নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে আতঙ্ক, ঝুঁকিপূর্ণদের ‘তালিকা হচ্ছে’

ওপারে মিয়ানমারের ভেতরে গোলাগুলি অব্যাহত থাকায় সীমান্ত এলাকার অনেকে আতঙ্কে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে শুরু করেছেন।  

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2022, 07:04 AM
Updated : 19 Sept 2022, 07:04 AM

মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি ও ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছে নাইক্ষ্যংছড়ির স্থানীয় প্রশাসন।

রোববার রাত ৯টার পর থেকে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ভেতরে আবারও গোলাগুলি শুরু হয়েছে, যা অব্যাহত রয়েছে। গত কিছুদিন ধরে এ পরিস্থিতি চলায় আতঙ্ক বিরাজ করছে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে।

ঘুমধুম সীমান্তের ৩৫টি স্থানীয় পরিবার এবং কোনারপাড়া শূন্যরেখার আশ্রয় ক্যাম্প থেকে আতঙ্কিত রোহিঙ্গাদের অনেকে ইতোমধ্যে সরে গেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। 

নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও সালমা ফেরদৌস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোববার সকাল থেকে পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু দুপুর গড়াতেই উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে মিয়ানমারের ভেতরে আবারো গোলাগুলি হয়।

“সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত গোলাগুলির আওয়াজ বন্ধ ছিল। কিন্তু রাত ৯টার পর থেকে মিয়ানমার অভ্যন্তরে আবারো মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। তবে আমাদের সীমান্তের ভেতরে নতুন করে আর কোনো গোলা এসে পড়েনি।”

Also Read: মিয়ানমার থেকে গোলা আসা বন্ধ না হলে জাতিসংঘে তুলব: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

Also Read: মিয়ানমারের গোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, হতাহতের খবর

Also Read: বান্দরবান সীমান্তে এবার পড়ল মিয়ানমারের যুদ্ধবিমানের গোলা: পুলিশ

উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, গত শুক্রবার মিয়ানমার থেকে আসা গোলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হতাহতের ঘটনার পর উখিয়া উপজেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে।

“ইউএনও সেখানে নির্দেশ দিয়েছেন, সীমান্তের শূন্যরেখার ৩০০ থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে তালিকা তৈরি করার। ইতোমধ্যে জরিপ করে ঝুঁকিতে থাকা পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। যদি সীমান্তে কোনো ধরনের বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তাহলে ঝুঁকিতে থাকা এসব পরিবারের লোকজনকে যাতে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া যায়।”

পালংখালী ইউনিয়নের ধামনখালী, পূর্ব জমিদার পাড়া ও পূর্ব বালুখালী সীমান্ত এলাকায় শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের তালিকা ইতোমধ্যে প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে বলে জানান গফুর উদ্দিন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও সালমা ফেরদৌস বলেন, “গত প্রায় এক মাস ধরে সীমান্তে উত্তেজনা চলছে, তাই এ নিয়ে প্রশাসন, বিজিবি, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিসহ সীমান্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসেছিলাম। সীমান্তের কাছাকাছি যারা বসবাস করেন, তাদের নিরাপত্তার জন্য কী করা যায়, বৈঠকে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”

প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের কীভাবে সরিয়ে আনা হবে, সেই পরিকল্পনার বিশদ না জানালেও ইউএনও বলেন, “বৈঠকে করণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

Also Read: মিয়ানমার থেকে গোলা উসকানিমূলক কি না, দেখা হচ্ছে: কাদের

Also Read: সীমান্তে গোলা: চতুর্থবার তলব মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে

Also Read: মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবিতেই আস্থা রাখছে সরকার

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তসলিম ইকবাল চৌধুরী বলেন, সীমান্তে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। চলমান এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার বিষয়েও উদ্বেগ রয়েছে। আতঙ্কে অনেকে বাড়ি ঘর ছেড়ে অন্যত্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

“সীমান্তে ঝুঁকিতে থাকা অন্তত পাঁচশ পরিবারকে চিহ্নিত করে সরিয়ে নিতে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

গত অগাস্টের মাঝামাঝি সময়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাখাইনদের সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর নতুন করে সংঘাত শুরু হয়।

শুরুর দিকে বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু, কোনার পাড়া, উত্তর পাড়া ও বাইশফাঁড়িসহ বিভিন্ন সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের গোলাগুলির খবর আসছিল। পরে পুরো নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মিয়ানমার সীমান্তজুড়ে তা ছড়িয়ে পড়ে।

ওই এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই দিনে ও রাতে থেমে থেমে গোলাগুলি চলছে। মাঝে মধ্যে হেলিকপ্টার ও জেট ফাইটার থেকেও ছোড়া হচ্ছে গোলা।

গত শুক্রবার রাতে মিয়ানমার থেকে আসা গোলা সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরিত হলে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন। ওইদিন সকালেই ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে ‘মাইন’ বিস্ফোরণে এক বাংলাদেশি যুবকের পা উড়ে যায়।

এর আগে গত ২৮ অগাস্ট দুপুরে বান্দরবানের ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে দুটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়ে। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টারে গোলা বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে এসে পড়ে।

মিয়ানমার থেকে গোলা এসে পড়া এবং হতাহতের ঘটনায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে চার দফা তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের তরফ থেকে এসব ঘটনার জন্য আরাকান আর্মিকে দায়ী করা হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে সীমান্তে বিজিবিকে সতর্কাবস্থায় রাখার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তবে সীমান্তে এখনই সেনা পাঠানো হচ্ছে না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, “আমাদের বর্ডার গার্ড যথেষ্ট শক্তিশালী। তাদের মনোবল যথেষ্ট আছে। তারা আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত।”