জেলা পরিষদ ভোট: দুই ডিসির ফোন ক্লোন করে অনৈতিক সুবিধা দাবি

প্রার্থীদের নানা সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে বিকাশে টাকা চাওয়া হয়।

পঞ্চগড় প্রতিনিধিসিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2022, 02:30 PM
Updated : 9 Oct 2022, 02:30 PM

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের সরকারি মোবাইল ফোন নম্বর ক্লোন করে জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থীদের কাছে অনৈতিক সুবিধা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই অভিযোগ পাওয়া গেছে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেও।

আগামী ১৭ অক্টোবর সারা দেশে জেলা পরিষদ নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা।

এরই মধ্যে প্রার্থীরা প্রচারে নেমে ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। সারা দেশে জেলা প্রশাসকরা এই নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এরই মধ্যে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের ফোন নম্বর ক্লোন করার অভিযোগ এনে শনিবার সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন জেলা প্রশাসকের ব্যক্তিগত সহকারী মো. আলতাফ।

অপরদিকে রোববার বিকালে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের ফেইসবুক পেইজে মোবাইল ফোন নম্বর ক্লোন করার বিষয়টি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।

জিডির বরাত দিয়ে পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিঞা বলেন, “শনিবার সকাল ১১টা ১ মিনিটে একটি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি প্রথমে জেলা পরিষদ নির্বাচনের আটোয়ারী উপজেলার সদস্য প্রার্থী মো. মাজেদুর রহমান বুকুলকে ফোন করেন। ফোন করা ব্যক্তি নিজেকে পঞ্চগড়ের ডিসি পরিচয় দিয়ে নম্বরটি তার ব্যক্তিগত বলে জানান।

“তখন প্রার্থী মাজেদুর রহমান নানা প্রশ্ন করলে ফোনকারী ব্যক্তি পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের সরকারি ফোন নম্বর ক্লোন করে সেই নম্বর থেকে তাকে আবার ফোন করেন এবং তাকে ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করতে বলেন। মাজেদুর তখন ফোন ব্যাক করেন।”

“ফোনে সেই ব্যক্তি প্রার্থী মাজেদুরকে বলেন, তিনি বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে প্রার্থীকে ভোটের বিষয়ে সাহায্য করতে চান। এর বিনিময়ে তিনি বিকাশ মাধ্যমে টাকা দাবি করেন।”

ওসি আরও বলেন, “একইভাবে তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলনকেও একই নম্বর থেকে ফোন করে তার পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ সময় প্রতারক জেলা প্রশাসকের মোবাইল নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে বলেন।

সন্দেহ হলে চেয়ারম্যান তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের জানান। তারপরই জিডি করা হয় এবং সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয় বলে জানান সদর থানার ওসি।

তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। আশা করি, খুব দ্রুতই প্রতারকচক্রকে আইনের আওতায় আনা যাবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা পরিষদ নির্বাচনের সদস্য প্রার্থী মো. মাজেদুর রহমান বকুল বলেন, “একটি নম্বর থেকে ফোন করে ওই ব্যক্তি আমাকে পঞ্চগড়ের ডিসি হিসেবে পরিচয় দেন। ডিসি স্যারের সরকারি নম্বর আমার মোবাইলে সেইভ আছে। এটা জানালে তিনি ডিসি স্যারের সেই সরকারি নম্বর দিয়েই আমাকে আবার ফোন করেন এবং আমাকে ব্যক্তিগত নম্বরে কল করতে বলেন।

“আমি কল ব্যাক করলে তিনি আমাকে ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলেন এবং আমাকে সেই ইউনিয়ন পরিষদের ভোটারদের কাছ থেকে ভোট নিতে সহায়তার কথা বলেন। একই সঙ্গে আমার কাছে বিকাশের মাধ্যমে টাকা দাবি করেন।“

তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলন বলেন, “সকালে অজ্ঞাত একজন ফোন করে আমার এক প্রার্থীকে নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত করার প্রস্তাব দেন। এর বিনিময়ে তিনি জেলা প্রশাসকের নম্বরে বিকাশে টাকাও পাঠাতে বলেন। আমি শুরু থেকেই তার প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারি। বিষয়টি তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের জানাই।”

এ ব্যাপারে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আজাদ জাহান বলেন, “কোনো একটি অসাধু চক্র জেলা প্রশাসকের সরকারি মোবাইল ফোন নম্বর ক্লোন করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অর্থ এবং ভোট চাওয়ার মতো অনৈতিক ও অবৈধ প্রস্তাব দিয়েছে। এটা ভোটে প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টা।”

এ দিকে সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফারুক আহাম্মদের ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল নম্বরটি ক্লোন করা হয়েছে বলে রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসকের ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, “জেলা প্রশাসক সিরাজগঞ্জের অফিসিয়াল নম্বর ক্লোন করে বিভিন্ন অনৈতিক তদবির/আর্থিক সুবিধা দাবি করা হচ্ছে। এ ধরনের কোনো বিষয়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের সম্পৃক্ততা নেই।”

এ বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা জেলা প্রশাসনকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে ওই পোস্টে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (এনডিসি) রিদওয়ান আহমেদ রাফি রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূলত জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকেও অভিযোগ এসেছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে বিভ্রান্ত না হওয়ার কথা বলেছি।”

“জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সরকারি ফোন নম্বর ক্লোন করার বিষয়টি জানতে পেরে জেলার সব স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি, জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে। তারা যেন এতে বিভ্রান্ত না হন এবং কাউকে কোনো অনৈতিক সুবিধা না দেন।“