ঢাকা, ১৭ অক্টোবর (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)-পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করার দাবিতে রাজধানীর মতিঝিলে রাতভর বিক্ষোভ করেছে খুচরা বিনিয়োগকারীরা।
রোববার দিনের বেলা থেকে অনশন শুর" করা ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা বলছে, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস ছাড়া তারা অনশন ভাঙবেন না।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী রোববার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, "পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত অথবা প্রধানমন্ত্রীর কোনো প্রতিনিধি এসে আশ্বাস না দেওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন ভাঙব না।"
পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করার দাবিতে রোববার সকালে লেনদেন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ডিএসই ভবনের সামনে এই অনশন শুরু হয়। এতে অংশগ্রহণকারীদের অনেকের মাথায় কাফনের প্রতীক হিসাবে সাদা কাপড় বাঁধা দেখা যায়। এক নারী বিনিয়োগকারীর হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা দেখা যায় 'আর কত? প্রতিবাদের ভাষা নাই।'
দুপুরের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এসে আন্দোলনরত বিনিয়োগকারীদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
দেড়টার দিকে ডিএসই ভবনের সামনে আসেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাজ্জাদ জহির চন্দন। তিনি বিনিয়োগকারীদের কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন।
এরপর একে একে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন অনশনস্থলে উপস্থিত হন।
বিকেল ৩টায় লেনদেন শেষ হওয়ার আগে আগে বিনিয়োগকারীরা রাস্তার ওপর জড়ো হলে ডিএসইর সামনের সড়কের আশপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, "আপনারা অনশন ভাঙেন। আমি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবো।"
শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
মঈন খান বিনিয়োগকারীদের অনশনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বলেন, "আওয়ামী লীগ সরকার এলেই শেয়ারবাজার পতন হয়। এর আগেও হয়েছে, এবারো হলো।"
তিনি বলেন, "বিএনপি ক্ষমতায় এলে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দেবে। যারা শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত- তাদের বিচারও করা হবে।"
আসব আব্দুর রব বলেন, "সার্বিক পরিস্থিতি দেখে দেশে কোনো সরকার আছে বলে মনে হচ্ছে না।"
এর আগে চন্দন বলেন, "আমরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি। বিনিয়োগকারীদের জন্য যা যা করা দরকার বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি তাই করবে।"
ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বাজার স্থিতিশীল করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ করা উচিৎ। এছাড়া গত বুধবার এসইসির সঙ্গে এনবিআরের বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে সে ব্যাপারে অবিলম্বে আদেশ জারি করতে হবে। বাজারে তারল্য সংকট বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নিতে হবে।"
রোববার সপ্তাহের প্রথম দিন ডিএসই সাধারণ সূচক কমেছে ১৮১ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। গত দু সপ্তাহে ডিএসই সাধারণ সূচক কমেছে ৩৪১ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট।
অব্যাহত দরপতনে গত সপ্তাহেও রাস্তায় নামে ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা। দরপতন ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে তারা অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন।
দরপতন এবং বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ও পুঁজিবাজার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (এসইসি) কমিশনের চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন বুধবার দিনভর বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের খায়রুল হোসেন জানান, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পুনরায় আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে এবং ব্রোকারেজ কমিশনের উৎসে আয়কর কমানো হচ্ছে।
এছাড়া মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর আরোপিত কর কমানোর বিষয়টি এনবিআর বিবেচনা করছে বলে জানান তিনি। ওইদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট কমানোর প্রস্তাব দেয় এসইসি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এফএফএস/আরবি/জেকে/২২২৫ ঘ.