ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের বিপক্ষে মিকেল আর্তেতার দলের এই জয়ে লিগ টেবিলে চার নম্বরে নেমে গেছে ম্যানচেস্টার সিটি।
Published : 01 Dec 2024, 01:33 AM
ছয় মিনিটের মধ্যে দুই পাশের দুই জালে বল জড়াল চারবার, আগে-পরে মিলিয়ে গোল হলো তিনটি। মুড়ি-মুড়কির মতো গোল হলেও, ম্যাচে লড়াই অবশ্য হলো না একটুও। ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডকে গুঁড়িয়ে লিগ টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে ফিরল আর্সেনাল।
লন্ডন স্টেডিয়ামে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে ৫-২ গোলে জিতেছে মিকেল আর্তেতার দল। গতবারের রানার্সআপদের পাঁচ গোলদাতা হলেন-গাব্রিয়েল মাগালিয়াইস, লেয়ান্দ্রো ত্রোসার, মার্টিন ওডেগোর, কাই হাভার্টজ ও বুকায়ো সাকা।
অধিকাংশ সময় পজেশন রাখার পাশাপাশি আক্রমণেও একচেটিয়া আধিপত্য করে আর্সেনাল। প্রথমার্ধে গোলের জন্য ১০ শট নিয়ে ছয়টি লক্ষ্যে রেখে পাঁচটিতেই সফল হয় তারা। ওয়েস্ট হ্যাম লক্ষ্যে তিন শট নিয়ে দুটি পাঠায় জালে।
দুই দলের এমন দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে আরও গোলের প্রত্যাশা জাগলেও, বিরতির পর যদিও তা আর হয়নি।
১৩ ম্যাচে সাত জয় ও চার ড্রয়ে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আর্সেনাল। সমান ২৩ পয়েন্ট নিয়ে পরের দুটি স্থানে ব্রাইটন ও ম্যানচেস্টার সিটি। শিরোপাধারী সিটি অবশ্য একটি ম্যাচ কম খেলেছে।
সিটির সমান ১২ ম্যাচে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে লিভারপুল।
আরও একবার ধীরগতির ফুটবলে শুরুর পর আচমকা সেট পিসে এগিয়ে যায় আর্সেনাল এবং গত মৌসুমে প্রতিপক্ষের গোলমুখে গাব্রিয়েলকে যা করতে দেখা গেছে বারবার, ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার সেটাই করলেন আবার।
দশম মিনিটে বুকায়ো সাকার কর্নারে হেডে দলকে এগিয়ে নেন গাব্রিয়েল। ২০২৩ সালের শুরু থেকে প্রিমিয়ার লিগে তার (৮) সমান বা বেশি হেড থেকে গোল করেছেন কেবল অলি ওয়াটকিন্স (১০), আর্লিং হলান্ড (৮) ও ক্রিস উড (৮)।
২০২০-২১ মৌসুমে ফরাসি ক্লাব লিল থেকে আর্সেনালে যোগ দেন গাব্রিয়েল। সেই থেকে প্রিমিয়ার লিগে হেডে ১৭টি গোল করেছেন তিনি; অন্য যে কোনো ডিফেন্ডারের থেকে অন্তত ৬টি বেশি (কুট জুমা ১১টি)
চাপ ধরে রেখে ২৭তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে আর্সেনাল। ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢোকা সাকাকে বাধা দিতে এগিয়ে যান গোলররক্ষক, সুযোগ বুঝে সাকা পাস বাড়ান বাঁ দিকে। অনায়াসে ফাঁকা জালে বল পাঠান বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড ত্রোসার।
এরপর যেন খেই হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট হ্যাম। খানিক বাদে দুই মিনিটের ব্যবধানে আরও দুটি গোল হজম করে তারা।
লুকাস পাকেতা বক্সে ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ৩৪তম মিনিটে ওই স্পট কিক থেকেই স্কোরলাইন ৩-০ করেন আর্সেনাল অধিনায়ক ওডেগোর। এরপর, দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে সতীর্থের থ্রু পাস দুই ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আগুয়ান গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে জালে পাঠান হাভার্টজ।
তৃতীয় গোল হজমের পরই হতাশায় কিছু স্বাগতিক সমর্থক গ্যালারি ছাড়তে শুরু করেন। হাভার্টজের গোলে তাদের সেই চেষ্টায় আরও গতি পায়। তবে মুহূর্তেই বদলে যায় মাঠের চিত্র।
ঠিক দুই মিনিটের ব্যবধানে তারাও দুবার আর্সেনালের জালে বল পাঠিয়ে লড়াই জমিয়ে দেয়। ইংলিশ ডিফেন্ডার অ্যারন ওয়ান-বিসাকা ব্যবধান কমানোর পর, অসাধারণ ফ্রি কিকে স্কোরলাইন ৪-২ করেন ডিফেন্ডার এমেরসন।
ওয়েস্ট হ্যামের দারুণ কিছুর আশা অবশ্য বিরতির আগে আরেক দফা ধাক্কা খায়। গাব্রিয়েল ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় আর্সেনাল এবং সাকার সফল স্পট কিকে ফের তিন গোলের ব্যবধানে এগিয়ে যায় দলটি।
এমন মুহুর্মুহু গোলে পুরোনো এক রেকর্ডও স্পর্শ করেছে এই ম্যাচ।
প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে এর আগে তিনটি ম্যাচে প্রথমার্ধে সমান ৭টি গোল হয়েছিল; ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স-লিডস ইউনাইটেড (প্রথমার্ধে ৩-৪), ২০০৭ সালের এপ্রিলে ব্র্যাডফোর্ড সিটি-ডার্বি কাউন্টি (প্রথমার্ধে ৪-৩) ও ২০১২ সালের ডিসেম্বরে রিডিং-ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (প্রথমার্ধে ৩-৪)।
ওই তিন ম্যাচের মধ্যে কেবল একটিতে দ্বিতীয়ার্ধে আরেকটি গোলের দেখা মিলেছিল; ব্র্যাডফোর্ড ও ডার্বির মধ্যকার ম্যাচটি ৪-৪ ড্র হয়েছিল।
অন্য দুই ম্যাচের মতো এদিনও মিলল না আরও কোনো গোলের দেখা। বিরতির পর দুই দলের আক্রমণেই ধার কমে যায়। ভালো একটি সুযোগ অবশ্য তৈরি করেন ওডেগোর; তবে তার নিচু শট ঝাঁপিয়ে রুখে দেন গোলরক্ষক।
প্রিমিয়ার লিগে চারটি ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে একটি মিলিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে জয়হীন থাকার পর, আন্তর্জাতিক ফুটবলের বিরতি শেষে ফের যেন ছন্দে ফিরেছে আর্সেনাল।
এই নিয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা তিন ম্যাচ জিতল তারা, আর এই ম্যাচগুলোয় তারা গোল করল ১৩টি।