মিশন আর্টেমিস: রকেটে ফাটল ভাঁজ ফেলছে কপালে

রকেটের যে অংশ তরল হাইড্রোজেন ও তরল অক্সিজেন ট্যাংকের সঙ্গে যুক্ত, সেখানেই ধরা পড়েছে ওই ফাটল।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2022, 12:14 PM
Updated : 29 August 2022, 12:14 PM

নাসার বিজ্ঞানীদের জন্য মুহূর্তটি এখন দাঁত দিয়ে নখ কাটার মত টান টান উত্তেজনার; তাদের স্বপ্নের প্রজেক্ট মিশন আর্টেমিসের রকেটের ইন্টারট্যাংকে দেখা দিয়েছে ফাটল।

বিবিসি জানিয়েছে, রকেটের যে অংশ তরল হাইড্রোজেন ও তরল অক্সিজেন ট্যাংকের সঙ্গে যুক্ত, সেখানেই ধরা পড়েছে ওই ফাটল।

কেউ রকেট বিশেষজ্ঞ হোক বা না হোক, রকেট উৎক্ষেপণের সময় ঘনিয়ে এলে ‘ফাটল’ শব্দটি শুনতে রাজি হবেন না নিশ্চয়। নাসার প্রকৌশলীরা বলেছেন, ওই ক্রুটি তারা পরীক্ষা করে দেখছেন।

রকেটের চারটি বড় এরএস-২৫ ইঞ্জিনের একটিতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে কাজ করছে নাসার বিশেষজ্ঞ দল।

এর আগে স্পেস শাটল মিশন যুগেও নাসার প্রকৌশলীদের এরকম বহু সময় টেনশন নিয়ে লঞ্চপ্যাডে ত্রুটি সারাইয়ে কাটাতে হয়েছে। ১৯৮১ সালে উৎক্ষেপণ করা সেই মহাকাশযান ৩০ বছর পর্যন্ত সচল থেকে অবসরে যায়।

নাসার আর্টেমিস মিশনের দল এখন হাত জোড় করে রয়েছেন, যেন এসব ক্রুটি দ্রুতই সেরে যায় এবং তারা পরিকল্পনামত রকেট ছুড়তে পারেন।

অ্যাপোলো মিশনে চন্দ্রপিঠে অবতরণের ৫০ বছর পর আবারও মানুষকে চাঁদে নিয়ে যেতেই নাসার এই মিশন আর্টেমিস। এই অভিযানকে নাসার মঙ্গল গ্রহে অভিযানের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই মিশনের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে স্পেস লঞ্চ সিসটেম, যাকে সংক্ষেপে এসএলএস বলা হচ্ছে। এটাই এখন পর্যন্ত নাসার সবচেয়ে আধুনিক মহাকাশ যান।

সোমবার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্থানীয় সময় ৮টা ৩৩ মিনিট অর্থ্যাৎ বাংলাদেশ সময় সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৩ মিনিটে রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হবে।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে পৌঁছে রকেটটি একটি টেস্ট ক্যাপসুল ছুড়ে দেবে। এই টেস্ট ক্যাপসুলের নাম ওরিয়ন।

ওরিয়ন চাঁদে যাচ্ছে ছয় সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে একটি বড় অক্ষে এটি চাঁদের চারপাশে ঘুরবে। কাজ শেষে স্পেসক্রাফটটি পৃথিবীতে প্রশান্ত মহাসাগরে নেমে আসবে।

তবে এই মিশনে চাঁদে শুধু ‍ওরিয়ন যাচ্ছে, মানুষ নয়। ২০২৪ সালে চাঁদে মানুষ পাঠাতে চায় নাসা।

আগামী সপ্তাহেও রকেট উৎক্ষেপণের বেশ কয়েকটি সুযোগ রয়েছে নাসার হাতে। তবে এই মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র চাইছে, সোমবারের সুযোগ ব্যবহার করে দ্রুত রকেট উৎক্ষেপণ করতে।

  • ১৯৬৯ সালে চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াত নভোচারী নেইল আর্মস্ট্রং এবং কিছুক্ষণের মধ্যে বাজ অলড্রিন চাঁদের পিঠে নেমে আর্মস্ট্রংয়ের সঙ্গে যোগ দেন। মহাশূন্যে মানব সভ্যতার চিহ্ন পৌঁছে দিয়ে মহাকাশ অভিযানের স্বর্ণযুগের সূচনা করে ওই মুহূর্ত।

  • ৫০ বছর পর চাঁদকে আবারও নতুন করে ছুঁয়ে দেখতে চলেছে মানব জাতি। আর যারা অ্যাপোলো মিশনের সাক্ষী হতে পারেননি, আর্টেমিস মিশন তাদের প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত করবে।

  • নতুন এই মিশন একটু ভিন্ন রকম হবে। নাসা আগামীতে প্রথম নারী ও প্রথম ভিন্ন বর্ণের কাউকে চাঁদে পাঠাবে। এর পেছনে কারণ একটাই- মহাকাশ সবার জন্যই উন্মুক্ত।

  • চাঁদের পিঠে অবতরণ দিয়ে নাসা নতুন এক যুগের সূচনা করতে চাইছে আসলে। আগামীতে মঙ্গলের বুকে মানুষকে নিয়ে যেতে চায় নাসা। আর ওই অভিযান নিশ্চিতভাবে মানবজাতির ইতিহাসে আরেক বিরাট মাইলফলক হবে।

Also Read: আর্টেমিস: অর্ধ শতক পর নতুন চন্দ্রাভিযানের প্রহর গুনছে নাসা

Also Read: প্রথম আর্টেমিস মিশনে নভোচারীর বদলে কী পাঠাচ্ছে নাসা?

Also Read: আর্টেমিস ১-এর চতুর্থ ‘ড্রেস রিহার্সাল’ শুরু করল নাসা

Also Read: মেগা রকেটের ‘ড্রেস রিহার্সাল’ পেছালো নাসা

বছরের এই সময়ে ফ্লোরিডার আবহাওয়া বেশ নাটকীয় আচরণ করে। হুটহাট করেই বজ্রঝড় বয়ে যায় উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের আশপাশ দিয়ে। কিছুদিন আগে লঞ্চপ্যাডের বজ্রনিরোধক টাওয়ারেও বজ্রপাত হয়েছিল।

একটু সকাল সকাল আবহাওয়া শান্ত থাকে, আর সে কারণেই সোমবার সকালকে বেছে নেওয়া হয়েছে এ মিশন সূচনার জন্য।

আবহাওয়াবিদ মেলডি লোভিন বলেন, “আসলে ঠিক সকাল সাড়ে ৮টার পর ৮০ শতাংশ সুযোগ থাকবে এই মিশনের জন্য সুবিধাজনক আবহাওয়া পাওয়ার।”

রকেট উৎক্ষেপণের জন্য দুই ঘণ্টা সময় হাতে রেখেছে নাসা। যদি কোনো যান্ত্রিক ক্রুটি দেখা দেয় এর মধ্যে, তাহলে হয়ত এদিন উৎক্ষেপণের সম্ভাবনা ৬০ শতাংশে নেমে আসবে।

বিশেষ করে যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে রকেট ছোড়ার পরিকল্পনা স্থগিতই করতে হবে নাসাকে।