Published : 12 Mar 2023, 07:08 PM
পিরোজপুর শহরে এক কাপড়ের দোকানিকে মারধরসহ দোকানে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে একদল যুবকের বিরুদ্ধে যাদের ‘ছাত্রলীগ নামধারী’ বলছেন ব্যবসায়ীরা।
শনিবার দুপুরে শহরের কাপুড়িয়া পট্টির মুঈন গার্মেন্টসে এ হামলা হয় বলে অভিযোগ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে রোববার শহরের ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ রেখে আখড়াবাড়ি রোডে মানববন্ধন করেন এবং শহরে বিক্ষোভ করেন।
কাপড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে জেলা ব্যবসায়ী সমিতির ৫৬টি সংগঠন।
ব্যবসায়ীরা জানান, কাপড় কেনা নিয়ে কাপুড়িয়া পট্টির মুঈন গার্মেন্টসের ব্যবসায়ীর সঙ্গে ঝগড়ার জেরে শনিবার দুপুরে একদল যুবক হামলা চালায়। তারা দোকানের মালিক রেজওয়ান খান সুইটকে মারধরে আহত করে এবং দোকানের মালামাল লুটপাট করে।
তৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিবাদ ও জড়িতদের আটকের দাবিতে শহরের ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে কাপড় ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান বন্ধ করে প্রতিবাদ জানান।
এর ধারাবাহিকতায় রোববার জেলার ব্যবসায়ীরা বেলা ১১টা থেকে ১১টা ১০ মিনিট পর্যন্ত বিক্রি বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানান।
স্থানীয় কিছু যুবক ‘ছাত্রলীগের’ নাম করে বিভিন্ন সময় তাদের উপর হামলা চালিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে আসছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
ব্যবসায়ী রেজওয়ান খান সুইট বলেন, শনিবার সকালে তার দোকানে স্থানীয় কিছু ছেলে আসে কেনাকাটা করার জন্য। তাদের সঙ্গে দরদাম নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। পরে তারা লোকজন নিয়ে তার ওপর হামলা চালিয়ে দোকানপাট ভাঙচুর করে ক্যাশ থেকে প্রায় ৮৫ হাজার টাকা লুটপাটসহ তাকে মারধর করে।
এতে দোকানে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং তার থানায় জানিয়েছেন বলে রেজওয়ান সুইট জানান।
শহরের পাদুকা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আল আমিন সরকার বলেন, মাহিম চয়েজ, সু গ্যালারী, সিটি শপিং কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন দোকানে এর আগেও তারা হামলা চালিয়েছে।
“আমরা ব্যবসায়ীরা একতাবদ্ধভাবে বলা শুরু করলে প্রশাসন, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল কোনো কিছুই দেখব না। আমরা প্রশাসনকে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছি। যদি এর মধ্যে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হয় তবে আমরা কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য হব।”
ব্যবসায়ী জাহিদ হোসেন বলেন, পিরোজপুর ‘জেলা ছাত্রলীগের কিছু নামধারী সন্ত্রাসী’ আছে যারা বিভিন্ন সময় দোকানপাটে হামলা চালায়। চাঁদা না দিলেই তারা বিভিন্ন সময় হামলা করে।
“গতকালও একই কাজ করেছে তারা। আমরা সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করি। আমরা তো সন্ত্রাসী না, আমাদের ওপর কেন বারবার সন্ত্রাসী হামলা হবে বারবার। আমরা এর প্রতিবাদসহ সুষ্ঠু বিচার চাই। দ্রুত সময়ে এর সুষ্ঠু বিচার না হলে আমরা পরবর্তীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেব।”
পিরোজপুর পৌর কাউন্সিলর সাদুল্লাহ লিটন বলেন, “পিরোজপুরে ইদানীং কিছু মাদকাসক্ত ছেলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। দাম-দর করতে আসে। বনাবনি না হলে তারা সেগুলো নিয়েও যায়। তাতে বাধার সৃষ্টি করলে ঘটে হামলার ঘটনা।”
পিরোজপুর পৌরসভার কাউন্সিলর ও ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য সরদার জিয়াউল হাসান টিপু বলেন, বিগত দিনেও এমন করে অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিছু সন্ত্রাসীদের কারণে পিরোজপুরের ব্যবসায়ীরা শান্তিতে ব্যবসা করতে পারছে না। তারা ব্যবসায়ীদের মারধর করে চাঁদা চায়।
“প্রশাসনের কাছে বিনীত অনুরোধ, এই সন্ত্রাসীদের আপনারা প্রতিহত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।”
পিরোজপুর সদর থানার ওসি আ. জা. মো. মাসুদুজ্জামান বলেন, ব্যবসায়ীদের ওপর হামলার বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার মাহমুদ সজল বলেন, “যারা এ ঘটনায় জড়িত তারা জেলা ছাত্রলীগের কেউ না এবং তাদের কোনো পোস্ট-পজিশন নেই। হামলাকারীদের সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই।”