কক্সবাজারে নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু, ‘সাংবাদিকদের উপর হামলা’

অভিযানে বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী সীমানা পিলার দিয়ে দখল করা শতাধিক পিলার ও দুই শতাধিক ভবন ও ঘর ভাঙা হয়।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2023, 12:45 PM
Updated : 28 Feb 2023, 12:45 PM

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

এ সময় দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়।

অভিযান চলাকালে দুপুরে অবৈধ দখলকারীদের ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে অভিযানে পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগ, বিআইডব্লিউটিএসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তার উপস্থিততে অভিযান চলে।

এ সময় বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী সীমানা পিলার দিয়ে দখল করা শতাধিক পিলার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দুই শতাধিক ভবন ও ঘর ভাঙা হয়।

উপস্থিত সাংবাদিকদের অভিযোগ, উচ্ছেদ চলাকালে দুপুর ২টার পরপর হাতে লাঠি নিয়ে প্রভাবশালী এক দখলদারের নেতৃত্বে ১০-১২ জন যুবক সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায়।


সাংবাদিকরা বলেন, হঠাৎ হাতে লাঠি নিয়ে হামলাকারীরা গালি-গালাজ করতে করতে সাংবাদিক উপর হামলা চালায়। এ সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি শংকর বড়ুয়া রুমি, আজকের পত্রিকার মাইন উদ্দিন শাহেদ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের তৌফিকুল ইসলাম লিপুসহ কয়েকজন ক্যামেরা পার্সনকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে তারা।

পরে উপস্থিত পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এরপর ফিরে যাওয়ার ওই ব্যক্তি পিস্তল হাতে নিয়ে সাংবাদিকদের হুমকি দিতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন উপস্থিত কালেরকণ্ঠের বিশেষ প্রতিবেদক তোফায়েল আহমদ।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, উচ্ছেদ চলমান রয়েছে। থাকবে। এখানে অনেকভাবে উচ্ছেদ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। অনেকেই আইনজীবী এনে উচ্ছেদে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশে এ উচ্ছেদ। নদীর সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ পর্যন্ত অভিযান চলবে।

সাংবাদিকদের উপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।
কক্সবাজার শহরের প্রাণ হিসেবে পরিচিত বাঁকখালী নদীর তীরে দখলের মহোৎসব চলছে গত পাঁচ বছর ধরে। নদীর তীরে ছয়শ হেক্টর প্যারাবন নিধন করে একে একে চলছে স্থাপনা নিমার্ণের কাজ। শুধু দুই মাসের ব্যবধানে নদীর তীরের শত হেক্টর জমি দখলের পর চলছে স্থাপনা নির্মাণ। খুরুশকুলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য কস্তুরাঘাট পয়েন্টে বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে একটি সেতু।  এই সেতুর পাশাপাশি সংযোগ সড়ক তৈরি হওয়ায় সড়কের দুই পাশে প্যারাবন ধ্বংস করে নদী দখলের মহোৎসবে মেতে ওঠেছে প্রভাবশালী চক্র। একে এক দখলের মহোৎসব চললে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো আবু সুফিয়ান বলেন, এখানে একটি নদীবন্দর হওয়ার জন্য সরকারের প্রজ্ঞাপন রয়েছে। এর জন্য এ জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য হাই কোর্টের রায় রয়েছে। এর পরিপ্রক্ষিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়।

পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, দেরিতে হলেও বাঁকখালী নদী দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করায় প্রশাসন সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে অভিযানে পুরো জায়গা উদ্ধার করে নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় দখলদারচক্র সুযোগ নেবে এবং অভিযান নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি করবে।

 “কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাটের বদরমোকাম থেকে পেশকারপাড়া পর্যন্ত পাঁচটি দাগে নদী, খাল ও বালুচর শ্রেণির ১৪৬ একর বাঁকখালী নদীর সরকারি জমি গত দুই বছরে প্রকাশ্যে দখল করা হয়েছে।”

এসব জমির ১০০ একর প্যারাবন, জীববৈচিত্র্য ও পাখির আবাসস্থল ধ্বংস করা হয়েছে এবং এসব দখলে কস্তুরাঘাটের বদরমোকাম কেন্দ্রিক দুইটি এবং পেশকার পাড়া কেন্দ্রিক একটি চক্র জড়িত বলে রাশেদুল জানান।

পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, দেরিতে হলেও বাঁকখালী নদী দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করায় প্রশাসন সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে অভিযানে পুরো জায়গা উদ্ধার করে নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় দখলদারচক্র সুযোগ নেবে এবং অভিযান নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি করবে।

“কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাটের বদরমোকাম থেকে পেশকারপাড়া পর্যন্ত পাঁচটি দাগে নদী, খাল ও বালুচর শ্রেণির ১৪৬ একর বাঁকখালী নদীর সরকারি জমি গত দুই বছরে প্রকাশ্যে দখল করা হয়েছে।”

এসব জমির ১০০ একর প্যারাবন, জীববৈচিত্র্য ও পাখির আবাসস্থল ধ্বংস করা হয়েছে এবং এসব দখলে কস্তুরাঘাটের বদরমোকাম কেন্দ্রিক দুইটি এবং পেশকার পাড়া কেন্দ্রিক একটি চক্র জড়িত বলে রাশেদুল জানান।