নারায়ণগঞ্জের বন্দরে জমি দখল নিতে হামলা ও গুলি চালিয়ে চারজনকে আহত করার ঘটনায় মামলা হয়েছে৷ এ ঘটনায় পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বন্দর থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, বৃহস্পতিবার রাতে গুলিবিদ্ধ মঈনুল হক পারভেজের ছোটভাই তানভীর আহমেদ বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ২৫/৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন৷
গ্রেপ্তারদের মধ্যে চারজন এজাহারভুক্ত রয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীম (৬০), ঢাকার আদাবরের নবীনগর হাউজিং সোসাইটির সেকান্দার মিয়ার ছেলে নূর মোহাম্মদ (৫৫), নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের শাহ্জাদার ছেলে রায়হান জাদা রবি (৪৫), রূপগঞ্জের ভুলতার মোসলেম উদ্দিনের ছেলে মামুন (৪৮), বন্দরের চুনাভূরার হাবিবের ছেলে মনির হোসেন মনা (৫২), খানবাড়ির মৃত জুলমত আলীর ছেলে কবির (৫৫), নারায়ণগঞ্জ সদরের আমির হোসেন (৩৮), উৎসব (৪০), মুকিত (৪৫), মুহিদ (৪০) ও পাঠান রনি (৪২)৷
ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, গ্রেপ্তার ছয়জনের মধ্যে এজাহারনামীয় রয়েছেন চারজন। এরা হলেন রায়হান জাদা রবি (৪৫), রূপগঞ্জের ভুলতার মোসলেম উদ্দিনের ছেলে মামুন (৪৮), বন্দরের চুনাভূরার হাবিবের ছেলে মনির হোসেন মনা (৫২), খানবাড়ির মৃত জুলমত আলীর ছেলে কবির (৫৫)।
এ ছাড়া সন্দেহভাজন হিসেবে সিয়াম ও রনি নামের দুজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
তিনি বলেন, “জমি সংক্রান্ত বিরোধে ওই ঘটনা ঘটেছে৷ এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের করা মামলায় গ্রেপ্তার ছয়জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে৷ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে৷”
মামলার এজাহারে বলা হয়, বন্দর উপজেলার ফরাজিকান্দা এলাকার ৬৬ শতাংশ পৈত্রিক জমি নিয়ে আলী হায়দার শামীম, নূর মোহাম্মদ ও রায়হান জাদা রবির মধ্যে বিরোধ রয়েছে৷ এ নিয়ে বাদীর বড়ভাই মঈনুল হক পারভেজ আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেছেন৷
অভিযোগ করা হয়, গত ১৫ মার্চ রাত ১টার সময় আলী হায়দার শামীম তার হোন্ডা বাহিনী নিয়ে বাদীর বাড়ি গিয়ে হুমকি দেন৷ পরদিন [১৬ মার্চ] বেলা সাড়ে ১১টাক দিকে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে জমি দখল করতে আসে৷ পরে ৯৯৯ এ কল দিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে আসামিরা হামলা চালায়৷
হামলায় বাদী তানভীরের বড়ভাই মঈনুল হক পারভেজ গুলিবিদ্ধ হন৷ আহত হন তার ভাবি আবিদা সুলতানা সোমাসহ আরও কয়েকজন৷
গত ১৬ মার্চ দুপুর সোয়া একটার দিকে বন্দর উপজেলার ফরাজিকান্দা এলাকায় তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর পাশের একটি জমি নিয়ে বিরোধে গুলি চালানোর মতো ঘটনা ঘটে৷ এ ঘটনায় একজনের পায়ে গুলিবিদ্ধসহ ৪ জন আহত হন৷
ঘটনার বিবরণে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীমের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন হামলায় অংশ নেয়। তারা অন্তত ১৫-২০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
গোলাগুলির ঘটনার পর এলাকাবাসী ২টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। মোটরসাইকেলগুলো হামলাকারীদের বলে জানান স্থানীয়রা।
ঘটনার পর বুধবার বিকালে গুলিবিদ্ধ পারভেজের চাচা আবু তালেব বলেন, তার ভাই প্রয়াত রাইসুল হক ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। সেতুর উত্তর পাশের জমিতে এখন ফরাজিকান্দা বাজার। এই জমিটির মালিক ছিলেন হাজী জহুরা বেগম। নিঃসন্তান এই নারী তার [আবু তালেব] দুই সন্তানের নামে জমি লিখে দেন। তাদের কাছ থেকে জমিটি ৩০-৪০ বছর আগে কেনেন রাইসুল হক।
“এ জমিটি ক্রয়সূত্রে মালিক বলে দাবি করছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান ও তার মেয়ে। তাদের পক্ষ হয়ে আজমেরী ওসমানের সহযোগী আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীম সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জমিটি দখল নিতে আসেন।”
আবু তালেব বলেন, ক্রয় করার সময় জমির পরিমাণ ৬৬ শতাংশ থাকলেও পরে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু ও সড়ক নির্মাণের জন্য সাড়ে ৯ শতাংশ অধিগ্রহণ করা হয়। বাকি সাড়ে ৫৭ শতাংশ জমি দীর্ঘদিন ধরে রাইসুল হকের পরিবার ভোগদখল করে আসছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বন্দরের ওই জমির ব্যাপারে আমি এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। আমাদের নামে আছে কিনা খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। আর জমি নিয়ে কোনো মারামারি হয়েছে কিনা তাও জানি না।”