ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ
এই তরুণ দলটি সময়ের সঙ্গে পরিণত হয়ে সামনে আরও দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিতে পারে, বিশ্বাস স্পেন কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তের।
Published : 15 Jul 2024, 09:23 AM
বলা হয়, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। স্পেন দলটির তো শুরু থেকে শেষ, সবই ছিল ভালো! এবারের ইউরোতে স্পেন যেভাবে খেলেছে, তা ছিল প্রায় নিখুঁত। কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে নিজেই বলছেন, এর চেয়ে ভালো কিছু করা কঠিন। কিন্তু এই দলের সম্ভাবনাও যে অপার! স্পেন কোচের বিশ্বাস, তার এই তরুণ দলটি সময়ের সঙ্গে পরিণত হয়ে সামনে আরও দুর্দান্ত হয়ে উঠতে পারে।
ফাইনালের আগে যে দল ছিল এবারের ইউরোর অবিসংবাদিত সেরা, শেষের প্রাপ্তিও তাদের সঙ্গী। উজ্জীবিত ফুটবলের প্রদর্শনীতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে রেকর্ড চতুর্থবারের মতো ইউরোপের সেরা হয়েছে স্পেন।
আসরের একমাত্র দল হিসেবে তারা সব ম্যাচ জিতেছে। টানা সেই সাত জয়ের পথে তারা গ্রুপ পর্বে হারিয়েছে ক্রোয়েশিয়া ও ইতালির মতো দলকে। এবারের আসরের চমক জর্জিয়াকে তারা বিধ্বস্ত করেছে শেষ ষোলোতে। কোয়ার্টার-ফাইনালে বিদায় করে দিয়েছে স্বাগতিক জার্মানিকে। এরপর সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডকে হারিয়ে তারা মেতে উঠেছে ট্রফি জয়ের উৎসবে। এই দলটিই যে আসরের সেরা, কোনো প্রশ্নই নেই সেখানে।
তাদের পারফরম্যান্সের কোনো ঘাটতির দিকে আঙুল তোলাই কঠিন। আসরজুড়েই ম্যাচের পর ম্যাচ দুর্দান্ত ধারবাহিকতা দেখিয়েছে তারা।
বড় কোনো তারকা তো বহুদূর, এই দলে তারকাই নেই খুব বেশি। কয়েকজন অভিজ্ঞ ফুটবলারের সঙ্গে তরুণদের প্রাধান্য দিয়েই দলটি সাজিয়েছেন কোচ দে লা ফুয়েন্তে। গত বছর উয়েফা নেশন্স লিগ জিতলেও ইউরোর মতো বড় আসরে এই দলকে শীর্ষ ফেভারিটের কাতারে রাখেননি বিশেষজ্ঞরা। দে লা ফুয়েন্তে নিজেও আছেন এই দলে।
তবে মনের কোণে আশা ঠিকই ছিল স্পেন কোচের। সেটি পূরণ হওয়ার পর এই দলকে নিয়ে তার আশার পরিধি বেড়ে গেছে অনেক।
“এমন নয় যে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে নিজেদেরকে ফেভারিট ভেবেছিলাম। তবে আমার মনে হয়েছিল, টুর্নামেন্ট জয়ের সুযোগ আছে এবং আমরা তা করেছি। এই আসরে দল যেমন খেলেছে, এর চেয়ে বেশি উন্নতি করা কঠিন। তার পরও আমি চাইব, এই ছেলেরা যেন আরও উন্নতি করে এবং নিজেদেরকে আরও গড়ে তোলে।”
“আমি জানি, ওরা তা পারবে। ওরা ক্লান্তিহীন। অবশ্যই আরও উন্নতির ও আরও জয়ের চেষ্টা ওরা করবে। ওদের সবারই এখন গর্বিত হওয়া উচিত। আশা করি, ইতিহাস গড়া এই প্রজন্মের প্রত্যেকেই সমানভাবে গর্বিত বোধ করবে। ওদের সামনে অনেক লম্বা ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষায়।”
টুর্নামেন্টজুড়ে স্পেনের বেশ কজন ফুটবলারই বলেছেন, এই দলটির সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও একতা। সবাইকে এক সুতোয় গাঁথার সেই কাজটি সুনিপুণভাবে করেছেন দে লা ফুয়েন্তে। স্পেনের জাতীয় একাডেমিতে কাজ করছেন তিনি প্রায় এক যুগ। তার কোচিংয়ে ইউরোপিয়ান আসরগুলোয় দারুণ পারফর্ম করেছে স্পেন। এবারের ইউরোর স্কোয়াডের অনেক ফুটবলারই সেই বয়সভিত্তিক দলগুলি থেকে উঠে এসেছেন। দে লা ফুয়েন্তের কাজের ধরন, তার দর্শন, ব্যক্তিত্ব, ভাবনা, সবকিছুই তাই ভালোভাবে জানেন ফুটবলাররা। কোচও খুব ভালো করে চেনেন দলের প্রত্যেককে।
পারস্পরিক এই আস্থার ইতিবাচক প্রতিফলন মাঠের ফুটবলেও পড়ছে বলে মনে করেন কোচ দে লা ফুয়েন্তে।
“আমি অবশ্যই চেষ্টা করেছি, নিজের ধরনটা দলকে রপ্ত করাতে, এমন ধরন যেটা আমি জানি যে ওরা মাঠে করাতে দেখাতে পারবে। আমরা চেষ্টা করেছি অননুমেয় থাকতে… চেষ্টা করেছি দ্রুত বল আদান-প্রদান করে খেলাটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং আমাদের গতিময় ফুটবলারদের সৌজন্যে তা আমরা পেরেছি।”
“আমি নিশ্চিত ছিলাম, আমার ওপর গোটা দলের আস্থা আছে এবং ছেলেরা তা প্রমাণ করেছে। শুধু ফাইনালেই নয়, টুর্নামেন্টজুড়েই দেখিয়েছে। ওরা ছিল প্রায় নিখুঁত। আজকে রাতে প্রায় সবকিছুই একদম ঠিকঠাক করেছে ওরা… যেভাবে ওরা নিজেদের মেলে ধরেছে, গোটা সমাজের জন্যই উদাহরণ এই ছেলেরা।”
এই সাফল্যের পর দে লা ফুয়েন্তের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর প্রসঙ্গও উঠছে অবধারিতভাবেই। সেটিকে এখন কেবল আনুষ্ঠানিকতাই বলা যায়। ৬৩ বছর বয়সী এই কোচ অবশ্য এখন এসব ভাবতেই চান না।
“এখন এসব নিয়ে আমার চিন্তা নেই। আজকে উদযাপন করার ও খুশি থাকার দিন। এই দল যেভাবে টুর্নামেন্ট জিতেছে, যে আস্থা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে গোটা আসর খেলেছে, এভাবে জিততে অনেক দিন কাউকে দেখিনি। এখন সাফল্য উদযাপন করার সময়।”