আগের দুটি মেয়ে থাকায় ‘লোকলজ্জার ভয়ে’ তৃতীয় মেয়েটিকে জন্মের পর হাসপাতালে ফেলে গিয়েছিলেন ওই নারী।
Published : 27 Jan 2024, 11:20 AM
আগে দু’টি কন্যা সন্তান হওয়ায় স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কোনো সমস্যা না থাকলেও কটুকথা শুনাতেন প্রতিবেশীরাসহ আশেপাশের মানুষ। তৃতীয়বারও মেয়ে জন্ম নেওয়ায় তাই নবজাতক ‘পুষ্প’কে হাসপাতালে রেখেই চলে গিয়েছিলেন তার মা পাপিয়া খাতুন।
এসব ঘটনা ‘পুষ্প’র বাবা কিংবা তার বাড়ির কেউ জানতেন না। তবে খবর জানাজানি হওয়ায় তারা ছুটে আসেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে, সঙ্গে আসেন পাপিয়াও; নিজের ভুল বুঝতে পেরে কোলে তুলে নেন মেয়েকে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুষ্প এবং তার মা দু’জনই অসুস্থ। তাই তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন জানান, পুষ্পর মা এখনও স্বাভাবিক নন। তাই শিশুটিকে তার বাবার হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সন্তানসম্ভবা ২৫ বছর বয়সী পাপিয়া। ওই রাতেই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি।
এরপর তাকে গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে গাইনি ওয়ার্ডের এক নারীর কাছে নবজাতককে রেখে পাপিয়া ও তার সঙ্গে থাকা নারী হাসপাতাল থেকে চলে যান।
দীর্ঘসময়েও তারা ফিরে না আসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি চুয়াডাঙ্গা সদর থানাকে জানায়। জানাজানি হলে নবজাতককে দেখতে আসতে থাকেন অনেকেই। তাদের কেউ কেউ শিশুটিকে নিজের সন্তান পরিচয়ে বড় করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা-তুজ -জোহরা হাসপাতালে গিয়ে নবজাতককে দেখে আসেন। এসময় তিনি নবজাতকের নাম রাখেন ‘পুষ্প’।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ডিউটি অফিসার এস আই হাসানুজ্জামান জানান, পুষ্পর মা পাপিয়া হাসপাতালে ভর্তির সময় স্বামীর নাম সঠিক বললেও গ্রামের নাম ও থানা কিছুটা ভুল বলেছিলেন। এ কারণে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
“তিনি বলেছিলেন তাদের বাড়ি আলমডাঙ্গা উপজেলার কেষ্টপুর গ্রামে। প্রকৃতপক্ষে তাদের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিহি কেষ্টপুর গ্রামে।”
পরে বিভিন্নভাবে পরিবারের লোকজন জানার পর শুক্রবার রাতেই তারা সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন।
পুষ্পর দাদা সিরাজুল ইসলাম বলেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় কাছে চলে আসায় পাপিয়া তার বাবার বাড়িতে থাকছিলেন। তিনি গর্ভের মেয়ে সন্তানের কথা গোপন করেছিলেন। এমনকি সন্তান জন্মের পর হাসপাতাল ও চিকিৎসকের নামও ভুল জানিয়েছিলেন।
“পাপিয়া আমাদের কাছে সত্য গোপন করেছিল। বলেছিল, তার মৃত সন্তান হয়েছিল বলে জানিয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবকিছু জানতে পেরে আমরা হাসপাতালে এসেছি।”
পুষ্পর বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, কন্যা সন্তান নিয়ে তার কোনো দুঃখ তো নেইই, বরং সৃষ্টিকর্তার ‘উপহার’ হিসেবে মেয়ে হওয়ায় তারা বরং আনন্দিত।
পুষ্পর মা পাপিয়া খাতুন বলেন, আগের দুটি মেয়ে থাকায় আশপাশের লোকজন অনেক কথা বলত। তাই আবারও মেয়ে হওয়ায় লোকলজ্জায় তিনি নবজাতককে হাসপাতালে রেখে চলে যান।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, বাবার হেফাজতে পুষ্পকে তার মায়ের কাছে দেওয়া হয়েছে। তবে, জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যখন বলবেন তখনই পুষ্পকে নিয়ে হাজির থাকতে হবে।
“এ সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি লিখিত দিয়ে পুষ্পকে নিজেদের হেফাজতে নিতে পারবেন। তবে, নবজাতকটিও অসুস্থ। তাকে আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হবে।”
পুরানো খবর