লন্ডনের পর রিও দে জেনেইরো; এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অলিম্পিকের অংশ হতে যাচ্ছেন মাহফিজুর রহমান সাগর। উচ্ছ্বাস আছে; আছে কিছু চাওয়া। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় ২৩ বছর বয়সী এই সাঁতারু অবশ্য জানালেন, কাঁধের চোট আর অলিম্পিকের চাওয়া পূরণ নিয়ে উভয় সংকটে থাকার কথা।
Published : 17 Jul 2016, 05:30 PM
প্রশ্ন: দ্বিতীয়বারের মতো অলিম্পিকে যাচ্ছেন। লম্বা সময় ধরে থাইল্যান্ডে ছিলেন। সেখানকার অভিজ্ঞতা কেমন হলো?
মাহফিজুর রহমান সাগর: এক কথায় চমৎকার। বিস্তারিত বললে এক বছরের ট্রেনিং, এর আগে দেশের বাইরে এভাবে বাংলাদেশের কেউ ট্রেনিং করেনি। সে ক্ষেত্রে এটা বড় একটা পাওয়া ছিল আমার জন্য। আর অনুশীলন নিয়ে সবার এবং আমার যে প্রত্যাশা ছিল, আমি মনে করি সেটা শতভাগ পূরণ হয়েছে। টাইমিংয়ের উন্নতি, সুইমিংয়ের জ্ঞান যাই বলুন না কেন, সেগুলো হয়েছে। আগেও সুইমিং করতাম অনেক বিষয় না জেনে, করার দরকার করতাম। এখন নিজের কি দরকার সেটা জানি। আমার এই জানাটুকু পরবর্তী প্রজন্মের সাঁতারুদেরও কাজে লাগতে পারে।
প্রশ্ন: যে বিষয়গুলো জানতেন না, মানসিকতার পরিবর্তনের কথাও বলছিলেন; একটু বিস্তারিত...
আর এ ধরণের অনুশীলনে সব দিক থেকে উন্নতি হয়। যারা আন্তর্জাতিক মানের সাঁতারু, তারা কিন্তু এক দিকে নয়, সব দিকে এগিয়ে বলেই তারা চ্যাম্পিয়ন। আমরা সব দিকে পিছিয়ে থাকি বলে কিছু করতে পারি না।
প্রশ্ন: কোয়ালিফাইয়ের জন্য পড়িমরি চেষ্টাই নাকি আপনার কাঁধের চোটের কারণ...
মাহফিজুর রহমান সাগর: হ্যাঁ। গত এপ্রিলে থাই ওপেনে খেলতে গিয়েছিলাম। ওখানে সোনা জিতেছিলাম। কোয়ালিফাইয়ের টাইমিংয়ের খুব কাছাকাছি ছিলাম। ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে কোয়ালিফাই টাইম ছিল ১ মিনিট ৫১.৭১ সেকেন্ড; আমি করেছিলাম ১ মিনিট ৫৪.০৫ সেকেন্ড। এই ইভেন্টে সাফ গেমসে ১ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড টাইমিং করেছিলাম। ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় এ ইভেন্টে আমার সেরা টাইমিং ছিল ১ মিনিট ৫৯.১৩ সেকেন্ড। তাই প্রত্যাশা ছিল কোয়ালিফাই করার। আসলে আমাদের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। এর বাইরে গেলে কোথাও না কোথাও একটা সমস্যা হয়ে যায়।
প্রশ্ন: সমস্যা থেকে উত্তরণের পথটা তাহলে কি?
এর আগে সাফ গেমস ছিল, রাশিয়াতে খেলেছি। এভাবে খেলার মধ্যে থাকলে আমাদের আর ওয়াইল্ড কার্ডের জন্য বসে থাকতে হবে না। আমরাও সরাসরি খেলতে পারব, হয়ত একদিন পদকও পাব।
প্রশ্ন: নিজের দ্বিতীয় অলিম্পিক হলেও ব্রাজিলে যাচ্ছেন প্রথম। এই প্রথমের অনুভুতি কেমন?
মাহফিজুর রহমান সাগর: সব মিলিয়ে বলব মিশ্র অনুভূতি। অলিম্পিয়ান হওয়ার আশা ছিল; লন্ডনের আসরে সেটা পূরণ হয়েছে। এবার খারাপ লাগার বিষয়, এবারও ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে যাচ্ছি। বারবার কেন আমরা ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে যাব?
প্রশ্ন: অনুভূতির মতো প্রস্তুতির ব্যবধানও আছে কি?
মাহফিজুর রহমান সাগর: গতবার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছিল না। এবার সে তুলনায় অনেক ভালো।
প্রশ্ন: রিওর আসর সামনে রেখে কোনো স্পেশাল ট্রেনিং করছেন কি?
প্রশ্ন: চোটের প্রসঙ্গে ফিরি। চোট নিয়ে রিওতে ভালো কিছু করার আশাটা কতটা যুক্তিসঙ্গত?
মাহফিজুর রহমান সাগর: এ মুহূর্তে যদি বিশ্রাম নেই, তাহলে টাইমিং খারাপ হবে। আবার যদি আটঘাট বেঁধে অনুশীলন করি, তাহলে চোট বাড়তেও পারে। বলতে পারেন, এটা নিয়ে আমি উভয় সংকটে আছি।
প্রশ্ন: তাহলে কি লক্ষ্য থেকে সরে এসে অংশ নেওয়াই মূল কথা-চিরায়ত এ পথে থাকছেন?
মাহফিজুর রহমান সাগর: না; চোট থাক আর না থাক, শরীরের যাই হোক না কেন, নিজের সেরাটা দেব। সেরা টাইমিং করব। জাতীয় পর্যায়ে ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলে ২৪.০২ সেরা টাইমিং। এটাকে ছাপিয়ে যেতে চাই।
প্রশ্ন: শরীরের দিকে না তাকিয়ে থাইল্যান্ডে ওমন প্রচেষ্টার কারণ কি ছিল?
মাহফিজুর রহমান সাগর: সেখানকার কোচকে বলেছিলাম, যদি কোয়ালিফাই করতে পারি, তাহলে আমি দেশের প্রথম অ্যাথলেট হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে অংশ নিতে পারব। এজন্য ব্যক্তিগতভাবে হংকং ওপেন, থাই ওপেন, ওখানকার কয়েকটা মিটে অংশ নিয়েছিলাম। আমার মনে হলো এই বয়স আর পাব না। পরের অলিম্পিক পাব কিনা জানি না, আমি তাই জানবাজি রেখে পুলে নেমেছিলাম। কিন্তু স্বপ্নের খুব কাছাকাছি গিয়েও ধরতে পারিনি। সে জন্য আক্ষেপ হচ্ছে।
প্রশ্ন: থাইল্যান্ড-বাংলাদেশে অনুশীলনের সরঞ্জাম, সুবিধার ব্যবধান কতখানি।
প্রশ্ন: একটু পেছনে ফিরি। এসএ গেমসে ৭টা ব্রোঞ্জ পাওয়াটা কি এখনও পোড়ায়?
মাহফিজুর রহমান সাগর: হ্যাঁ। ভাবিনি এতগুলো ব্রোঞ্জ পাব। আসলে ভাগ্যে ছিল না। এগুলো থেকে একটা রুপা বা সোনা হতে পারত।
প্রশ্ন: ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন সবই আছে। এরই মধ্যে সবচেয়ে খারাপ লাগাটা বলুন।
মাহফিজুর রহমান সাগর: আসলে দেশের জন্য এখনও বাইরে জাতীয় সঙ্গীত বাজাতে পারিনি, এ কারণেই বেশি মন খারাপ লাগে। এসএ গেমসের কথাই ধরুন, যদি সাতটা ব্রোঞ্জের বদলে একটা সোনা আসত!