেলিক কিজো, আলেহান্দ্রো সানস, জন লেজেন্ড ও কেইথ আরবানের ভিডিও দেখানো হয়।
ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির প্রধান টমাস বাখ তার ভাষণে উদ্বোধনী দিনটিকে বর্ণনা করেন ‘আশার মুহূর্ত’ হিসেবে।
“আজ এটি আশার মুহূর্ত। হ্যাঁ, আমরা সবাই যেমনটা কল্পনা করেছিলাম, এ আয়োজন তার চেয়ে অনেকটাই আলাদা। কিন্তু আসুন, মুহূর্তটা আমরা উদযাপন করি; কেননা, শেষ পর্যন্ত আমরা একত্রিত হয়েছি। ২০৫টি জাতীয় অলিম্পিক কমিটি এবং ইন্টারন্যাশনাল রিফিউজি অলিম্পিক টিমের অ্যাথলেটরা অলিম্পিক ভিলেজে থাকবে এক ছাদের নিচে।
“এটা সব খেলাধুলার একত্রিত শক্তি। এটা সংহতির বার্তা দেয়, শান্তি ও সহনশীলতার বার্তা দেয়। এটা আমাদেরকে একসঙ্গে আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দেয়।”