কাপ্তাইয়ে ‘পাচারকালে’ দুর্লভ প্রজাতির লজ্জাবতী বানর উদ্ধার

কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের গহীন অরণ্যে পরে প্রাণীটি অবমুক্ত করা হয়।

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধিচট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2022, 01:48 PM
Updated : 22 Oct 2022, 01:48 PM

রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে গভীর অরণ্য থেকে অতিবিপন্ন প্রজাতির একটি লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করা হয়েছে; যেটি পাচার হচ্ছিল বলে দাবি বনবিভাগের। 

শনিবার বেলা ১১টার দিকে ব্যঙছড়ি বিটের গভীর অরণ্য থেকে বানরটি উদ্ধার করা হয় বলে বনবিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ কর্মকর্তা খন্দকার মাহমুদুল হক মুরাদ জানান। 

বনবিভাগ জানায়, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকায় থাকা ‘বেঙ্গল স্লো লরিস’ নামের এই লজ্জাবতী বানরটি অতিবিপন্ন প্রাণী। 

রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, “এক পাহাড়ি ব্যক্তি বানরটি পাচার করা উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছেন, এমন গোপন সংবাদে বনপ্রহরীদের নিয়ে আমরা সেখানে যাই। এ সময় কাগজের বাক্সবন্দী অবস্থায় বানরটি ফেলে দৌঁড়ে জঙ্গলে পালিয়ে যান পাচারকারী।

"পরে বনপ্রহরী মো. গিয়াসউদ্দিন, মো. আবু বক্কর, মো. আক্তার হোসেনের সহযোগিতায় বানরটি উদ্ধার করি।” 

মুরাদ জানান, লজ্জাবতী বানরটি ২০১৫ অনুযায়ী রেডলিস্টে থাকা একদম সংকটাপন্ন ও বিরল প্রজাতির। 

শনিবার রাত ৮টায় কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের গহীন অরণ্যে প্রাণীটি অবমুক্ত করা হয় বলে জানান বন কর্মকর্তারা।

এর আগে গত বছরের এপ্রিলে কাপ্তাই কর্ণফুলী পেপার মিল এলাকায় এবং জুলাইয়ে রাঙামাটি বেতার অফিস সংলগ্ন পাহাড়ি ঝোপে দুটি লজ্জাবতী বানর পাওয়া যায়।

সম্প্রতি ব্যাঙছড়ি বনের ওই অংশে ও আশেপাশের এলাকায় কিছু লজ্জাবতী বানর দেখা গেছে বলে জানান বন কর্মকর্তারা।

আইইউসিএনের ২০২০ সালের তালিকায় সংকটাপন্ন (রেড লিস্ট) প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এই বানরকে।

২০২০ সাল থেকে বিভিন্ন সময় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি হাজারিখিল অভয়ারণ্যের আশেপাশের গ্রামে, কাপ্তাই, রাঙামাটি সদর, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, বান্দরবানের লামা ও আলীকদম, খাগড়াছড়ি সদর, রামগড় এবং ২০১৬ সালে মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জে লজ্জাবতী বানর উদ্ধার হয়েছিল।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. ফরিদ আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যন্ত অঞ্চলে লজ্জাবতী বানর আছে। এরা মূলত রাতে চলাচল করে এবং দিনে মুখ বুজে থাকে।

“যেহেতু মানুষ দিনের বেলায় চলাচল করে বেশি তাই এদের খুব একটা দেখতে পায় না। আগে থেকেই কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে এই প্রজাতির আবাস। অনেক সময় রাতে খাবারের সন্ধান করতে করতে এরা জঙ্গলের ধারে চলে আসে। এমনকি গ্রামেও ঢুকে পড়ে। রোদ উঠলে আর চলতে পারে না।”

তিনি বলেন, “পাচারকারীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়াটা সুখবর। বিভিন্ন ভেষজ ওষুধে ব্যবহারের কথা বলে এদের বেচাকেনা হয়। যারা বন থেকে ধরে তারাও জানে না আসলে কী কাজে এই প্রাণীর ব্যবহার।

“নিরবচ্ছিন্ন বনে লজ্জাবতী বানর নির্বিঘ্নে থাকতে পারে। হাজারিখিল অভয়ারণ্য ও এর আশেপাশের এলাকায় এখনও ভালো সংখ্যায় আছে।”