আক্রমণের সুর বেঁধে দেওয়া দুই শিল্পী

মারিয়া মান্দা ও মনিকা চাকমা-মাঝমাঠের এই দুই শিল্পীই প্রতি ম্যাচে বেঁধে দিচ্ছেন আক্রমণের সুর।

কাঠমান্ডু থেকে মোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2022, 02:36 PM
Updated : 10 Sept 2022, 02:36 PM

মারিয়া মান্দা ও মনিকা চাকমা-দুজনে কথা দিয়েছিলেন মাঝমাঠ সামলাবেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। ‍আক্রমণের সুর বেঁধে দিবেন প্রতি ম্যাচে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের গত দুই ম্যাচের পরিসংখ্যান বলছে কী দারুণভাবেই না কথা রেখেছেন তারা। দুই ম্যাচে বাংলাদেশ গোল করেছে ৯টি। যার সাতটিতেই জড়িয়ে তাদের নাম!

মারিয়া-মনিকার পা জোড়া যেন শিল্পীর তুলি। নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচায় যে তুলি দিয়ে জয়ের ছবি আকাঁর শুরুটা দুজনে করেছিলেন মালদ্বীপের বিপক্ষে। ৩-০ ব্যবধানে জেতা ওই ম্যাচে গোলের জন্য ৩২ মিনিটের অপেক্ষার প্রহর গোণা শেষ হয় সাবিনা খাতুনের দূরপাল্লার শটে। প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে ডান পায়ের দারুণ শটে দলকে এগিয়ে নেন অধিনায়ক।

দুই মিনিট পরের গোল থেকে শুরু হয় মারিয়া ও মনিকার কথা রাখার গল্পের শুরু। ওই ম্যাচে দ্বিতীয় গোলের আক্রমণের শুরুটা মারিয়ার পায়ের নিপূণ ছোঁয়া থেকে। ১৯ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারের পাস ধরে একজনকে কাটিয়ে মনিকা বল বাড়ান বক্সে। কৃষ্ণা রানী সরকার ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি, পাশে থাকা মাসুরা পারভীন সুযোগটি কাজে লাগান।

ছয় মিনিট পর সাবিনার দ্বিতীয় গোলেও অবদান মারিয়ার! অবশ্য এবার তিনি দূরপাল্লার শটে নিজেই লক্ষ্যভেদের চেষ্টা করেছিলেন, গোলরক্ষক আটকালেও গ্লাভসে জমাতে পারেনি। দারুণ ক্ষিপ্রতায় ছুটে গিয়ে আলগা বল জালে জড়ান সাবিনা।

একই মাঠে শনিবার পাকিস্তানের বিপক্ষে মনিকা ও মারিয়া আরও দুর্বার। দুজনে মিলে ছোট ছোট নিখুঁত পাসে, পায়ের কারিকুরিতে প্রতিপক্ষকে মাঝমাঠে সেভাবেই দাঁড়াতেই দেননি। এ ম্যাচে তৃতীয় মিনিটে নিজেই গোল করলেন মনিকা। এক ডিফেন্ডারের পায়ের ফাঁক দিয়ে চকিত চমকে বল বের করে দিয়ে বক্সে বাড়িয়েছিলেন সাবিনা। মিশাল আকরাম ক্লিয়ার করলে বক্সের বাইরে পেয়ে যান মনিকা। প্রথম ছোঁয়াতেই নিচু জোরাল শটে লক্ষ্যভেদ করেন ১৮ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার।

পাকিস্তান ম্যাচে পরের পাঁচ গোলের চারটিতেই মিশে আছেন এই ‍দুজন। ২৮তম মিনিটে সিরাত জাহান স্বপ্নার গোলের উৎস মারিয়া। পাকিস্তান অধিনায়ক মারিয়া জামিল খানের পাশ দিয়ে সাবিনার উদ্দেশ্যে নিখুঁত পাস বাড়িয়েছিলেন তিনি। পরে অধিনায়কের থ্রু পাস ধরে স্বপ্না জাল খুঁজে নেন।

৩০তম মিনিটে সাবিনার হ্যাট্রিকের পথে যাত্রা শুরুর গোলে সুর বেঁধে দেন মনিকা। মাঝমাঠ থেকে বল পায়ে বক্সের একটু ওপরে এসে অধিনায়ককে বলের যোগান দেন এই মিডফিল্ডার।

পাঁচ মিনিট পর সাবিনার দ্বিতীয় গোলটি বানিয়ে নেন সানজিদা; গোলমুখে বল বাড়ান তিনি, অধিনায়ক শুধু প্লেসিং শট নেওয়ার কাজটুকু করেন।

৫৮তম মিনিটে সাবিনার হেডে হ্যাটট্রিক পূরণের ছকও সাজিয়ে দেন মারিয়া; গোলমুখে দারুণ ক্রস বাড়িয়ে। ৭৭তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দারুণ শটে লক্ষ্যভেদ করেন ঋতুপর্না চাকমা; এই গোলের উৎস মনিকার পাস!

দুজনকে নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রশ্ন ছিল কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের কাছে। মারিয়া ও মনিকা…প্রশ্নটা শেষ করা যায়নি। কোচের কণ্ঠে ফুটে উঠল মুগ্ধতা।

“ওরা দুজন অবিশ্বাস্য, দুর্দান্ত। কালকে যে আমরা অনুশীলন করেছি, যে পরিকল্পনা ছিল, মাঠজুড়ে ছড়িয়ে খেলা, উপভোগ্য ফুটবল খেলা, পুরোটাই আজ ফুটে উঠেছে। সেখানে মারিয়া ও মনিকার ভূমিকা ছিল দারুণ। মাঠের অবস্থা খারাপ ছিল, কিন্তু আমাদের খেলায় তা বোঝা যায়নি।”

একই প্রশ্ন ছিল সাবিনা খাতুনের কাছেও। দুই সতীর্থের প্রশংসায় উপমা খুঁজতে এক মুহূর্তও দেরি হয়নি বাংলাদেশ অধিনায়কের।

“আমাদের মেয়েরা আজকে অসাধারণ খেলেছে। আপনারা যারা মাঠে ছিলেন, যেটাকে আধুনিক ও গোছালো ফুটবল বলে, সেটাই আমরা খেলার চেষ্টা করেছি এবং আমার মনে হয়, আমরা সফল হয়েছি। আজকে মারিয়া ও মনিকার পারফরম্যান্স ছিল ব্রিলিয়ান্ট।”

দুজনের কারো বয়স ২০ পেরোয়নি। এর মধ্যেই হয়ে উঠেছেন দলের নির্ভরতার নাম। মনিকা ও মারিয়া এভাবেই আলো ছড়াতে থাকলে কি বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে? এ প্রশ্নে কোচ মুখে কিছু বললেন না; আত্মবিশ্বাসী হাসিতে বুঝিয়ে দিলেন যা বলার।