স্প্যানিশ ফুটবল
কোপা দেল রের ফাইনালের শেষ দিকে রেফারির দিকে বস্তু ছুড়ে মেরেছিলেন রেয়াল মাদ্রিদের এই ডিফেন্ডার।
Published : 27 Apr 2025, 06:07 PM
কোপা দেল রের ফাইনাল নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল আগের দিন থেকেই। উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচের শেষটাও ছিল যথেষ্ট আগুনে। আর যার মূলে ছিলেন আক্রমণাত্মক আচরণ দেখানো আন্টোনিও রুডিগার। নিজের ভুল বুঝতে পেরে সবার কাছে ক্ষমা চাইলেন রেয়াল মাদ্রিদের এই ডিফেন্ডার।
সেভিয়ার বার্সেলোনার বিপক্ষে ৩-২ গোলে হেরে যাওয়া ফাইনালের শেষ দিকে ঘটে এই কাণ্ড। এমবাপের বিরুদ্ধে একটি ফাউল ধরায় রেফারি রিকার্দো দে বুর্গোস বেনগোচেয়ার ওপর ক্ষুব্ধ হন রুডিগার ও তার সতীর্থরা। বেঞ্চ থেকে তেড়ে গিয়ে স্প্যানিশ রেফারির দিকে একটি বস্তু ছুড়ে মারেন রুডিগার। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সেটি ছিল বরফের টুকরো।
অমন আচরণের জন্য রুডিগারকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। তারপরও রাগে ফুঁসছিলেন এই জার্মান ডিফেন্ডার। তাকে মাঠের ভেতরে ঢুকে যাওয়া থেকে আটকাতে অনেক বেগে পেতে হয় রেয়াল মাদ্রিদের স্টাফদের।
শেষের বাঁশি বাজতেই অপ্রীতিকর আচরণ করেন লুকাস ভাসকেস ও জুড বেলিংহ্যাম। এই জনকেও লাল কার্ড দেখান স্প্যানিশ রেফারি দে বুর্গোস।
রেফারি তার রিপোর্টে রুডিগারের আচরণ নিয়ে ‘টেকনিক্যাল এরিয়া থেকে বস্তু ছুড়ে মারা ও আক্রমণাত্মক আচরণ দেখানোর’ কথা লেখেন।
রেফারির সঙ্গে এমন আচরণ করা ঠিক হয়নি, বুঝতে পারছেন রুডিগার। তাই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ৩২ বছর বয়সী জার্মান ফুটবলার।
“আমার কাল রাতের আচরণের জন্য অবশ্যই কোনো অজুহাত দেওয়া যায় না। আমি এর জন্য খুবই দুঃখিত। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আমরা খুব ভালো খেলেছি। ১১১ মিনিট পর আমি দলকে আর সাহায্য করতে পারিনি এবং শেষ বাঁশি বাজার আগে আমি একটি ভুল করি। আবারও রেফারির কাছে এবং গত রাতে আমি যাদের হতাশ করেছি তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।”
এই ঘটনায় বড় শাস্তি হতে পারে রুডিগারের। স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) আচরণবিধি অনুযায়ী, ১০১ ধারায় শাস্তি পেলে চার থেকে ১২ ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে পারেন তিনি। এই ধারায় রেফারিদের প্রতি ‘হালকা সহিংসতার’ কথা বলা হয়েছে।
সেক্ষেত্রে স্পেনের ঘরোয়া ফুটবলের বাকি মৌসুমে হয়তো তাকে আর পাবে না রেয়াল মাদ্রিদ। লা লিগায় এখনও বাকি পাঁচ রাউন্ড।
আর যদি তার আচরণ আরও গুরুতর বলে বিবেচিত হয় এবং ১০৪ ধারায় শাস্তি দেওয়া হয়, তাহলে তিন থেকে ছয় মাস নিষিদ্ধ হতে পারেন রুডিগার। রেফারিকে ‘শারীরিক আক্রমণের’ কথা বলা হয়েছে এই ধারায়।
ফাইনাল নিয়ে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয় আগের দিন রেফারি দে বুর্গোস ও ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি গনসালেস ফুয়ের্তেসের মন্তব্য ঘিরে। সংবাদ সম্মেলন করে ম্যাচের আগের দিন চোখে জল নিয়ে, রেয়াল মাদ্রিদ টিভির সমালোচনার বিরূপ প্রভাব পরিবারের ওপর পড়ার কথা বলেন দে বুর্গোস। সংবাদ সম্মেলনে দে বুর্গোসের পাশে বসে হুঁশিয়ারি দিয়ে ফুয়ের্তেস বলেন, আরএমটিভির বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেবেন তারা।
এভাবে সংবাদ সম্মেলন করে একটি ক্লাবের বিরুদ্ধে রেফারিদের মন্তব্যকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় রেয়াল। এই রেফারিদের ম্যাচ পরিচালনা থেকে সরিয়ে দেওয়ার অনুরোধও করে তারা। কিন্তু তাদের অনুরোধ সরাসরি খারিজ করে দেয় স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন-আরএফইএফ।
অনুরোধে সাড়া না মেলায় দিনের সব আনুষ্ঠানিকতা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় রেয়াল। ম্যাচের আগের দিনের অনুশীলন ও সংবাদ সম্মেলন বর্জন করে তারা। বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিকের সঙ্গে কার্লো আনচেলত্তির ফটো সেশন বাতিল করে ক্লাবটি।
কোপা দেল রের ফাইনালে হারের পর ট্রফি শূন্য মৌসুম পার করার শঙ্কা আরও জেঁকে ধরেছে রেয়াল মাদ্রিদকে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে ছিটকে পড়ে দলটির এখনও লা লিগার শিরোপা জয়ের সুযোগ আছে।
৩৩ ম্যাচে ৭৬ পয়েন্ট নিয়ে স্পেনের শীর্ষ লিগের চূড়ায় আছে বার্সেলোনা। সমান ম্যাচ খেলে চার পয়েন্ট কম নিয়ে দুই নম্বরে রেয়াল। আগামী ১১ মে এই দুই দলের লড়াই শিরোপা লড়াইয়ে রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।