‘আমি বাবাকে দেখব’

দাফনের আগে এভাবে আকুতি করে সিদ্দিক বাজারে ভবন ধসে নিহত ইসাহাক মৃধার পাঁচ বছর বয়সী ছেলে আবরার জারিফ।

সাইদ মেমনবরিশাল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2023, 07:28 PM
Updated : 8 March 2023, 07:28 PM

‘আমাকে একটু বাবাকে দেখতে দাও, আমি বাবাকে একটু দেখব।’

দাফনের আগে এভাবে আকুতি করে পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজারে ভবন ধসে নিহত কাপড় ব্যবসায়ী ইসাহাক মৃধার পাঁচ বছর বয়সী ছেলে আবরার জারিফ।

বুধবার দুপুর ২টার দিকে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার লতা ইউনিয়নের চর সন্তোষপুর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয় তাকে।

দুই সন্তানের জনক ইসাহাক মৃধা ওই গ্রামের মৃত দুলাল মৃধার ছেলে।

ইসলামপুরের হাজী আহম্মেদ মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন নারায়ণগঞ্জের ঢাকেশ্বরী ২ নম্বর গলিতে।

শ্যামপুর ইব্রাহিম টেক্সটাইল এলাকায় মায়ের দোয়া ডাইং ফ্যাক্টরিও রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ভাই জহিরুল ইসলাম সজল।

সজল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শবেবরাতের জন্য একটু আগে দোকান বন্ধ করা হয়। বাসায় যাওয়ার জন্য ভাই ইসাহাক গুলিস্তান রওনা হয়েছিলেন। পথে দুর্ঘটনার শিকার হন।

“দুর্ঘটনার পর অজ্ঞাত পরিচয় এক লোক ভাবির কাছে ফোন দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যেতে বলেন। তখন ভাবি ভাইয়ের নম্বরে কল করলে অজ্ঞাত একজন ফোন রিসিভ করে দ্রুত যেতে বলেন।”

সজল বলেন, তারা গিয়ে দেখতে পেয়েছেন ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।  

সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ঢাকা জেলা প্রশাসক, মহানগর বিচারিক হাকিম ও পুলিশ কর্মকর্তারা সেখানে আদালত বসিয়ে বিনা ময়নাতদন্তে লাশ হস্তান্তর করেছেন। এ সময় দাফনের জন্য নগদ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

ফোন করা অজ্ঞাত ব্যক্তি মোবাইল ফোন সেট ও ভাইয়ের সাথে থাকা নগদ আট হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে সজল জানান।

লাশ নিয়ে আসার পর গোসল করা ও জানাজা নামাজ আদায় করে সকাল ৬টার দিকে ঢাকা থেকে ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে রওনা দেন।

বেলা ১২টার দিকে লাশ চর সন্তোষপুর গ্রামে নিয়ে আসা হয়। তখন লাশের পাশে গ্রামের অন্যান্য লোকসহ প্রতিবন্ধী বড় ছেলে ১৪ বছর বয়সী ইয়াসিন ও ৫ বছর বয়সী জারিফ ছিল।

বাবাকে এক নজর দেখতে চাইলেও কেউ তাকে দেখাতে নিয়ে যায়নি। কারণ দুর্ঘটনায় তার মুখমণ্ডল কাচের টুকরা বিদ্ধ হওয়ার ক্ষত ও আগুনে ঝলসানো ছিল। তাই সবাই তাকে নিবৃত্ত রাখার চেষ্টা করে।

শিশু জারিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “বাবার একসিডেন্ট হয়েছে। আমি বাবাকে একটু দেখতে চাই।”

তাকে কোনোভাবে শান্ত্বনা দেওয়া যাচ্ছিল না। তখন তার নানি নুরজাহান বেগম এসে শান্ত করেন।

নুরজাহান বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জারিফ বলছে তার বাবা তো নেই। তাকে কে জুতা কিনে দেবে।

জোহরের নামাজের পর মরদেহ দ্বিতীয় জানাজার জন্য একতা ডিগ্রি কলেজ মাঠে নেওয়া হয়। তবে সেখানে নেওয়ার পর একটি মসজিদের ইমাম ও ইসাহাক মৃধার ছোট ভাইয়ের অনুরোধে দ্বিতীয়বার জানাজা নামাজ হয়নি।

ইসাহাক মৃধার মামা শফিকুল ইসলাম ফরিদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইসাহাক মৃধারা চার ভাই। বাবা নেই। মা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। তাই প্রায়ই মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গ্রামে আসতেন। গ্রামের সবার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল।