গাইবান্ধায় দুপুর পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। এর মধ্যেই গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ নির্বাচনের ভোট দিয়েছেন ভোটাররা।
দিনভর তাপমাত্রার ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রগুলিতে ভোটারের উপস্থিতিও কমবেশি হতে দেখা গেছে। তবে ভোটের সুন্দর পরিবেশ আর নির্বিঘ্নে ইভিএমে ভোট দিতে পেরেই খুশি তারা।
বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সাঘাটা ও ফুলছড়ির ১৪৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়। নির্বাচনে বড় ধরনের কোনো গোলযোগের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
ভরতখালি বন্দর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে আসা শেফালি বেগম বলেন, এবার কেন্দ্রে এসে দ্রুত ভোট দিয়েছেন পছন্দের প্রার্থীকে। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে খুশিও তিনি।
এই কেন্দ্রের আরেক ভোটার আবদুল মান্নান বলেন, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার আগে ভয় লাগলেও পরে ভয় কেটে গেছে। একই সঙ্গে তিনি কেন্দ্র ও কেন্দ্রের বাহিরের পরিবেশ খুব ভাল বলে জানান।
এর আগে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের প্রকোপের কারণে ভোটাররা কেন্দ্রে আসছেন না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা। তবে দুপুরের পর থেকে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়বে বলেও জানিয়েছিলেন তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি আর বাড়েনি।
বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম দেখা গেছে। তবে কিছু সংখ্যক কেন্দ্রে ভোটারদের লাইনও ছিল। ফাঁকা কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনছার সদস্যদেরও অনেকটা অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।
ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে কম ভোটার উপস্থিতির চিত্র দেখা গেছে।
সকাল ৯টার দিকে কঞ্চিপাড়া এমএইউ একাডেমিক কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের কোনো লাইন দেখা যায়নি। পুরুষ ও মহিলা দুই থেকে চারজন ভোটার এসে ভোট দিতে দেখা গেছে।
এছাড়া কুকড়াহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও ভোটারদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। এ ভোটকেন্দ্রে দুই হাজার ৫০৫ জন ভোটারের মধ্যে সকাল ১১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ১১০টি ভোট।
এছাড়া ভরতখালি বন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোটারদের কোনো লাইন দেখা যায়নি। তবে কেন্দ্রের মধ্যে নারী ভোটারের ১৫ থেকে ২০ জনকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কৃষ্ণ চন্দ্র রায় জানান, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা তিন হাজার ৩৯। তবে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র পাঁচ শতাধিক ভোট।
তবে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে ভরতখালি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। এ কেন্দ্রে নারী ভোটারের উপস্থিতি কম থাকলেও পুরুষ ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
একই অবস্থা গোবিন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রেও। এ কেন্দ্রে পুরুষ ও নারী ভোটারদের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখা গেছে।
ভরতখালি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট প্রদান শেষে জমির আলী বলেন, “ভাবছিলাম ভোট দিতে এসে কোনো ঘটনা বা সমস্যায় পড়ি কি না। লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার পর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে খুবই ভাল লাগছে।”
এই কেন্দ্রে স্ত্রী আমেনা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দিতে আসেন ষাটোর্ধ্ব হাবিজার রহমান।
তিনি বলেন, “কেন্দ্র ও কেন্দ্রের বাহিরে কোনো সমস্যা নাই। পুলিশ আনছারসহ কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের সহযোগীতায় স্ত্রীকে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছি।”
উপ নির্বাচনে সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে ১৪৫টি কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটানিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম।
দুপুর দুইটা পর্যন্ত শতকরা পঁয়ত্রিশ ভাগ কাস্ট হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “তীব্র শীত ও শৈত্যপ্রবাহ এবং নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের লোকজন জীবন-জীবিকার কারণে বাইরে অবস্থান করায় ভোটার উপস্থিতি কম।”
তিনি আরও বলেন, “এ পর্যন্ত কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রগুলোতে ইভিএম মেশিনেও কোন ত্রুটি পাওয়া যায়নি।”