লিভারপুলের হলোটা কী?

কোনোভাবেই যেন চলতি প্রিমিয়ার লিগে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না ইয়ুর্গেন ক্লপের দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2023, 11:01 AM
Updated : 5 Feb 2023, 11:01 AM

ইয়ুর্গেন ক্লপের ছোঁয়ায় লিভারপুলের বদলে যাওয়ার সুখস্মৃতি এখনও তরতাজা। এইতো, গেল মৌসুমেই দলটি জেতে জোড়া শিরোপা, লড়াইয়ে ছিল আরও দুটির। কিন্তু মৌসুম ঘুরতেই, ক্লপের ছায়াতেই সেই চেনা পথ হারিয়ে ফেলেছে তারা। বিশেষ করে ধুঁকছে প্রিমিয়ার লিগে! কোনো কিছুই যেন মিলছে না! সবশেষ ‘পুঁচকে’ উলভারহ্যাম্পটনের মাঠে ভরাডুবির পর এই জার্মান কোচের মুণ্ডুপাত চলছে। আদৌতে লিভারপুলের সমস্যাটা কী?

আসলে লিভারপুলের কোনো কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছে না। মাঝমাঠের সুর বেঁধে দিতে পারছেন না কেউ। আক্রমণভাগে মোহামেদ সালাহ হয়ে আছেন ছায়া হয়ে। দারউইন নুনেসও নন ধারালো। বাকিদের অবস্থাও তথৈবচ। রক্ষণের আগল খুলে যাচ্ছে বারবার। সব মিলিয়ে এবারের লিগে যা-তা অবস্থা ‘অলরেড’ খ্যাত দলটির।

উলভারহ্যাম্পটনের মাঠে লিভারপুলের সামনে যেমন ছিল পাওয়ার হাতছানি, তেমনি ছিল হারানোর চোখ রাঙানি। সত্যি হয়েছে চোখ রাঙানির অংশটুকু। উলভসদের লিগে টানা ১২ ম্যাচ হারানোর তৃপ্তি সঙ্গী হয়নি ক্লপের দলের। বরং তার নাম উঠেছে কেনি ডালগ্লিসের পাশে। সবশেষ ২০১২ সালে ডালগ্লিসের অধীনে লিভারপুল লিগে টানা তিন অ্যাওয়ে ম্যাচ হেরেছিল!

এই তিন ম্যাচে ‘৩’ সংখ্যাটিও যেন লিভারপুলের গোল হজমের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। যার শুরুটা ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষের ম্যাচ দিয়ে। ওই ম্যাচে লিভারপুলের হারের স্কোরলাইন ছিল ৩-১; এরপর ব্রাইনটনের মাঠে ৩-০ গোলের ভরাডুবি। মাঝে নিজেদের মাঠ অ্যানফিল্ডে চেলসির সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ে কিছুটা স্বস্তি মিলেছিল, কিন্তু ফের উল্টো রথে তারা। শনিবার উলভারহ্যাম্পটনের আঙিনায় হারে ৩-০ ব্যবধানে।

সবশেষ ম্যাচে লিভারপুল আসলে ছিটকে যায় রক্ষণভাগের সীমাহীন ব্যর্থতায় শুরুর ১২ মিনিটের মধ্যে। পঞ্চম মিনিটে জোয়েল মাতিপের আত্মঘাতী হয়ে ওঠা এবং দ্বাদশ মিনিটে ক্রেইগ ডসনের গোলেই মূলত লেখা হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য। দ্বিতীয়ার্ধে রুবেন নেভেসের গোলটি বলা যায় ব্যবধান বাড়ায় কেবল।

কেননা, ম্যাচ জুড়ে সালাহ-নুনেসরা মাথা কুটেছেন প্রতিপক্ষের বক্সের আশপাশে। দুঃস্বপ্নের ওই ১২ মিনিট নিয়ে ম্যাচ শেষে ক্লপও অকপটে বলেছেন, এমনটা হতে পারে না।

“প্রথম ১২ মিনিটে আমরা দুর্দশায় পতিত হলাম। এমনটা হতে পারে না। এমন ম্যাচে এগুলো হতে পারে না। আমাদের সমালোচনা করতে পারেন, কাঠগড়ায় তুলতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে আপনারা সম্ভবত সঠিকও, কেননা, ওই ১২ মিনিট মেনে নেওয়া যায় না।”

শুধু কী ওই ১২ মিনিট? চলতি মৌসুমে তো লিভারপুলের অবস্থা-সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দিব কোথা। মাঝমাঠের অবস্থা একেবারে যাচ্ছেতাই, কিন্তু এই দিকে দৃষ্টিপাত করেনি কর্তৃপক্ষ; গত দুই দলবদলের বাজারে দলটি মাঝমাঠ শক্তিশালী করার কোনো চেষ্টাই করেনি। রক্ষণ ও আক্রমণ যদিও কিছুটা ভালো, কিন্তু সেটাও গড়পড়তা মানের নিচে।

সবশেষ তিন লিগ ম্যাচে ৯ গোল হজম করেছে লিভারপুল। চলতি লিগে ২০ ম্যাচে খেয়েছে ২৮টি। অথচ গত মৌসুমে ৩৮ ম্যাচে এর চেয়ে ২ গোল কম হজম করেছিল তারা! গেলবার ম্যানচেস্টার সিটির ঘাড়ে শ্বাস ফেলতে ফেলতে শেষ পর্যন্ত ১ পয়েন্টের ব্যবধানে লিগে রানার্সআপ হয়েছিল ক্লপের দল। রানার্সআপ হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও।

লিগে গত বছরটা লিভারপুল শেষ করেছিল টানা চার জয় নিয়ে। মানে, ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য তাদের আছে। তবে সেজন্য তো তাদের আক্রমণভাগকে গোল করতে হবে। লিগে শেষ ৩৬০ মিনিটে মাত্র একবারই প্রতিপক্ষের জালের নাগাল পেয়েছে তারা।

কোচ বলেই এই ঘোরতর দুঃসময়ে আস্থা হারাচ্ছেন না ক্লপ। গত মৌসুমের মতো লড়াকু চেহারায় দল ফিরবে বলে বিশ্বাস এই জার্মান কোচের।

“ছেলেদের উপর বিশ্বাস হারাচ্ছি না আমি, কিন্তু আমাদের উন্নতি করতে হবে এবং সেজন্য আমরা কাজ করছি।”

বলার অপেক্ষা রাখে না, ক্লপের ‘কাজ’ নিয়ে সমালোচনার ঢেউ প্রবলভাবে বইছে চারদিকে। শনিবার ম্যাচের পরে লিভারপুল কোচকে নিয়ে উলভারহ্যাম্পটন সমর্থকরা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছেন। বলেছেন, “সকালেই তুমি ছাঁটাই হবে।”

অ্যানফিল্ডে কাটানো আট বছরে এমন ঝাঁঝালো তিরস্কার এই প্রথম শুনলেন ক্লপ। এভারটন ও স্কটল্যান্ডের সাবেক ফরোয়ার্ড জেমস ম্যাকফাডেন বিবিসি রেডিও ফাইভের লাইভে সমর্থকদের ক্লপের মুন্ডুপাতের দাবিকে ‘হাস্যকর’ বলেছেন। মনে করিয়ে দিয়েছেন, গত কয়েকটি মৌসুমে ক্লপের এনে দেওয়ার সাফল্যের কথা। লিভারপুল কোচকে ‘ব্রিলিয়ান্ট’ও বলেছেন তিনি।

লিগে পরের ম্যাচে ১৩ ফেব্রুয়ারি এভারটনের মুখোমুখি হবে লিভারপুল। ক্লপও মুখিয়ে আছেন মাথা তুলে দাঁড়াতে। নিজের সামর্থ্য, বিশ্বাস বুঝিয়ে দিয়েছেন ছোট্ট কথা, “হ্যাঁ, অবশ্যই”।