পুলিশ বলছে, মাদক উদ্ধারের অভিযানে গেলে পুলিশ দেখে ভয়ে ওই ব্যক্তির ‘হার্ট অ্যাটাকে’ মৃত্যু হয়েছে।
Published : 07 Nov 2023, 12:04 PM
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় ‘পুলিশের মারধরের পর’ এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
সোমবার বিকালে উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের বুরুমদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। যদিও পুলিশ বলছে, মারধরে নয়, মাদক উদ্ধারের অভিযানে ভয়ে ‘হার্ট অ্যাটাকে’ তার মৃত্যু হয়েছে।
নুরুল ইসলাম নামের ওই ব্যক্তি পোল্ট্রি ব্যবসা করতেন। তার মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। ময়নাতদ্ন্ত ছাড়াই পরিবার লাশ দাফন করেছে।
স্বজনদের ভাষ্য, সোনারগাঁ তালতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই ইলিয়াস আহমেদ ‘সাধারণ পোশাকে’ এক কনস্টেবলকে নিয়ে নুরুলের বাড়িতে যান। তার কাছে এক লাখ টাকা ‘চাঁদা’ দাবি করেন। টাকা না দিলে ‘মামলায় ফাঁসানোর’ হুমকি দেন।
নুরুলের মেয়ে মিথিলা আক্তার বলেন, “আমরা ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজিও হয়েছিলাম৷ কিন্তু তাতে মানেননি এএসআই ইলিয়াস৷ উনি আমার বাবাকে হাতকড়া পরিয়ে বাড়ি থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে নিয়ে যেতে থাকেন। আমার বাবা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি হয়।
“এরপর পুলিশ আমার বাবাকে কিল-ঘুষি ও লাঠি দিয়ে মারধর করে। একপর্যায়ে বাবা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তারা সেখান থেকে চলে যায়।”
ওই ঘটনার পর নুরুলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান মিথিলা।
পরিবারের সদস্যরা বলছেন, নুরুল হৃদরোগেও ভুগছিলেন৷ বছর তিনেক আগে তার ‘ওপেন হার্ট’ সার্জারি করা হয়।
মিথিলা বলেন, “বাবাকে নিয়ে যাওয়ার সময় ইনহেলার ও পানি চেয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ তা নিতে দেয়নি। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।”
এলাকাবাসী জানায়, মৃত্যুর খবরে ওই পুলিশ সদস্যরা আবারও নুরুলের বাড়িতে গেলে স্বজনরা তাদের আটকে রাখেন। পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ সার্কেল) শেখ বিল্লাল হোসেন ও সোনারগাঁ থানার ওসি মাহবুব আলম আরও পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তখন পুলিশের ওপর চড়াও হয় স্থানীয়রা।
খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকাও ঘটনাস্থলে যান বলে জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির জানান৷
স্বজনদের বরাতে চেয়ারম্যান হুমায়ুন বলেন, “গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ তাকে কিল-ঘুষি মারে৷ তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয়৷ যেহেতু সে হার্টের রোগী ছিল এ কারণে এসব সহ্য করতে পারেনি৷”
তবে তালতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ সাইফুল ইসলামের দাবি, মাদক সংক্রান্ত গোপন খবরে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়।
“পুলিশ মাদক উদ্ধারের জন্য তার বাড়িতে গিয়েছিল। কিছুই না পেয়ে তারা স্থান ত্যাগ করে। হৃদরোগী হওয়ায় পুলিশের ভয়ে তার মৃত্যু হতে পারে।”
‘সাদা পোশাকে’ অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, “সাদা পোশাকে ছিলেন কিনা আমি নিশ্চিত নই৷ তবে কখনও কখনও প্রয়োজনে সাদা পোশাকে পুলিশ অভিযান চালায়।”
ব্যবসায়ী নুরুলের বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত কোনো মামলা আছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি এ স্টেশনে নতুন৷ বিস্তারিত জেনে বলতে পারব।”
বিষয়টি নিয়ে সোনারগাঁ থানার ওসির মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।