সাবিৎজারের জোড়া গোলে শুরুর দিকে এগিয়ে গেলেও শেষ দিকে দুই দফায় নিজেদের জালেই বল ঠেলে দেয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
Published : 14 Apr 2023, 09:55 AM
২১ মিনিটের মধ্যেই দুর্দান্ত দুটি গোল। এরপরও ম্যাচজুড়ে চলতে থাকল দাপট। সব মিলিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জয় মনে হচ্ছিল স্রেফ সময়ের ব্যাপার। কিন্তু কয়েকজনের চোট আর কার্ড শঙ্কায় কয়েকটি পরিবর্তন দিয়ে কিছুটা ছন্দপতন। শেষ দিকে পরপর দুটি আত্মঘাতী গোলে জয় হাতছড়া। ঘরের মাঠে যেন পুরোপুরি হতভম্ব তারা। ম্যাচ শেষে কোচ এরিক টেন হাগ বললেন, ভাগ্যটাই তাদের সঙ্গে ছিল না।
ইউরোপা লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালের প্রথম লেগে ওল্ড ট্রাফোর্ডে বৃহস্পতিবার সেভিয়ার বিপক্ষে এই তিক্ত অভিজ্ঞতা হয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। মার্সেল সাবিৎজারের জোড়া গোলে এগিয়ে গিয়েও তারা ম্যাচ ড্র করে শেষ সময়ে দুই দফায় বল নিজেদের জালে ঠেলে।
ম্যাচের ১৪তম মিনিটে ব্রুনো ফের্নান্দেসের নিখুঁত পাস বক্সের ভেতর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দারুণ ফিনিশিংয়ে দলকে এগিয়ে নেন সাবিৎজার। বায়ার্ন মিউনিখ থেকে ধারে আসা এই অস্ট্রিয়ান ব্যবধান বাড়ান ৭ মিনিট পরই। এবার প্রতিপক্ষের তিনজনের মাঝখান দিয়ে দুর্দান্ত পাস দেন অঁতনি মার্শিয়াল। আবারও চমৎকার ফিনিশিংয়ে ব্যবধান বাড়ান সাবিৎজার।
পরে চোটের কারণে রাফায়েল ভারানেকে তুলে নেন কোচ। চোটের ধাক্কা সামলে দীর্ঘদিন পর শুরুর একাদশে থাকা মার্শিয়ালকেও ৬০ মিনিটের পর তুলে নেওয়া হয়। হলুদ কার্ড পাওয়ার ব্রুনো ফের্নান্দেসেরও বদলি নামান টেন হাগ। এক পর্যায়ে গুরুতর চোট পেয়ে প্রতিপক্ষের দুই আর্জেন্টাইন ফুটবলারের কাঁধে ভর দিয়ে মাঠ ছাড়েন ইউনাইটেডের আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার লিসান্দ্রো মার্তিনেস। ততক্ষণে ৫ বদলির সবকটি হয়ে যাওয়ায় ইউনাইটেডকে খেলতে হয় ১০ জন নিয়ে।
প্রতিপক্ষের এলোমেলো অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে আক্রমণে ধার বাড়ায় সেভিয়া। সুফলও পেয়ে যায় ইউরোপা লিগের রেকর্ড ৬ বারের চ্যাম্পিয়নরা। ৮৪তম মিনিটে ইউনাইেটডের বক্সে গোলবারের ডানপাশ একদম কোনা থেকে বল ভেতরে পাস দেওয়ার চেষ্টা করেন হেসুস নাভাস। সেটিই ইউনাইটেডের ডাচ ডিফেন্ডার তাইরেল মালাসিয়ার পায়ে লেগে চকিতে ঢুকে যায় জালে। কাছেই থাকা গোলকিপার দাভিদ দে হেয়ার করার ছিল না কিছুই।
শেষ নয় সেখানেই। ৯২তম মিনিটে বক্সের ভেতর অনেকটা লাফিয়ে হেড করেন ইউসেফ এন-নেসিরি। তাতে জোর খুব একটা ছিল না। বিপজ্জনক কিছুও ছিল না। কিন্তু তার হেড থেকে বল হ্যারি ম্যাগুইয়ারের মাথায় লেগে দিক বদলে ঢুকে যায় জালে। গোলকিপার দে হেয়া শেষ মুহূর্তে ডাইভ দিয়েও রক্ষা করতে পারেননি।
ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় মাত্র দ্বিতীয় ইংলিশ ক্লাব হিসেবে এক ম্যাচে দুটি আত্মঘাতী গোল হজম করল ইউনাইটেড। এর আগে ২০১৯ সালে এই তেতো স্বাদ পেয়েছিল চেলসি, তাদের প্রতিপক্ষ ছিল টেন হাগের আয়াক্স আমস্টারডাম!
সেই টেন হাগ এবার পেলেন উল্টো স্বাদ। ম্যাচ শেষে বিটি স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি দায় দিলেন ভাগ্যকে, পাশাপাশি নিজেদেরও দাঁড় করালেন কাঠগড়ায়।
“আমার মনে হয়, ম্যাচ আমাদের মুঠোয় ছিল। তিন বা চার গোল করা উচিত ছিল আমাদের… কিন্তু কয়েকজনের চোটে পড়ার দুর্ভাগ্যজনক মুহূর্ত এলো… এরপর আমরা দুটি আত্মঘাতী গোল হজম করলাম, এটা তো স্রেফ দুর্ভাগ্য। মেনে নিতেই হবে। তবে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ থাকার সময়ই খেলা শেষ করে দেওয়া শিখতে হবে আমাদের।”
তবে নিজেদের দায়টুকু নিয়েও শেষ পর্যন্ত দুর্ভাগ্যের থাবাই দলকে কাবু করেছে বলে মনে করেন ইউনাইটেড কোচ।
“দুটি গোলই ছিল দুর্ভাগ্যজনক। দুটি গোলেই বল দিক বদলে গেছে। কী আর করা যাবে! কখনও কখনও এরকম বাজে দিন ও দুর্ভাগ্য আসে। আজকের রাতটি আমাদের ছিল না।”
কোচের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ভাগ্যকে দায় দিলেন জোড়া গোল করা সাবিৎজারও।
“রোলার-কোস্টার ভ্রমণ হলো যেন। আমাদের উচিত ছিল খেলাটা আগেই শেষ করে দেওয়া। শেষ পর্যন্ত ড্র হলো, যা আমাদের কাম্য ছিল না। এরপর সেভিয়ায় গিয়ে কাজ শেষ করতে হবে।”
“আমাদের সুযোগ ছিল (ব্যবধান আরও বাড়ানোর), আত্মবিশ্বাসও ছিল এবং খেলা আমরাই নিয়ন্ত্রণ করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজসকভাবে সহজ দুটি গোল দিয়ে দিয়েছি।”
দুই দলের পরের লেগ আগামী বৃহস্পতিবার।