বেলজিয়ামের তিক্ত স্মৃতি নিয়ে প্রস্তুতিতে মগ্ন তিতে

ক্রোয়াট ম্যাচ সামনে রেখে মাঠে ঢুকেই প্রস্তুতির তোড়জোড় শুরু করলেন ব্রাজিল কোচ।

কিছুটা ঝুঁকে, কোমর অবদি ঝুলে থাকা বাঁ হাতে একটা ডায়েরি নিয়ে আল আরাবি স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ঢুকলেন তিতে। ঠিক যেন প্রফেসরেরা যেভাবে ক্লাসে প্রবেশ করেন, তেমন করে প্রস্তুতি মাঠে আগমন ব্রাজিল কোচের। ৬১ বছর বয়সী এই কোচকেও তো ডাকা হয় ‘প্রফেসর’ বলেই!

জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে প্রস্তুতি মাঠের চারধার দেখে নিলেন সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। এরপর দ্রুতই সবুজ সংকেত দিলেন সহকারীদের। নেইমার-রিশার্লিসনদের ট্রেনিংয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল।

আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে কাতার বিশ্বকাপের প্রথম কোয়ার্টার-ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত ৯টায় শুরু হতে যাওয়া ম্যাচটি সামনে রেখে প্রস্তুতিতে অমন সিরিয়াস তিতে।

বরাবরই তিনি রাশভারি টাইপের মানুষ, গুরুগম্ভীর। প্রস্তুতিতেও আসেন সবার আগে। এদিন তিতে আরও গুরুগম্ভীর। ক্রোয়েশিয়া বধের ছক রীতিমতো নোট বইয়ে ঠুকে নিয়ে উপস্থিত ট্রেনিং গ্রাউন্ডে। আগের ক’দিনে ৬১ বছর বয়সী এই কোচকে প্রস্তুতিতে এভাবে দেখা যায়নি। খালি হাতে এসেছেন, এদিক-ওদিক পায়চারি করে সহকারীদের নির্দেশনা দিয়ে এক কোণায় দাঁড়িয়ে থেকেছেন। দূর থেকে পাখির চোখ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন নেইমারদের প্রস্তুতি। এদিন যেন একহাতে সব তদারকি করতে হাঁকডাক ছেড়ে নেমে পড়লেন নিজেই।

যদিও প্রস্তুতির শুরুর দিকে নেইমার-রিশার্লিসনদের প্রাণোচ্ছল দেখা গেল। খুনসুঁটিতেও মেতে উঠলেন আলভেস-পাকেতাদের কেউ কেউ। রিশার্লিসন মজা করে এক সতীর্থের গলাও টিপে ধরলেন বলে মনে হলো দূর থেকে! শেষ ষোলোয় দক্ষিণ কোরিয়াকে অনিন্দ্যসুন্দর ফুটবল খেলে উড়িয়ে দেওয়ার রেশে যেন আচ্ছন্ন থাকল শুরুর পর্ব।

কোরিয়া বাঁধা পেরুনোর পরের দিন খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিয়েছিলেন তিতে। ওই ম্যাচে বেঞ্চে থাকারা ঘাম ঝরান, বাকিরা পরিবার-পরিজন, বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটান। পরের দিন বুধবার রুদ্ধদ্বার অনুশীলন করিয়েছেন। ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের আগের দিন পুরোদমে প্রস্তুতি সারল ব্রাজিল। শুরুর ওই মুহূর্তগুলো বাদে বাকি সময়ে ২০১৪ সালের পর আবারও বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে ওঠার তাড়নাটাও ফুটে উঠল প্রস্তুতিতে।

বিকাল সাড়ে চারটায় প্রস্তুতি শুরুর কথা, আলভেস-মার্কিনিয়োসরা এলেন যথাসময়ে। প্রায়ই একটু দেরিতে মাঠে আসা নেইমাররা এদিন দেরি করেন না অতটা। কোরিয়া ম্যাচ দিয়ে কাতার বিশ্বকাপে গোলের খাতা খোলা পিএসজির এই ফরোয়ার্ড প্রস্তুতিতেও পায়ের কারিকুরি দেখান। তিন গোল করা রিশার্লিসন গোলের ধারায় থাকতে শুটিং অনুশীলন করেন নিবিড় মনোযোগ নিয়ে।

মাঠ ছোট করে এনে দুই দলে ভাগ হয়ে খেলা ম্যাচে ঝলক দেখান চিয়াগো সিলভা। ডান দিক থেকে উড়ে আসা ক্রসে আন্তোনিও পা ছোঁয়ানোর আগে দারুণ স্লাইডে ক্লিয়ার করেন সিলভা। ৩৮ বছর বয়সী অভিজ্ঞ এই ডিফেন্ডার যেন ইঙ্গিত দিয়ে রাখেন, ক্রোয়াট ম্যাচেও দলের রক্ষণের মহাভার তার কাঁধে দিয়ে নিশ্চিত থাকতে পারে ব্রাজিল। সিলভার ওই স্লাইড দেখে সতীর্থরাও করতালি দিয়ে মুখরিত করে তোলেন চারধার।

পোস্টের নিচে আলিসন-ওয়েভেরতনদেরও দেখা যায় ব্যস্ত সময় পার করতে। গ্রুপ পর্ব ও শেষ ষোলো মিলিয়ে এ পর্যন্ত মাত্র ২টি গোল হজম করেছে ব্রাজিল। ক্যামেরুনের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে একবার আর কোরিয়া ম্যাচে চার গোল দেওয়ার পর। পেরিসিচ-ক্রামারিচদের সঙ্গে লুকা মদ্রিচের দূরপাল্লার শটের পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার আগে তাই আলিসনরা নিজেদের ঝালিয়ে নেন নিবিড়ভাবে।

ক্রোয়েশিয়ার কাছে কখনও হারেনি ব্রাজিল। বিশ্বকাপেও আগের দুই দেখায় রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের জয় যথাক্রমে ১-০ (২০১০ বিশ্বকাপ) ও ৩-১ (২০১৪ বিশ্বকাপ)। আট বছর আগে নিজেদের মাঠে ক্রোয়াটদের হারিয়ে গ্রুপ পর্বে শুভসূচনা করেছিল সেলেসাওরা। ওই ম্যাচে নেইমার পেয়েছিলেন জোড়া গোল। যদিও ক্রোয়েশিয়া দ্বাদশ মিনিটে এগিয়ে গিয়েছিল মার্সেলোর আত্মঘাতী গোলে।

২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপ ভালো কাটেনি তিতের ব্রাজিলের। গ্রুপ পর্বের দাপটের রাশ টেনে নেওয়া হয়নি কোয়ার্টার-ফাইনালে। বেলজিয়ামের কাছে হেরে হেক্সার স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষা দীর্ঘ হয় আরও। এবার সেরা আটের প্রতিপক্ষ গত আসরের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া। অতীত হোঁচট মনে রেখে তিতে তাই প্রস্তুতিতে অমন মনোযোগী।