জার্মান ফুটবল
আসছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ শেষে বুটজোড়া তুলে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন জার্মান তারকা মিডফিল্ডার।
Published : 21 May 2024, 05:10 PM
রেয়াল মাদ্রিদে আগামী মৌসুমে থাকবেন কি-না, টনি ক্রুসের ক্লাব ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিয়ে এই আলোচনাই হচ্ছিল বেশি। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে সবকিছুর ইতি টেনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন জার্মান তারকা। বললেন, আসছে ইউরোপিয়ান চাম্পিয়নশিপের পর আর মাঠে নামবেন না তিনি।
নিজের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে মঙ্গলবার দেওয়া পোস্টে এই সিদ্ধান্ত জানান ৩৪ বছর বয়সী ক্রুস।
আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবশ্য আগেও একবার অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন ক্রুস। তবে দলের প্রয়োজনে এবং কোচের আহ্বানে গত ফেব্রুয়ারিতে ফেরার সিদ্ধান্ত জানান তিনি। এরপর মার্চে ফ্রান্সের বিপক্ষে ২-০ ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২-১ গোলে জার্মানির জয়ের ম্যাচে খেলেন তিনি।
দেশের মাটিতে অনুষ্ঠেয় আসছে ইউরোর জন্য কোচ ইউলিয়ান নাগেলসমানের দলেও আছেন বিশ্বকাপজয়ী এই মিডফিল্ডার। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলেই সাফল্যমণ্ডিত ক্যারিয়ারের ইতি টানতে যাচ্ছেন তিনি।
২০১৪ সালে জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে রেয়ালের নজর কাড়েন ক্রুস। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ওই আসরের পরই সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে যোগ দেন তিনি। অল্প সময়েই হয়ে ওঠেন দলের ভরসার প্রতীক, মাঝমাঠে লুকা মদ্রিচের সঙ্গে গড়ে তোলেন অসাধারণ এক জুটি।
১০ বছর পরও দলের সবচেয়ে গুরুতপূর্ণ খেলোয়াড়দের একজন ক্রুস। চলতি মৌসুম শেষেই রেয়ালে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। চুক্তি বাড়ানোর আলোচনা হচ্ছে কি-না, মাঝেমধ্যেই তা নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে, ছুটে গেছে প্রশ্ন। সরাসসি কোনো উত্তর না মিললেও, তিনি নিজে বারবার বলেছেন, রেয়ালেই তিনি খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টানতে চান। কথা রাখছেন ক্রুস, বিদায়বেলায় বললেন সেটাই।
“এই গ্রীষ্মেই ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের পর একজন সক্রিয় ফুটবলার হিসেবে আমার ক্যারিয়ার শেষ হবে। যেমনটা আমি সবসময় বলেছি, রেয়াল মাদ্রিদ আমার বর্তমান এবং আমার ক্যারিয়ারের শেষ ক্লাব হবে।”
বিদায়ের ঘোষণার শুরুতেই ক্রুস ফিরে তাকান রেয়ালে তার শুরুর দিনটিতে। স্মৃতিচারণ করেন জীবনের সুন্দর ও সাফল্যেঘেরা সময়কে।
“২০১৪ সালের ১৭ জুলাই, রেয়াল মাদ্রিদে আমার পরিচিতি পর্বের দিন, যে দিনটি আমার জীবন বদলে দিয়েছিল। ফুটবলার হিসেবে আমার জীবন-তবে বিশেষ করে একজন ব্যক্তি হিসেবে।”
“সেটা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্লাবে (আমার জীবনের) নতুন এক অধ্যায়ের শুরু। ১০ বছর পর, চলতি মৌসুম শেষে সেই অধ্যায়ের শেষ হতে যাচ্ছে। এই রোমাঞ্চকর ও সফল দশকটি আমি কখনও ভুলব না।”
সবসময়ের মতো রেয়ালের জার্সিতে চলতি মৌসুমের পুরোটা সময়ও অসাধারণ ফুটবল উপহার দিয়ে চলেছেন ক্রুস। গত জানুয়ারিতে দলের স্প্যানিশ সুপার কাপ জয় এবং লা লিগায় চার ম্যাচ বাকি থাকতে শিরোপা পুনরুদ্ধারে দারুণ ভূমিকা আছে তার।
বের্নাবেউয়ের ১০ মৌসুমে চারটি করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও লা লিগাসহ আরও অনেক ট্রফি জিতেছেন তিনি। ২০১৩ সালে বায়ার্নের হয়েও একবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বাদ পেয়েছেন ক্রুস। এছাড়া মিউনিখের ক্লাবটির হয়ে তিনটি বুন্ডেসলিগাসহ অনেক শিরোপা জিতেছেন তিনি।
রেয়ালের জার্সিতে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৪৬৩টি ম্যাচ খেলেছেন ক্রুস এবং জিতেছেন ২০টির বেশি ট্রফি। আরও একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের সুযোগ আছে তার সামনে; আগামী ১ জুন ফাইনালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে শিরোপা লড়াইয়ে নামবে ইউরোপের সফলতম ক্লাবটি।
তবে, ওই ম্যাচের ফল যাই হোক না কেন, এখন পর্যন্ত ক্রুস রেয়ালের হয়ে যা করেছেন, যতকিছু জিতেছেন, তাতেই ক্লাবটির সবচেয়ে সফল খেলোয়াড়দের একজন হয়ে বিদায় নেবেন তিনি।
বিদায়ী বার্তায় ক্লাব সংশ্লিষ্ট সবাই এবং ভক্ত-সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন ক্রুস।
“এখানে যারা আমাকে হৃদয় দিয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন এবং আমার ওপর বিশ্বাস করেছিলেন, তাদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিশেষ করে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই প্রিয় মাদ্রিদিস্তাসের (রেয়ালের সমর্থক গোষ্ঠী) প্রতি, এখানে আমার প্রথম দিন থেকে আপনারা যে ভালোবাসা দিয়েছেন, সেজন্য।”
নিজেদের ওয়েবসাইটে দেওয়া বার্তায় দলের অনেক অনেক সাফল্যের নায়কের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ক্লাব রেয়ালও।
“রেয়াল মাদ্রিদ টনি ক্রুসের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাতে চায়, যিনি এরই মধ্যে রেয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছেন এবং তিনি এই ক্লাব ও বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তিদের একজন।”
“টনি ক্রুস তার অসাধারণ ফুটবল সামর্থ্য এবং এই ক্লাবের জন্য তার নিবেদনের জন্য আজীবন সব মাদ্রিদিস্তাসের হৃদয়ে থাকবেন।”
রেয়ালের ঘরের মাঠে ক্রুস শেষবারের মতো মাঠে নামবেন আগামী শনিবার, রেয়াল বেতিসের বিপক্ষে লিগ ম্যাচে। এর সাত দিন পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল দিয়ে শেষ হবে তার ঝলমলে রেয়াল অধ্যায়।
এরপর খেলোয়াড়ী জীবনের শেষ অভিযানে নামবেন ক্রুস জাতীয় দলের হয়ে। আগামী ১৪ জুন শুরু হতে যাওয়া ইউরোয় উদ্বোধনী ম্যাচে স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হবে জার্মানি।