ছেলেদের মতো মেয়েদের ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপ কিংবা অন্য আরও টুর্নামেন্ট আয়োজন করা উচিত বলে মনে করেন এই তারকা ফরোয়ার্ড।
Published : 28 May 2024, 08:33 PM
সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার ‘কোনো তাড়নাই ছিল না’ সাবিনা খাতুনের! তাইতো শুরুর দিকে নিজে সুযোগ পেয়েও শট না নিয়ে সতীর্থদের দিয়ে গোল করাতে মনোযোগী হলেন তিনি। কিন্তু কম যান না সাবিনার সতীর্থরা। তারাও যেন উঠে পড়ে লাগলেন সাবিনাকে দিয়ে গোল করাতে এবং শেষ পর্যন্ত ১৭ গোল নিয়ে সদ্য শেষ হওয়া উইমেন’স প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেন এই তারকা ফরোয়ার্ড।
২০১১-১২ মৌসুমে সাবিনা সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন ২৫ গোল করে। ২০১৯-২০ মৌসুমে হন ৩৫টি গোল নিয়ে। এ নিয়ে তৃতীয়বার সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হওয়া ৩০ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডের লিগ গোল হলো ১৫১টি।
কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার নাসরিন একাডেমির হয়ে শিরোপা জয় এবং নিজে আবারও সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পর উচ্ছ্বসিত সাবিনা নিজের অনুভূতি প্রকাশের পাশাপাশি কথা বললেন অনেক বিষয়ে। নারী ফুটবলের উন্নয়নে নতুন আরও উদ্যোগের প্রয়োজন দেখছেন তিনি।
আপনার দল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। কেমন হলো লিগের খেলা?
সাবিনা: আমার মনে হয়, গত তিন আসরের চেয়ে এবারের লিগটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আসাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও বেড়েছে। যদি ভালো ভালো দল আসে, তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে। এটা আমি প্রতিবারই বলে আসছি। এবার ৯টা টিমের খেলা যদি দেখেন, আমার তো মনে হয়, বেশ ভালো একটা লিগ হয়েছে।
আমার কাছে মনে হয়েছে জামালপুর কাচারিপাড়া একাদশ বাদে বাকি টিমগুলো বেশ ভালো ছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সঙ্গে আমাদের ফল ৩-১, আতাউরের সাথে ২-২, সদ্যপুস্কুরিনীর সাথেও ভালো ম্যাচ হয়েছিল, উত্তরা এফসির বিপক্ষে আমরা অনেক পরে গোল পেয়েছি। তবে কিছু ম্যাচে বেশি গোল হওয়ার কারণ আমার মনে হয়, অনেক ক্ষেত্রে কোনো দল আগে গোল খেয়ে বসলে তারা মোরালি ডাউন হয়ে যায়। কিন্তু এটা ভুলে তারা যদি স্বাভাবিক খেলাটা খেলে, তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ে।
সাগরিকার চেয়ে ৩ গোল পিছিয়ে থেকে ম্যাচে নেমেছিলেন। কিন্তু গোলের তাড়া দেখা গেল না। নিজে শট না নিয়ে সতীর্থদের পাস দিতে দেখা গেল…
সাবিনা: আমার আসলে নিজের খেলার সাথে এটাও মাথায় ছিল আমাদের দলে অনেক খেলোয়াড় আছে, তাদেরকেও খেলানো। নতুন কিছু প্লেয়ার ছিল, যাদের ওভাবে সুযোগ দেওয়া হয়নি। ভেবেছিলাম, গতবারের মতো হবে, বিরতির পর আমরা বদলি নামিয়ে তাদের সুযোগ করে দিতে পারব খেলার জন্য। কিন্তু সেটা হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি হওয়ার কারণে সেটা হয়নি। আমি সবসময় চেষ্টা করি নিজের সেরাটা দেওয়ার, কিন্তু সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পরিকল্পনা ছিল না, কিন্তু যখন মনে হয়েছে আরেকটু এফোর্ট দিলে এটা হতে পারি, তখন চেষ্টা করেছি।
তাই বলে গোলে শট নেওয়ার সহজ সুযোগ থাকতেও শট নিবেন না?
সাবিনা: এটাই আমার অভ্যাস (হাসি)। টিম কম্বিনেশন বলতে পারেন, গিভ অ্যান্ট টেক। যখন আপনি কাউকে দিবেন, সেও আপনাকে কিছু ফিরিয়ে দিতে চাইবে। পরে ওরাও দিয়েছে। এটা (সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া) আসলে আমার চেয়ে বেশি মাথায় ছিল আমার সতীর্থদের। তারা আমাকে পুশ করেছে। আমি বলেছি, আগে ম্যাচের ফল বের করা লক্ষ্য, কিন্তু ওদের কথা হচ্ছে যেকোনো ভাবে আমাকে সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে হবে। তো পুরো কৃতিত্বই আমার সতীর্থদের।
এর আগেও দুইবার লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন (২০১১-১২ তে ২৫টি, ২০১৯-২০ মৌসুমে ৩৫টি)। এবার ১৭ গোল…
সাবিনা: তখন ডাবল লিগ ছিল, ম্যাচ বেশি ছিল। গতবার ১ গোলে পিছিয়ে ছিলাম। আসলে ফুটবলে ১৪-১৫ বছর হয়ে গেছে, জুনিয়ররা যখন লক্ষ্য নিয়ে নামবে, আমার মনে হয়, ওদেরকে এই বিষয়টা বেশি অনুপ্রাণিত করবে যে, আপুকে অতিক্রম করতে হবে। তো এই জিনিসটা ওদের মাথায় বেশি থাকবে, তখন ওরা নিজেদের আরও উন্নতি করার জন্য চেষ্টা করবে। তো তাদের পারফরম্যান্সের উন্নতির জন্য মাঝে মাঝে আমাকে এক্সট্রা এফোর্ট দিতে হয়।
প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা কেন সাবিনাকে আটকাতে পারে না। আপনি নিজে কী মনে করেন?
সাবিনা: আমার মনে হয়, এটা অভিজ্ঞতার একটা ব্যাপার। মাঝে মাঝে সতীর্থরা আমাকে বলে, আক্রমণভাগে আপনি মাঝে মাঝে কিছু বল ছাড়েন, যেটা আমরা বুঝে উঠতে পারি না। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা একটা ব্যাপার। (৪৩তম মিনিটের) ওই পাসটাও আমি বাড়াতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বল পা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল কিছুটা। যার কারণে আমিই শট নিয়েছি (হাসি)।
নতুনদের মধ্যে কার/কাদের খেলা আপনার নজর কেড়েছে?
সাবিনা: এবার সদ্যপুস্কুরিনীর ১০ নম্বর (কাকলি সরেন), সিরাজ স্মৃতি সংসদের আলফি…ওদের ভবিষ্যৎ অনেক ভালো। ওরা বয়সভিত্তিকে খেলছে। আসলে সবকিছু নির্ভর করে, যেকোনো পরিস্থিতিতে ধারাবাহিকতা ধরে রাখার ওপর। আমি যখন শুরু করেছিলাম, আমি কোনো বেনিফিট পায়নি, কিন্তু আমি চালিয়ে গেছি।
আর্থিক স্বচ্ছ্বলতা নিয়ে কথা ওঠে…
সাবিনা: আর্থিকভাবে আমরা এখনও অতটা স্বচ্ছল না। এই জায়গাটা বাড়াতে হবে এবং বাড়ানো উচিত। লিগ থেকে ….ছেলেদের যেমন লিগ, ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপ হয়…আমাদের জন্য টুর্নামেন্ট বাড়াতে হবে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক ম্যাচের বিকল্প নেই। খেলোয়াড়দের মান বাড়াতে হলে আন্তর্জাতিক ম্যাচ বাধ্যতামূলক।
ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হওয়ার কথা ছিল। ওটা হলে ভালো হতো। আমাদের একটা সময় কর্পোরেট লিগ হতো, ২০১২ সালে খেলেছি, ওটা হলেও ভালো হয়।