বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, এর মধ্যে যে ৪০০ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে তা মাত্র দুজনের দখলে ছিল।
Published : 02 Apr 2023, 09:51 PM
কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধ দখলকারীদের ‘ঢাকঢোল পিটিয়ে’ কিছু অংশ থেকে উচ্ছেদ করার এক মাসের মধ্যে নতুন করে স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। যেসব স্থানে উচ্ছেদ চালানো হয়নি সেখানেও স্থাপনা নির্মাণ করতে দেখা গেছে।
রোববার কস্তুরাঘাট এলাকা গিয়ে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই সেখানে ১০টির বেশি ঘর তৈরি করা হয়েছে।
২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ কক্সবাজার শহরের প্রাণকেন্দ্রের বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী কস্তুরাঘাট এলাকায় উচ্ছেদ চালিয়ে ৩০০ একর জমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা চার শতাধিক স্থাপনা গুড়িয়ে দেয় প্রশাসন।
এ সময় জেলা প্রশাসন জানিয়েছিল, এক যুগ আগে সরকার ঘোষিত নদী বন্দর বাস্তবায়নের জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে এ উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।
কিন্তু এক মাসের মাথায় আবার সেখানে স্থাপনা নির্মাণের ব্যাপারে জানতে চাইলে রোববার দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, “উচ্ছেদ হওয়া জমিতে আবারও দখলের খবর নানাভাবে শোনা যাচ্ছে। এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া হবে না। আবারও উচ্ছেদ অভিযান চলবে।”
আদালতের রায় মতে, নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নদীর সীমানা নির্ধারণে প্রশাসন কাজ করছে। এটা হয়ে গেলে পুরো নদীর তীর দখলমুক্ত করা হবে।”
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) দেয়া তথ্যমতে, বাঁকখালী নদীর দখলদার হিসেবে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, ১৩১টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে যে ৪০০ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে তা মাত্র দুজনের দখলে ছিল। তারাই সেটি বিভিন্ন জনকে বিক্রি করে দিয়েছিল।
কক্সবাজারে নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু, ‘সাংবাদিকদের উপর হামলা’
ফলে সব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ না করায় এখন আবার স্থাপনা নির্মাণ চলছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
কস্তুরাঘাট এলাকায় যেসব শ্রমিক ঘর তুলছেন তারা মালিকপক্ষের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
আমান উল্লাহ নামের এক শ্রমিক জানান, তাদের মাঝিই (শ্রমিকদের নেতা) জানেন কার ঘর তৈরি করা হচ্ছে।
তবে মাঝি তখন ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
হোসেন আহমদ নামের এক যুবক জানান, যে ঘরটি তৈরি হচ্ছে ওই জমির সব কাগজপত্র তার হাতে রয়েছে। তিনি জানতে পেরেছেন, যে মামলার কারণে এ উচ্ছেদ অভিযান চলেছিল তা খারিজ হয়ে গেছে। তাই নিজের জমিতে নিজেই ঘর করছেন।
মনির আহমদ নামের এক বৃদ্ধ জানান, তিনি শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার বাবুলের জমির পাহারাদার। ঘর করে জমি পাহারা দিচ্ছেন।
বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগের মোবাইল নম্বর চাইলে তিনি জানান, তার কাছে নেই।
রহমত উল্লাহ, রফিকুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন শ্রমিক জানান, তারা কার জমিতে ঘর করছেন তা জানেন না। তারা শুধু শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নয়ন শীল বলেন, ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার বিআইডব্লিউটিএকে বাঁকখালী নদী বন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করে।
প্রজ্ঞাপনে নদীর তীরের ৭২১ একর জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। পরে ওই সময়ের জেলা প্রশাসনের আপত্তির কারণে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর ভূমি পুনঃযৌথ জরিপ করা হয়।
জরিপে নির্ধারিত জমি হাই কোর্ট এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে রায় ঘোষণার ৬০ দিনের মধ্যে নদী তীরের ভূমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
নয়ন শীল বলেন, “নদী বন্দরের জমি বুঝিয়ে দিতে বারবার জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। নদী বন্দর প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় এত দখল হয়েছে।”
উচ্ছেদের এক মাসের মধ্যে আবারও দখল শুরু হওয়াকে প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কক্সবাজার জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “কিছু অংশ উচ্ছেদ করার পর ব্যাপক অংশ উচ্ছেদে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করায় আবারও দখল করা হচ্ছে। উচ্চ আদালতের রায়ে ১৮ কিলোমিটার নদীর তীর দখল উচ্ছেদ করতে বলা হয়েছে।”
প্রশাসনকে দ্রুত আদালতের রায় কার্যকর করার অনুরোধ জানান বাপা নেতা।