রেলওয়ে আইনের ৩০২ ধারা অনুযায়ী পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ডের বিধানও রয়েছে।
Published : 19 Oct 2022, 03:15 PM
মাঝখানে বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ফরিদপুরে আবারও চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে বিক্ষিপ্তভাবে ছুটে আসা পাথরে আহত হওয়া নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে যাত্রীদের মধ্যে।
জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর রাতে ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা যাওয়ার পথে পুখুরিয়া স্টেশন ছাড়ার এক মিনিট পরে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারার ফলে গুরুতর আহত হয়েছেন লুবনা বেগম (২০) নামে একজন নারী।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক আব্দুল মান্নান মুন্নু জানান, সাম্প্রতিককালে ফরিদপুরের এই রেলপথে কমপক্ষে ১০ জন যাত্রী পাথরের আঘাতে আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
আবু বকর সিদ্দিকী নামে একজন রেলযাত্রী জানান, কয়েকদিন আগে ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন তালমা স্টেশন ত্যাগ করার পরে তার সামনেই হঠাৎ ছুটে আসা পাথরে একজন যাত্রী আহত হন। এতে ওই যাত্রীর কপাল ফেটে যায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাথর ছুড়ে মারার ঘটনায় সম্প্রতি বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটলেও যেকোনো মুহূর্তে আশঙ্কাজনক কিছু ঘটে যেতে পারে। ছোট-খাটো ঘটনার অধিকাংশই থানা কিংবা রেলওয়ে পুলিশকে জানানো হয় না।
জানা যায়, গত বছর এভাবে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে যাত্রীদের আহত করার পর জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নানা পদক্ষেপ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তৎপরতা এবং স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হয়। এর ফলে দীর্ঘদিন চলন্ত ট্রেনে এভাবে পাথর নিক্ষেপ বন্ধ ছিলো।
এরপর মাস খানেক আগে থেকে আবার তা শুরু হয়েছে। রেললাইনের মাটি ধস রোধে রেললাইনে স্লিপারে ঘিরে রাখা পাথর কুড়িয়ে নিয়ে সেসবই নিক্ষেপ করা হচ্ছে ট্রেনে। ছুড়ে মারা এসব পাথর তীব্র বেগে এসে বিদ্ধ হচ্ছে অনেক যাত্রীর চোখেমুখে।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. শাহজাহান জানান, অতি সম্প্রতি আবারও পাথর ছুড়ে রেলযাত্রীদের আহত করার কয়েকটি ঘটনার খবর জেনেছেন তিনি। বিশেষ করে সন্ধ্যার গাড়িতে এসব বেশি হয়।
ফরিদপুরের পুখুরিয়া থেকে তালমার মাঝামাঝি জানদি গ্রাম ছাড়িয়ে এ ঘটনা বেশি ঘটছে। এ ছাড়া পুখুরিয়া পেরোনোর পরে এবং বাখুন্ডার কাছাকাছি কিছু ঘটনার খবরও জানা গেছে।
তিনি জানান, এসব ঘটনার পরে আহতরা লিখিত অভিযোগ দেন না বলে নির্দিষ্ট করে দুর্ঘটনার সংখ্যার প্রকৃত হিসাব জানা থাকে না।
জানা গেছে, এভাবে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারার পর মৃত্যুর নজিরও রয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে বিভিন্নভাবে প্রচার চালিয়ে আসছে জনসচেতনা বাড়াতে।
রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করা হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে। ৩০২ ধারা অনুযায়ী পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ডের বিধানও রয়েছে।
পাথর ছুড়ে মারার সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে তথ্য দিলে নগদ ১০ হাজার টাকা পুরস্কারেরও ঘোষণা করেছে রেলওয়ে পুলিশ। নানাভাবে এর বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হচ্ছে। তবু থামছে না এসব ঘটনা।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইমদাদ হোসাইন বলেন, “এরকম ঘটনা এখন পর্যন্ত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়নি। যদি রেল কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সহকারে পুলিশের সহযোগিতা চায় তবে পুলিশ এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সহযোগিতা করবে।”
এ ব্যাপারে রাজবাড়ী রেলওয়ে থানার ওসি মাসুদ আলম বলেন, “এ ধরনের ঘটনা মাঝেমধ্যে ঘটে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর অন্ধকারে পাথর ছুড়ে মারা হয়। বিশেষ করে পুখুরিয়ার ওই দিকটাতে বেশি হয়।
“তবে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা না হওয়ায় বেশিরভাগ সময়েই পুলিশকে জানায় না ভুক্তভোগীরা। আমরা মাঝেমধ্যে রেলের ডিউটিরত পুলিশের মাধ্যমে খবর পেলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেই।”
তিনি জানান, এর আগে ফরিদপুরের ডিবি পুলিশকে দিয়ে অভিযান চালানোর পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিলো। আমরা আবার সেখানে যাব এবং স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের নিয়ে সভা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। রেলযাত্রা নিরাপদ করতে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।