গোপালগঞ্জে কবি সুকান্তের পৈতৃক ভিটায় জমে উঠেছে মেলা

মেলায় প্রতিদিন সুকান্ত মঞ্চে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা পরিবেশন করেছেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2023, 07:34 AM
Updated : 3 March 2023, 07:34 AM

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় জমে উঠেছে ‘সুকান্ত মেলা’। পাঁচ দিনব্যাপী এই মেলাকে ঘিরে নবরূপে সেজেছে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পৈতৃক ভিটা ও আশপাশের চত্বর, বইছে উৎসবের আমেজ।

বুধবার রাতে কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের উনশিয়া গ্রামে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে এ মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহাবুবুল আলম। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের যৌথভাবে আয়োজিত এ মেলা চলবে রোববার পর্যন্ত।

এ মেলা ঘিরে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, এ মেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সবার মাঝে কিশোর বিপ্লবী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের আসাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে পড়বে এমনটিই প্রত্যাশা সাংস্কৃতিক প্রেমীদের।

জানা গেছে, সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্মদিন ১৫ অগাস্ট, কিন্তু অগাস্ট বাঙালি জাতির শোকের মাস। তাই মার্চের প্রথম সপ্তাহে কবির পৈত্রিক ভিটায় সুকান্ত মেলার আয়োজন করা হয়।

এ বছর মেলা দেখতে গোপালগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে এসেছেন নানা বয়সের মানুষ। কবি, ভক্ত, সাংস্কৃতিক কর্মী, এলাকাবাসী ও সর্বস্তরের মানুষ সুকান্তের পৈত্রিক ভিটায় উপস্থিত হয়ে মেলাকে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন।

মেলা উপলক্ষে বসেছে বইয়ের স্টল। সেগুলোতে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ছাড়াও বিভিন্ন কবির লেখা বই স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া খাবার, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন দোকানও বসেছে মেলায়। 

মেলায় প্রতিদিন সুকান্ত মঞ্চে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা পরিবেশন করেছেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

কোটালীপাড়ার জাহিদুল ইসলাম বলেন, “কবি সুকান্ত মেলা হচ্ছে শুনে দেখতে এসেছি। দেখে খুব ভাল লাগেছে। তবে শুধু মেলাকেন্দ্রিক না হয়ে কবির পৈত্রিক ভিটা ঘিরে এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছি।“

গোপালগঞ্জে থেকে আসা প্রীতিলতা বলেন, “মেলায় কয়েকটি বইয়ের স্টল বসেছে। তবে তার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম; বইয়ের সংখ্যাও কম। আমরা চাই মেলায় আরও বেশি বইয়ের স্টল দেওয়া হোক আর বইয়ের সংখ্যাও বাড়ানো হোক।”

তবে মেলার সার্বিক সব কিছু্ই ভাল হয়েছে বলে জানান এই নারী।

কবি ও আবৃত্তিশিল্পী প্রদ্যোৎ রায় বলেছেন, “যুগাবতার হয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম পাললিক ভূখণ্ড আমাদের বাংলাদেশে যত মহামানব এসেছেন, কবি সুকান্ত তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি কেবল একজন কবিই নন, তিনি একজন অনন্য ত্রাতা। তিনি নিপীড়িত মানবতার মুক্তির জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছেন।”

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, “কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের আদর্শকে বর্তমান যুব সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আশা করি, এর মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও কবিকে আগামী প্রজন্মের কাছে আমরা তুলে ধরতে পারব।”

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, “দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখানে এসে কিশোর কবির বাড়ির পর্যবেক্ষণ করতে পারে সেজন্য পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। যাতে আগতরা কবি সুকান্ত সম্পর্কে জানতে পারে।”

এ মেলাকে আরো প্রাণবন্ত করতে আরো নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়ে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, “আমরা শুধু মেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। যশোরের মধু মেলার মত সুকান্ত মেলাকেও ওই রূপে নিতে চাই।

“এ মেলার অংশ হিসাবে কবির সাহিত্য সম্ভার নিয়েও একটি বই মেলা করা হবে। সুকান্ত ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমরা সুকান্ত পদক দেওয়াসহ সাত দিনের মেলা চালু করবো।”

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯২৬ সালের ১৫ অগাস্ট কলকাতার কালীঘাটের মহিমা হালদার স্ট্রিটে মামা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নিবারণ ভট্টাচার্য ও মা সুনীতি দেবী। নিবারণ ভট্টাচার্য দেশ বিভাগ ও সুকান্তের জন্মের অনেক আগেই কোটালীপাড়ার ঊনশিয়া গ্রামের ভিটেমাটি ফেলে পরিবার পরিজন নিয়ে কলকাতা চলে যান। 

১৯৪৭ সালের ১৩ মে মাত্র ২১ বছর বয়সে মৃত্যুর আগে কবির প্রতিটি কবিতায় অনাচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। ছাড়পত্র, ঘুম নেই, পূর্বাভাস, অভিযান, হরতাল-তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।