বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছেন না বাংলাদেশের নতুন কোচ

এক বছরের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর অ্যান্ড্রু অর্ড বড় স্বপ্ন দেখানোর পথে হাঁটেননি। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ইংলিশ বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান এই কোচ জানালেন, আপাতত এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইয়ের দিকে তার পুরো মনোযোগ। এরপর ধাপে ধাপে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ, সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে ভাবতে চান।

বুধবার অর্ডের সঙ্গে ১ বছরের চুক্তি করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। এই প্রথম কোনো জাতীয় দলের কোচ হলেন ৩৭ বছর বয়সী এই অস্ট্রেলিয়ান। ২০১০ সালে থাইল্যান্ডের দল বেক তেরো সাসানার কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা অর্ড ২০১২ সালে দায়িত্ব নেন থাইল্যান্ডেরই মুয়াং থং ইউনাইটেডের ‘বি’ দলের। ২০১৩ সালে থেকে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার দল পার্থ গ্লোরির সহকারী কোচ।

আগামী ডিসেম্বরে মাঠে গড়ানোর কথা বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ; প্রতিযোগিতাটির গত আসরের সেমি-ফাইনাল থেকে ছিটকে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে হবে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ; গত তিন আসরের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার লজ্জা এখন বাংলাদেশের সঙ্গী। ফিফার সর্বশেষ র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯২তম। বাফুফের কর্তারা আশাবাদী প্রথমবার জাতীয় দলের দায়িত্ব পাওয়া অর্ডের হাত ধরে সঠিক পথে ফিরবে বাংলাদেশের ফুটবল।

সংবাদ সম্মেলনে অর্ড অবশ্য সোজাসাপ্টা জানিয়েছেন তার কাছে কোনো জাদুর কাঠি নেই; তিনি জাদুকরও নন। সাফল্য পাওয়ার চিরায়ত যে কঠোর পরিশ্রমের পথ, সেটাই বলেছেন ঘুরেফিরে। অস্ট্রেলিয়ান এই কোচের বিশ্বাস, জাতীয় দলকে সেরাটা দেওয়ার মতো ২৩ জন খেলোয়াড় বাংলাদেশে আছে।

“বাংলাদেশ বড় একটি দেশ। এখানে ২৩ জন ভালো ফুটবলার থাকার কথা। আমি বিশ্বাস করি না, বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে তাদের ১৯৩তম (আসলে ১৯২তম) স্থানে থাকা উচিত। আমরা ২৩ জন ভালো ফুটবলারকে খুঁজে বের করতে যাচ্ছি। এজন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং ভালো মানের তরুণ খেলোয়াড় তৈরি করতে হবে।”

“গত রাতের ম্যাচটা (ফেডারেশন কাপের ফাইনাল) আমি দেখেছিলাম। কয়েকজন ভালো খেলোয়াড় দেখেছি। সেখান থেকে আমাদের সেরাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমরা উন্নতি করতে চাই। র‌্যাঙ্কিংয়ে উপরের দিকে উঠে আসতে চাই। লক্ষ্যপূরণ করতে হলে আমাদের ভালো খেলোয়াড় খুঁজে বের করতে হবে। তাদের নিয়ে কাজ করতে হবে; তাদের আত্মবিশ্বাস এবং নিজেদের ওপর আস্থা ফেরাতে হবে।”

এবারের প্রিমিয়ার লিগের ভেন্যু দুটি। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ও চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম। অর্ড জানালেন ঢাকার ম্যাচগুলো দেখতে পারাটা তার জন্য আগামী জুলাইয়ে এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইয়ের দল তৈরির জন্য কাজে লাগবে।

বাংলাদেশের খেলার কৌশল কেমন হবে, এমন প্রশ্নের জবাবেও কৌশলী অর্ড, “ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র বা ব্রাজিলে যেভাবে খেলা হয়, বাংলাদেশে ফুটবলের কৌশলটা তেমন নয়। তবে আমি মনে করি, আপনাকে নিজেকে নিজের পরিচয় দাঁড় করাতে হবে; নিজেদের মতো করে কৌশল তৈরি করতে হবে। এজন্য কঠোর পরিশ্রমটা জরুরি।”

২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইয়ে পার্থে ও ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা বাংলাদেশ দলকে দেখেছেন অর্ড। দুই লেগ মিলিয়ে ৯ গোল হজম করেছিল বাংলাদেশ। নতুন কোচ অতীত নিয়ে ভাবতে চাইছেন না। আপাতত ফিলিস্তিনে এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই নিয়ে ভাবতে চাইছেন।

“পার্থের ম্যাচটি আমি দেখেছিলাম। আমি মনে করি, অতীতটা আমরা পেছনে রাখব। সবাই জানে এটা (বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য) ভালো সময় নয়। আমাদের প্রয়োজন ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করা। বাংলাদেশ অতীতে ভালো ছিল, সাম্প্রতিক অতীতে ভালো অবস্থায় নেই; এখন আমাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে। সেরা ২৩ জন খেলোয়াড় খুঁজতে হবে নতুন করে দল সাজানোর জন্য।”

“এই ১২ মাসে অনেক কিছু হতে পারে। ১২ মাস পর কি হবে সেটা নিয়ে আমি ভাবতে চাই না। আমার প্রথম চিন্তা আগামী মাসে শুরু হতে যাওয়া এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই নিয়ে। সেদিকেই পুরো মনোযোগ দিব। এরপর আমাদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের জন্য তৈরি হতে হবে। ছয় মাসের মধ্যে নিঃসন্দেহে সব তৈরিও হয়ে যাবে।”