আর্টেমিস: তিন ম্যানিকুইন নিয়ে রকেট ছুটবে চাঁদে

ওরিয়ন ক্যাপসুলে যে তিন ম্যানিকুইন যাবে, এদের একজনের নাম হচ্ছে কমান্ডার মুনিকিন ক্যামপোস।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2022, 05:45 PM
Updated : 2 Sept 2022, 05:45 PM

আর্টেমিসের প্রথম মিশনে তিন ‘বিশেষ’ নভোচারীকে চাঁদে পাঠাচ্ছে নাসা।

আসলে নাসা তো আবারও চাঁদে মানুষ পাঠানোর কথাই ভাবছে। আগামীর সেই মিশনকে সফল করতে কী কী প্রতিবন্ধতার মুখে পড়তে হতে পারে, তা বুঝে নিতেই এবার ওরিয়ন ক্যাপসুলে বসবে তিন ম্যানিকুইন।

ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রোববার প্রথম প্রহর) ছেড়ে যাবে রকেট, এখন চলছে সেই প্রস্তুতি পর্ব।

ওরিয়ন ক্যাপসুলে যে তিন ম্যানিকুইন যাবে, এদের একজনের নাম কমান্ডার মুনিকিন ক্যামপোস।

আগামী মিশনে নভোচারীদের যেমন পোশাক পরার কথা, এবার ক্যামপোসের পরনে সেই পোশাকই থাকবে।

ক্যামপোসের সঙ্গী হবেন অঙ্গবিহীন হেলগা ও জোহার। এই দুজনের কাছে থাকবে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত করার যন্ত্র। তাতে জানা যাবে আগামীতে এমন চন্দ্রাভিযানে নভোচারীদের জন্য তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকি কতটুকু।

জোহার এমন একটি পোশাক পরে থাকবে, যা তেজস্ক্রিয়তা থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। তবে হেলগাকে এমন কোনো পোশাক দেওয়া হবে না।

আসলে নাসার এবারের চন্দ্রাভিযান একটি পরীক্ষামূলক মিশন। নাসার নতুন ‘স্পেস লঞ্চ সিস্টেম’ বা এসএলএস দিয়ে এই প্রথম বড় মিশনে হচ্ছে। আর নিরাপত্তার বিষয়ে পুরো নিশ্চিত না হয়ে নাসা নভোচারীসহ ক্যাপসুল নিয়ে রকেট পাঠাতে চাইবে না, সেটাই স্বাভাবিক।

এই পরীক্ষামূলক অভিযানের মধ্যে দিয়ে এসএলএস এবং ওরিয়নের সর্বোচ্চ ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে চলেছে নাসা। এই মিশনে কিউবস্যাটস নামে ১০টি ছোট স্যাটেলাইটও পাঠানো হবে।

কিছু স্যাটেলাইট চাঁদে তুষারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবে। একটি স্যাটেলাইট থেকে বড় আকারের সৌর-পাল ছাড়া হবে এবং ওই স্যাটেলাইট গ্রহাণুর দিকে নজর রাখবে। আর একটি স্যাটেলাইট চাঁদে অবতরণের চেষ্টা চালাবে।

চাঁদে শেষবার কোনো মানুষের পদচিহ্ন পড়েছিল ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে। আর্টেমিস প্রকল্পের মাধ্যমে চাঁদে আবার মানব নভোচারীদের পাঠাবে নাসা। পরে সেই অভিযান সম্প্রসারিত হবে মঙ্গলে। তা সফল হলে প্রথমবারের মত মঙ্গলে মানুষের পা পড়বে। সেজন্যই নতুন রকেট এবং স্পেসক্রাফটের কার্যক্ষমতা যাচাই করে দেখার মিশন হচ্ছে আর্টেমিস ওয়ান।

কথা ছিল গত ২৯ অগাস্টই উৎক্ষেপণ করা হবে আর্টেমিস ওয়ান অভিযনের রকেট। কিন্তু কারিগরি ত্রুটি ধরা পড়ায় শেষ মুহূর্তে সেই চেষ্টা হোঁচট খায়। যাত্রার নতুন দিন ঠিক করা হয় শনিবার।

Also Read: আর্টেমিস অভিযান পিছিয়ে শনিবারে, নতুন শঙ্কা আবহাওয়া

Also Read: আর্টেমিস: নাসার চাঁদে ফেরার মিশনে প্রথম যাত্রায় হোঁচট

Also Read: আর্টেমিস: অর্ধ শতক পর নতুন চন্দ্রাভিযানের প্রহর গুনছে নাসা

Also Read: আর্টেমিস ১-এর চতুর্থ ‘ড্রেস রিহার্সাল’ শুরু করল নাসা

এসএলএস কী?

এসএলএসের অর্থ স্পেস লঞ্চ সিসটেম। এর শক্তিশালী রকেট ওরিয়ন ক্যাপসুলকে নিয়ে যাবে মহাকাশে।

মিশন আর্টেমিসের জন্য বানানো এই এসএলএসের রয়েছে চারটি বড় ইঞ্জিন এবং দুটো সলিড-স্টেট বুস্টার। ২৭ মেট্রিক টন অর্থ্যাৎ ২৭ হাজার কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজন বয়ে নিতে পারে এই রকেট।

লিও বা লো আর্থ অরবিটে কোনো স্পেস শাটলের বস্তু বহনের সক্ষমতার চেয়ে এসএলএস বেশি শক্তিশালী; কিন্তু অ্যাপোলোর স্যাটার্ন ভি রকেটের চাঁদে বস্তু বহনের সক্ষমতার চেয়ে কম। অবশ্য এসএলএসের আগামী সংস্করণ আরো শক্তিশালী হবে বলে নাসার ভাষ্য।

এবার রকেটটি যখন লঞ্চপ্যাড থেকে উৎক্ষেপণ হবে, তখন সাড়ে ৫৭ লাখ পাউন্ড বা ২৬ লাখ কেজির বেশি আতশবাজির মত আলো ছড়িয়ে পড়বে। রকেটের বুস্টার বা দুই পাশে সাদা সিলিন্ডার দুটি ১৭ তলার সমান উঁচু। এতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হবে পলিবুটাডিয়েন্স অ্যাক্রিলোনাইট্রাইল। প্রতি সেকেন্ডে এ রকেটে ছয় টন জ্বালানি খরচ হবে।

রকেটের কমলা রঙের মূল অংশটি ২১২ ফুট উঁচু। উৎক্ষেপণের দিন এই অংশের গায়ে পাঁচ লাখ ৩৭ হাজার গ্যালনের তরল হাইড্রোজেন এবং এক লাখ ৯৬ হাজার গ্যালনের তরল অক্সিজেন ট্যাংক আটকে দেওয়া হবে। ওই দুটো ট্যাংক রকেটের চার ইঞ্জিনে জ্বালানির যোগান দেবে।

উৎক্ষেপণের আট মিনিট ৫০ সেকেন্ডের মধ্যে ওরিয়ন ক্যাপসুলসহ এসএলএস রকেটের গতি হবে ঘণ্টায় ১৭ হাজার মাইল।

ওরিয়ন ক্যাপসুল কী?

রকেটের উপরের ভাগে বসানো রয়েছে সাদা রঙের ওরিয়ন ক্যাপসুল।

অরিয়নকে বানানোই হয়েছে পৃথিবীর অক্ষের বাইরে পাঠাতে; যেমন চাঁদ কিংবা মঙ্গল মিশনে।

ওরিয়নের বাইরের আবরণ বেশ চকচকে। একে বলা হচ্ছে আগামী প্রজন্মের তাপ নিরোধক। এই প্রযুক্তিতে মহাকাশের অতিরিক্ত তাপেও টিকে থাকতে পারবে ওরিয়ন। এই ক্যাপসুলে চড়ে চারজন নভোচারী ২১ দিনের মিশন পরিচালনা করতে পারবেন।

এর আগে একটি পরীক্ষামূলক মিশনে ২০১৪ সালে মহাকাশ ঘুরে এসেছে ওরিয়ন। এরপর থেকে বহু পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে এবারের মিশনের জন্য ওরিয়নকে প্রস্তুত করা হয়েছে।

মিশন আর্টেমিসের টুকিটাকি

১৯৬৯ সালে চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াত নভোচারী নেইল আর্মস্ট্রং এবং কিছুক্ষণের মধ্যে বাজ অলড্রিন চাঁদের পিঠে নেমে আর্মস্ট্রংয়ের সঙ্গে যোগ দেন। মহাশূন্যে মানব সভ্যতার চিহ্ন পৌঁছে দিয়ে মহাকাশ অভিযানের স্বর্ণযুগের সূচনা করে ওই মুহূর্ত।

অ্যাপোলোর মত মিশন আর্টেমিসের নামও গ্রিক পুরান থেকে নেওয়া। পুরান বলছে, অ্যাপোলোর জমজ বোন আর্টেমিস।

এসএলএস ও ওরিয়ন নিয়ে মিশন আর্টেমিস-১ শেষ হবে তখনই, যখনই বিজ্ঞানীরা দেখবেন, মহাকাশে ওরিয়ন ঠিক মত কাজ করছে এবং ভেতরে থাকা ম্যানিকুইন নিয়ে পৃথিবীতে নিরাপদে ফিরে আসতে পেরেছে।

মানুষ বহন করে মহাকাশে গেছে এমন যে কোনো মহাকাশযানের চেয়ে এই মিশনে রকেটে অনেক বেশি পথ পাড়ি দেবে। পৃথিবী থেকে তা হবে প্রায় দুই লাখ ৮০ হাজার মাইল।

সব মিলিয়ে মোট ১৩ লাখ মাইল ভ্রমণ করতে হবে; এর মধ্যে রয়েছে চাঁদের দিকে ছোটা, অক্ষে প্রবেশ করে বেশ কয়েকদিন চলা এবং তারপর পৃথিবীতে ফিরে আসা। এই ভ্রমণের সুবিশাল মানচিত্র রয়েছে, যা দেখতে বেশ জটিলই মনে হয়।

পরের মিশনে কী?

যদি এই আর্টেমিস-১ মিশন সফল হয়, তারপর আর্টেমিস-২ নিয়ে কাজ এগোবে। মিশন অ্যাপোলোর পর আর্টেমিসের পরের মিশনেই হয়ত মানুষ চাঁদ জয়ে যাবে আবার।

আর্টেমিস-৩ মিশনে নারী নভোচারী দিয়েই আবার চাঁদে নামার কথা ভাবছে নাসা। অগাস্টে চাঁদের দক্ষিণ পিঠে অবতরণের সম্ভাব্য স্থানগুলো ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি।