মহিষগুলো নিলামে কেনার ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন ওই খামারি।
Published : 24 Sep 2022, 09:22 PM
রাজশাহীর এক কৃষক দাবি করেছেন, তার খামার থেকে পদ্মা নদী দিয়ে ভেসে যাওয়া ১৫টি মহিষ তিনি নিলামে কিনছেন। ‘মালিকানার দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে না পরায়’ তিনি সেগুলো কিনতে বাধ্য হয়েছেন।
মহিষগুলো উদ্ধার করার পর বিজিবি নিলামের জন্য রাজশাহী কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। গত বুধবার দুই দফায় রাজশাহী মহানগরীর দাসপুকুরের শুল্ক গুদামে ১৫টি মহিষ প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি হয়।
গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের নীলবোনা গ্রামের কৃষক মো. সেন্টু মিয়া ১৫টি মহিষ সাড়ে ১৩ লাখ টাকায় কিনে নেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মহিষের মালিকানার ব্যাপারে সেন্টুকে ‘প্রত্যয়ন পত্র’ দিলেও শুল্ক বিভাগ বলছে, খামারি তার দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। তাই মহিষগুলো নিলামে বিক্রি করা হয়েছে।
সেন্টু জানান, পদ্মার চরে বাথানে তিনি ২১টি মহিষ পালন করেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে ওই বাথান থেকেই নদীতে নেমে ভেসে যায় তার ১৬টি মহিষ। এর মধ্যে ১৪টি গাভি এবং যার নয়টিই গর্ভবতী। পরের দিন বিজিবি মহিষগুলো উদ্ধার করে।
তিনি জানান, সীমান্ত এলাকা হওয়াতে কার বাড়িতে কয়টি গরু-মহিষ আছে তার হিসাব রাখে বিজিবি; দুটি খাতায় তা লিখে রাখা হয়। একটি খাতা থাকে মালিকের কাছে, অন্যটি বিজিবির স্থানীয় ক্যাম্পে। গরু-মহিষের হিসাব ক্যাম্প কমান্ডার লিখে রাখেন তার স্বাক্ষরসহ। সেন্টুর খাতার ক্রমিক নম্বর-২৯। এই খাতায় তার ২১টি মহিষ থাকার হিসাব আছে।
১৬টি মহিষ হারিয়ে যাওয়ার পর বিজিবি ক্যাম্পকে জানিয়েই সেন্টু খুঁজতে বেরিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে গোদাগাড়ীর প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়।
সেন্টু বলেন, ৯ সেপ্টেম্বর খবর পান, রাজশাহীর চারঘাটের ইউসুফপুর বিজিবি ক্যাম্প কিছু মহিষ উদ্ধার করেছে। তিনি সেখানে গিয়ে মালিকানা দাবি করেন; কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি। একই দিন দুপুরে বাঘার আলাইপুর বিজিবি ক্যাম্পে আরও কিছু মহিষ উদ্ধারের খবর পেয়ে তিনি সেখানেও যান। কিন্তু সেখান থেকেও তা আমলে নেওয়া হয়নি।
দুই ক্যাম্প থেকে মহিষগুলো বিজিবির ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে নেওয়া হয়। এরপর নিলামে বিক্রির জন্য বিজিবি সেগুলো রাজশাহী কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের গুদামে পাঠায়। সেন্টু সেখানে গিয়েও মালিকানা দাবি করে মহিষগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য লিখিত আবেদন করেন।
মহিষগুলোর মালিক যে সেন্টু এ ব্যাপারে দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল একটি প্রত্যয়ন পত্রও দেন। এরপর শুল্ক বিভাগ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার হাসনাইন মাহমুদ; সদস্য সচিব সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহাফুল ইসলাম। কমিটির আরও সদস্য ছিলেন- বিজিবির রাজশাহীর সহকারী পরিচালক নজরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার কৌশিক আহমেদ ও কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা ছাবেদুর রহমান।
কমিটি সেন্টুর মালিকানার প্রমাণ পায়নি। পরে হাসনাইন মাহমুদ ও কৌশিক আহমেদের উপস্থিতিতে বুধবার দুই দফায় রাজশাহী মহানগরীর দাসপুকুরের শুল্ক গুদামে ১৫টি মহিষ প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি হয়।
প্রথমে সাতটি মহিষ নিলাম করা হয়। সেখানে একটি পক্ষ সেগুলো কিনে নেন। পরে তাদেরকে কিছু লাভ দিয়ে সেন্টু আবার সেগুলো কিনে নেন।
দ্বিতীয় দফায় সেন্টু নিজেই নিলামে অংশ নিয়ে মহিষ কেনেন। ১৫টি মহিষ কিনতে সেন্টুকে গুনতে হয় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা। তবে হারিয়ে যাওয়া ১৬টি মহিষ উদ্ধার করা হলেও একটি নিলাম দেওয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ তুলেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিজিবি রাজশাহী-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাব্বির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শনিবার বলেন, “সীমান্ত এলাকায় আমরা মহিষগুলো পেয়েছি। যেহেতু উদ্ধার হওয়া মহিষের গায়ে কোনো টোকেন ছিল না তাই আমরা এর মালিকানা নিশ্চিত হতে পারিনি। পরে আমরা নিয়ম অনুযায়ী, ১৫টি মহিষ শুল্ক বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছি।”
“শুল্ক বিভাগ এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তারা তদন্ত করেছে। তারপর তারা সেগুলো নিলামে তুলেছেন।”
খামারি সেন্টুর মহিষ নিলামে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট রাজশাহী কার্যালয়ের যুগ্ম কমিশনার, তদন্ত ও নিলাম কমিটির আহ্বায়ক হাসনাইন মাহমুদ।
তিনি বলেন, “সুজন আলী নামের আরও এক ব্যক্তি সাতটি মহিষের মালিকানা দাবি করেছিলেন। কমিটির মাধ্যমে তদন্তে দেখা গেছে, মহিষগুলো সুজন আলী বা সেন্টু, কারও নয়। তাই নিলামে বিক্রি করা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “সেন্টু যে রেজিস্টার বলে মহিষগুলো নিজের দাবি করেছেন, সেই রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে বিজিবির কাছে সংরক্ষিত রেজিস্টারের মিল পাওয়া যায়নি। একটি দলে অনেক কৃষকের মহিষ থাকে। হারানো মহিষগুলো একজনেরই হবে, এটা হতে পারে না।”
দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, “নিজের মহিষ খামারিকে আবার টাকা দিয়ে কিনতে হলো। এর চেয়ে দুঃখের আর কিছু হতে পারে না। এ তদন্ত সুষ্ঠু হয়নি।”
সিআইডি দিয়ে তদন্তের দাবি জানান এ চেয়ারম্যান। সুষ্ঠু তদন্ত হলে খামারি সেন্টু ক্ষতিপূরণ পাবেন বলে তিনি মনে করেন।