পাঁচটি গোলই তার কাছে মূল্যবান। তবে তিন গোল হজমের পর ভারতকে ৪-৩ ব্যবধানে হারানো ম্যাচের গোল দুটি ‘স্পেশাল’। সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া জাফর ইকবালের আফসোসের জায়গা একটাই-যদি বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হত!
Published : 29 Sep 2017, 05:34 PM
নেপালের সঙ্গে পয়েন্ট সমান ৯। গোল পার্থক্য সমান। কিন্তু বাংলাদেশের শিরোপা স্বপ্ন গুঁড়িয়েছে নেপালের কাছে মুখোমুখি লড়াইয়ে হারের কারণে। ভুটান থেকে শুক্রবার সকালে দেশে ফিরে নিয়ে তরুণ ফরোয়ার্ড জাফর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন ব্যক্তিগত অর্জনের উচ্ছ্বাস, দলীয় অপ্রাপ্তির হতাশার কথা।
চার ম্যাচে ৫ গোল। সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পেলেন কিন্তু বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হতে পারল না। মিশ্র অনুভুতি নিশ্চয়?
জাফর ইকবাল: নিজের অর্জনে যতটুকু ভালো লাগছে…দল চ্যাম্পিয়ন না হওয়ায় ততটুকুই খারাপ লাগছে। আমি যে পাঁচটি গোল পেয়েছি, সেগুলোতে সতীর্থদের অবদান অনেক কিন্তু তারা তো আমার মতো কিছু পায়নি। চ্যাম্পিয়ন হলে তারাও পেত, আমি আরও বেশি পেতাম।
এই পাঁচ গোলের মধ্যে কোন ম্যাচের গোলকে এগিয়ে রাখবেন?
জাফর: সবগুলো গোলই আমার জন্য দারুণ। কিন্তু ভারতের বিপেক্ষ গোল দুটিকে অবশ্যই স্পেশাল বলব। মালদ্বীপ ও ভুটানের বিপক্ষে পাওয়া গোলগুলোর অন্যরকম আনন্দ আছে।
ভারতের বিপক্ষে গোল দুটি স্পেশাল কেন?
জাফর ভারতের সঙ্গে ম্যাচের কথা উঠলেই বন্ধুরা বলত, দ্যাখ ওরা কত এগিয়েছে। আর আমরা কোথায়? আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। তখন আমার মনে হত, যদি ওদের সঙ্গে কখনও খেলা হয়, নিজের সর্বোচ্চটা দিব। একশ নয় ১১০ ভাগ দিয়ে দলকে জেতাব। সেটা পেরেছি। তাও আবার এমন ম্যাচে, যখন আমরা তিন গোলে পিছিয়ে পড়েছিলাম।
জাফর: এর আগে জাতীয় দলের হয়ে মালদ্বীপের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে খেলেছি। ৫-০ গোলে হেরেছিলাম। এবার মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বাবার সঙ্গে আমার কথা হল। তিনিও মনে করিয়ে দিলেন ওই হারের কথা। বললেন-এই ম্যাচে তোমরা জিতো। বাবা যখন অনুপ্রেরণা দিলেন, আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিলেন উৎসাহ দিয়ে, আমিও সেভাবে খেললাম। গোল পেলাম। জিতলাম।
ভুটান ম্যাচের ক্ষেত্রেও একই কথা। বিশ্বকাপের বাছাইয়ে ওদের জাতীয় দলের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। যদিও ওই ম্যাচ আমি খেলিনি কিন্তু দেখেছিলাম দলের সবার মনের অবস্থা। আমারও ভীষণ খারাপ লেগেছিল। এ ম্যাচে তাই আমরা খুব করে জিততে চেয়েছিলাম।
মানে প্রতিশোধের তাড়না নিয়ে নেমেছিলেন মাঠে?
জাফর: ওভাবে বলব না। আমাদের প্রতিশোধ নেওয়ার তাড়না ছিল না। কিন্তু ওই খারাপ লাগা কাটিয়ে ওঠার ইচ্ছা ছিল। আমি যখন মাঠে নামি, তখন আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। ফরোয়ার্ড হিসেবে গোল পাওয়া উচিত এবং আপনারাও দেখেছেন আমি সবসময় তা পাওয়ার চেষ্টা করি।
নেপাল ম্যাচে আপনাদের কি হয়েছিল? ভারত, মালদ্বীপ ম্যাচের ছন্দটা এ ম্যাচে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
জাফর: আসলেই সবারই ভালো দিন, মন্দ দিন থাকে। আমি বলব ওই দিন আমাদের জন্য মন্দ দিন ছিল। কেননা, ওই ম্যাচে আমরা শুরুতেই গোল পেতে পারতাম। কিন্তু পোস্টে লেগে ফিরল। বলও ঠিকঠাক বের করে নিতে পারছিলাম না। এর ওপর আবার বিশ্বনাথ ঘোষের লালকার্ড পাওয়া। সব মিলিয়ে দিনটি আমাদের ছিল না।
নাকি বাড়তি চাপ নিয়ে ফেলেছিলেন আপনারা?
জাফর: চাপ নেইনি। জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম। কিন্তু লালকার্ডটা পাওয়ার পর পিছিয়ে পড়লাম। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত আমরা গোল খেয়েছি, সেটা শোধ করেছি। আসলে দুর্ভাগ্য আমাদের। আবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথাই ধরুন, আমরা এতকিছু করলাম কিন্তু নেপালের কাছে ওই হারের কারণে শিরোপা জিততে পারলাম না।
জাফর: কোচ যেটা বলেছেন, আমিও তার সঙ্গে একমত। মাঝে মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভুল করে ফেলি। তবে বিশ্বাস করি, যদি আরও বেশি বেশি ম্যাচ খেলতে পারি, তাহলে এ ভুলগুলো দ্রুত শুধরে নিতে পারব।
লিগে চট্টগ্রাম আবাহনীর সেরা একাদশে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না আপনাকে। সেরা একাদশে জায়গা পেতে কী ভুটানের ভালো করার বাড়তি তাগিদ ছিল?
জাফর: বিষয়গুলো আমি ওভাবে দেখিনি। যখন জাতীয় দলের হয়ে খেলি, তখন জাতীয় দল নিয়ে ভাবি। ক্লাবের হয়ে খেলার সময় ক্লাব। তবে যখনই খেলতে নামি, তখন গোল পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে নামি।
ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। শুনলাম আপনার বাবা-মা চাননি আপনি খেলোয়াড় হন। আপনাকে নাকি শেকল দিয়ে বেঁধেও রাখতেন তারা, যাতে আপনি খেলতে না বেরুতে পারেন?
জাফর: (হাসি), থাক, ওগুলো নিয়ে আর কথা বলতে চাইনা। ওই কথাগুলো মনে করলে বাবা-মা এখন কষ্ট পান। আমিও চাইনা, ওই স্মৃতিগুলো তাদের মনে ফিরে আসুক।
আসলে চার ভাইবোনের মধ্যে আমি বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। তারা চাইতেন পড়াশোনা করে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার টাইপের কিছু হই। আমি চেয়েছি ফুটবলার হতে। তখন প্রাইভেট পড়াতে স্যার এসে বসে থাকতেন, আমি পালিয়ে খেলতে চলে যেতাম। এইসব কারণে আমাকে বেঁধে রাখা হতো।