“বালিয়াডাঙ্গী গিয়ে আমরা শুনলাম সেখানকার কোনো এক এমপি শত শত বিঘা হিন্দুদের জমি দখল করেছেন।”
Published : 08 Feb 2023, 11:55 PM
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা।
বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ অভিযোগ করেন।
প্রতিনিধি দলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুর নেতৃত্বে ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব তরুণ দেসহ ফ্রন্টের সদস্যরা ছিলেন।
বেলা সোয়া ৩টার দিকে বিএনপির প্রতিনিধিদল বালিয়াডাঙ্গীর সিন্দুরপিণ্ডি এলাকার মন্দির পরিদর্শনে যায়। সে সময় দলের সদস্যরা স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।
সেখান থেকে ফিরে বিকেল ৫টার দিকে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি কার্যালয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন হয়।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের ঠাকুরগাঁও জেলা সভাপতি মনোরঞ্জন সিংয়ের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলন বরকতউল্লা বুলু, নিতাই রায় চৌধুরী ও তরুণ দে বক্তব্য দেন।
তরুণ দে বলেন, “আগামী এক বছর পর জাতীয় নির্বাচন। আমরা ধরে নেব এই প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে সরকারি দল জড়িত। শুধু তাই নয়, এই সরকারের আমলে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর কোনো বিচার হয়নি। যারা মামলা করেছে তারা কারাগারের ভেতরে রয়েছে আর যারা মন্দির ভেঙেছে তারা বাইরে রয়েছে। এ ঘটনা রাজনৈতিক অপকৌশল মাত্র।”
নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ২০০৮ সালের পর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটছে, হিন্দুদের সম্পত্তি দখল হয়েছে; সবই আওয়ামী লীগের নেতারা দখল করেছে।
“বালিয়াডাঙ্গী গিয়ে আমরা শুনলাম সেখানকার কোনো এক এমপি শত শত বিঘা হিন্দুদের জমি দখল করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, বালিয়াডাঙ্গীর ঘটনা এ কারণেই ঘটেছে সেটা হলো আজ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যাতে দেশ ছেড়ে চলে যায়, না হয় জমি বিক্রি করে দেয়। তাহলে তারা এসব জমির মালিক হতে পারবেন।
“পরিকল্পিতভাবে হিন্দু মানুষজনকে গৃহ থেকে, জমি থেকে উচ্ছেদ করে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তাদের সম্পদ দখল করা হচ্ছে। এটাই আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য হয়ে আছে।”
বরকতউল্লা বুলু বলেন, “দেশের যত মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, সেসব হয়েছে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামকে অন্য দিকে নেওয়ার জন্য। বিএনপির নেতা-কর্মীর নামে মামলা দেওয়ার জন্য।”
তিনি বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে হেয় করার জন্য আজ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। দেশ পরিচালনার ব্যর্থতা, রাষ্ট্র লুণ্ঠন করে ১৪ বছরে যে ১৪ লাখ কোটি টাকা বিভিন্ন দেশে পাচার ও ব্যাংক লুণ্ঠনের ঘটনা অন্যদিকে ফেরানোর জন্য মন্দির ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ নতুন নতুন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।
বুলু বলেন, “আমরা চাই একটা বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে কারা এই মন্দিরের প্রতিমা ভেঙেছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা।”
সংবাদ সম্মেলনে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহসভাপতি নুর করিম, ইউনুস আলী, ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, জেলা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক সত্যজিত কুমার কুণ্ডু উপস্থিত ছিলেন।
গত শনিবার রাতের কোনো এক সময়ে উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের সিন্দুরপিণ্ডি এলাকার আটটি, পাড়িয়া ইউনিয়নের কলেজপাড়া এলাকার তিনটি ও চাড়োল ইউনিয়নের সাহবাজপুর নাথপাড়া এলাকার একটি মন্দিরের ১৪টি প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা।