টেনিস
হার দিয়ে শেষ হলো রাফায়েল নাদালের সাফল্যমণ্ডিত ক্যারিয়ার।
Published : 20 Nov 2024, 06:43 PM
কোর্টে দাঁড়িয়ে যখন কথা বলছিলেন রাফায়েল নাদাল, একটু পর পর গ্যালারিতে বইছিল করতালির জোয়ার। স্প্যানিশ তারকার কথা শেষ হলে করতালি চলল লম্বা সময় ধরে। গ্যালারির অনেকের মতো তখন নাদালের চোখও ছলছল করছিল। ইস্পাত দৃঢ় আর অদম্য মানসিকতার জন্য ক্যারিয়ারজুড়ে পরিচিতি যার, সেই তিনি একটু সময়ের জন্য ভেঙে পড়লেন বিদায় বেলায়।
ডেভিস কাপ দিয়ে টেনিসকে বিদায় জানানোর ঘোষণা গত মাসেই দিয়েছিলেন নাদাল। মঙ্গলবার রাতে মালাগায় প্রতিযোগিতাটির কোয়ার্টার-ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের কাছে স্পেনের হারে শেষ হয়ে গেছে ২২ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ীর সাফল্যে ভরা ক্যারিয়ার।
স্পেনের হয়ে প্রথম এককের লড়াইয়ে বোটিক ফন ডে জান্ডশুল্পের বিপক্ষে ৬-৪, ৬-৪ গেমে হারেন নাদাল। পরের এককে টেলন খ্রিক্সপোরকে ৭-৬ (০), ৬-৩ গেমে হারিয়ে লড়াইয়ে সমতা টানেন স্পেনের তরুণ তুর্কি কার্লোস আলকারাস। জয়ের পর চারবারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম এই জয়ী তারকা বলেন, ‘রাফার জন্য’ জিতেছেন তিনি।
দ্বৈতে আলকারাস ও মার্সেল গ্রানোইয়ের্স জুটি জিতলে নাদাল আরেকটি সুযোগ পেতেন আগামী শুক্রবারের সেমি-ফাইনালে। তবে এই ম্যাচে ৭-৬ (৪), ৭-৬ (৩) গেমে হেরে যায় স্প্যানিশ জুটি। তাতেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় ৩৮ বছর বয়সী নাদালের। জান্ডশুল্পের বিপক্ষে লড়াই হয়ে থাকল তার শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ।
অবাক করা ব্যাপার হলো, ডেভিস কাপের এককে ২০০৪ সালে নিজের প্রথম ম্যাচ হেরেছিলেন নাদাল। এরপর এখানে এককে তিনি জেতেন টানা ২৯ ম্যাচ। ২০ বছর পর সেই ধারায় ছেদ পড়ল এখানে ও তার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে এসে!
জান্ডশুল্পের বিপক্ষে হারের পর যেন অনেকটা দার্শনিক হয়ে গেলেন নাদাল।
“কিছু দিক থেকে ভালোই হলো…ডেভিস কাপে আমার প্রথম ম্যাচে হেরেছিলাম এবং শেষ ম্যাচেও হারলাম। বৃত্ত পূরণ হলো।”
পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব, সতীর্থ ও ভক্তদের সামনে কোর্টে দীর্ঘ বক্তৃতার পর যখন তার আলো ঝলমলে ক্যারিয়ারের ভিডিও প্রদর্শন করা হয়, তখন আবার অশ্রু নামে নাদালের চোখ থেকে। বিদায়ের ক্ষণে এই কিংবদন্তি ফিরে গেলেন ছোটবেলায়।
“ছোট্ট একটি গ্রামের শিশু ছিলাম আমি, যার ভাগ্য ভালো ছিল, কারণ আমার চাচা ছিলেন একজন টেনিস কোচ এবং পরিবার আমাকে সমর্থন দিয়েছিল।”
“অনেক লোক কঠোর পরিশ্রম করে, তবে আমি সেই ভাগ্যবানদের মধ্যে একজন, টেনিসের কারণে জীবনে আমি অসাধারণ সব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পেয়েছি। আমি শুধু চাই, একজন ভালো মানুষ এবং স্বপ্নের পথে ছুটে চলা এক শিশু হিসেবে আমাকে মনে রাখুক সবাই।”
নিতম্বের চোট ও অস্ত্রোপচারের কারণে গত দুই মৌসুমে খুব বেশি খেলতে পারেননি নাদাল। পারফরম্যান্সেও ছিল ভাটার টান। বাস্তবতা মেনেই সবকিছুর ইতি টেনে দিলেন তিনি।
ছেলেদের টেনিসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে ক্যারিয়ার শেষ করলেন নাদাল। ২৪ গ্র্যান্ড স্ল্যাম নিয়ে চূড়ায় আছেন তার দীর্ঘ সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী, সার্বিয়ান তারকা নোভাক জোকোভিচ।
নাদাল ফরাসি ওপেন জিতেছেন রেকর্ড ১৪ বার। তাকে বলা হয় ‘ক্লে কোর্টের রাজা।’ ২০০৫ থেকে ২০১৪, ১০ বারের মধ্যে ৯ বারই রোলাঁ গাঁরোয় ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন তিনি। এরপর ২০১৭ থেকে ২০২২, ৬ বারের মধ্যে জেতেন আরও পাঁচবার। এখানে ১১৬ ম্যাচ খেলে ১১২টিই জিতেছেন তিনি।
কোনো একটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্টের এককে তার চেয়ে বেশি ট্রফি জিততে পারেননি আর কেউ।
ইউএস ওপেন জিতেছেন তিনি চারবার, অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও উইম্বলডন দুবার করে। অলিম্পিকের এককে ও দ্বৈতে সোনাও জিতেছেন। স্পেনকে চারবার ডেভিস কাপ জেতাতে রেখেছেন বড় অবদান।
নাদাল, জোকোভিচ ও রজার ফেদেরারকে নিয়ে গড়ে উঠেছিল টেনিসের ‘বিগ থ্রি।’ লম্বা সময় ছেলেদের টেনিসে আধিপত্য করেছেন তারা, দারুণ সব রোমাঞ্চকর ম্যাচ উপহার দিয়েছেন ভক্তদের।
২০২২ সালে লেভার কাপ দিয়ে টেনিসকে বিদায় জানান ২০ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী ফেদেরার। এবার টেনিসের আঙিনায় শেষ হয়ে গেল আরেক কিংবদন্তির পথচলা।