গ্রামের বাড়িতে দাফন হলো শিক্ষক দম্পতির, মামলা হয়নি ২৪ ঘণ্টায়

পুলিশ বলছে, শুক্রবার দুপুরের পর পরিবার মামলা করবে বলে জানিয়েছে।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2022, 06:37 AM
Updated : 19 August 2022, 06:37 AM

গাজীপুরে প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার শিক্ষক দম্পতিকে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। তবে এ ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরও মামলা হয়নি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটনের গাছা থানার ওসি নন্দলাল চৌধুরী জানান, জেলার শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার বিকালে জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার ওরফে জলির লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

পরে রাতেই গাজীপুরে তাদের জানাজা শেষে ত্রিশাল উপজেলার দঁড়িকাঁঠাল গ্রামে বাবার কবরের পাশে জিয়াউর ও তার স্ত্রীকে দাফন করা হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে গাজীপুর নগরীর গাছা থানার দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক এলাকায় ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার থেকে এ দম্পতির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জিয়াউর (৫১) গাজীপুরের টঙ্গীর শহিদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং তার স্ত্রী ৩৫ বছর বয়সী জলি টঙ্গীর আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

Also Read: গাজীপুরে প্রাইভেট কারের ভেতর শিক্ষক দম্পতির লাশ

Also Read: গাজীপুরে প্রাইভেটকারে শিক্ষক দম্পতির লাশ: স্বজনরা বলছে, হত্যা

Also Read: গাড়িতে শিক্ষক দম্পতির লাশ: কিডনি-ফুসফুসে ‘জমাট রক্ত’

এদিকে এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলে ওই দম্পতির পরিবার থেকে দাবি করা হলেও ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও কোনো মামলা করেননি তারা।

বৃহস্পতিবার বিকালে জিয়াউরের বড় ভাই মো. রিপন সাংবাদিকদের বলেন, “এ হত্যাকাণ্ডটি পুরোই পরিকল্পিত। আমার ভাই ও তার স্ত্রীর সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন কিছুই খোয়া যায়নি। ঘটনাটি যদি পরিকল্পিত না-ই হতো তাহলে টাকা, স্বর্ণ, মোবাইল ও গাড়ি নিয়ে যেতো। তার কিছুই তারা নেয়নি। ”

মামলা কেন হয়নি জানতে চাইলে ওসি নন্দলাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত মামলা দায়ের করা হয়নি। তারা এখনও দাফনসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত আছেন। শুক্রবার বাদ জুম্মা তারা মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।

এছাড়া শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর কোনো ক্লুও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি জানিয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলছেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা সম্ভব হবে। তবে এরই মধ্যে তারা তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শাফি মোহাইমেন বলেন, “দুইজনের ফুসফুসে ও কিডনিতে জমাট রক্ত পাওয়া গেছে। এটা খাবারে বিষক্রিয়া বা অন্য কারণেও হতে পারে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।”

তাদের শরীরের বিভিন্ন নমুনা ঢাকায় সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে বলে জানান এ চিকিৎসক।

বুধবার সকালে কামারজুরি এলাকার নিজ বাড়ি থেকে প্রাইভেটকার নিয়ে স্কুলের উদ্দেশে বের হন ওই শিক্ষক দম্পতি। গাড়িটি জিয়াউর নিজেই চালাতেন। স্কুল শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তারা। এরপর থেকে তাদের কোনো খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছিল না। স্বজনেরা রাতভর খোঁজাখুঁজি করলেও সেদিন কোনো হদিস মেলেনি।

পরে বৃহস্পতিবার ভোরে গাড়ির ভেতরে চালকের আসনে প্রধান শিক্ষক ও পাশের আসনে তার স্ত্রীকে নিথরভাবে পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।