কক্সবাজার সৈকতের প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে বালিয়াড়িতে পড়েছিলো মাছ আর মাছ। সেসব মাছ সংগ্রহ করতে স্থানীয় আর পর্যটকদের হুড়োহুড়িতে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল সৈকত।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সৈকতের লাবনী, শৈবাল ও ডায়াবেটিক পয়েন্টে এসব মাছ ভেসে আসে।
জেলেদের আটকে পড়া মাছ ট্রলারে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ফেলে দেওয়ায় জোয়ারের সময় সেগুলো ভেসে এসেছে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।
দুপুরে লাবনী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটক আর স্থানীয়রা কুড়িয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার মাছ। সেখানে আছে পোয়া, ফাইস্যা ও ছোট ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ।
সপ্তাহখানেক আগে সৈকতের কলাতলী থেকে বেলী হ্যাচারী পয়েন্ট পর্যন্ত অন্তত এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভেসে এসেছিল শত শত মৃত জেলিফিশ।
তারপর বৃহস্পতিবার এভাবে মাছ ভেসে আসার কারণ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে কিছু শঙ্কা তৈরি হয়। পরে জেলেদের মাছ ফেলে দেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।
জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, সকাল থেকে সৈকতের দীর্ঘ এলাকা জুড়ে মাছ ভেসে আসার খবরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
“পর্যটক ও স্থানীয়রা যে যেভাবে পারছেন, সেভাবেই মাছ সংগ্রহ করেছেন। এতে সৈকতে অন্যরকম উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।”
প্রাথমিকভাবে ট্রলারে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় জেলেদের জালে আটকা পড়া অতিরিক্ত মাছ সাগরে ফেলে দেওয়ার তথ্য পেয়েছেন বলে জানান প্রশাসনের এ কর্মকর্তা।
মাসুম বলেন, “তারপরও বিষক্রিয়ায় নাকি অতিরিক্ত ধরা পড়ায় এসব মাছ সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছে; এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।”
এফবি আরিফ নামের ট্রলারের মাঝি আবুল কাসেম জানান, বৃহস্পতিবার লাবনী ও শৈবাল পয়েন্টের মাঝামাঝি জায়গায় জাল ফেলেছিলেন। পরে জাল টানার সময়ই বেশি ওজনের অনুভব হওয়ায় বিপুল সংখ্যক মাছ আটকা পড়ার ব্যাপারে ধারণা করছিলেন। পরে জাল তুললে সে ধারণা সত্য প্রমাণিত হয়।
তিনি বলেন, " চলতি মৌসুমে আজকে (বৃহস্পতিবার) সবচেয়ে বেশি মাছ ধরা পড়েছে। আমাদের ট্রলার ছোট। আমরা ট্রলারে নেওয়ার পরও অনেক মাছ জালে থেকে যায়। সেগুলো সাগরে ফেলে চলে যাচ্ছি। আমাদের মতো আরও অনেকে এভাবে মাছ সাগরে ফেলে দিয়েছে।"
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের এসআই শামীম হোসেন বলেন, “অনেকে মাছ কুড়িয়ে নিয়েছে। পোয়া, ইলিশ, ছুরিসহ বিভিন্ন রকমের মাছ রয়েছে এখানে। আমিও নিয়েছি এক বস্তা।”
সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সী-সেইফ লাইফগার্ডের ইনচার্জ ওসমান গণি বলেন, “সকালে জোয়ার শুরু হওয়ার পর থেকে সৈকতে মাছ ভেসে আসতে দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, জেলেদের জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়েছে। তাই অতিরিক্ত মাছগুলো নিতে না পেরে সাগরে ফেলে দিচ্ছে তারা।"
অনেক জেলে আটকে পড়া মাছসহ জালও ফেলে গেছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয়দের পাশাপাশি সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরাও ভেসে আসা এসব কুড়িয়ে নিচ্ছেন। স্থানীয়দের অনেকে কুড়িয়ে নেওয়া মাছ বস্তাভর্তি করে সৈকতেই বিক্রি করছেন।
ঢাকার আজিমপুর থেকে বেড়াতে আসা আহমদ হোসেন বলেন, অন্যদের দেখা-দেখি তিনিও সৈকতে ভেসে আসা এসব মাছ কুড়িয়েছেন।
কুড়িয়ে নেওয়া এসব মাছ সঙ্গে নিয়েই তিনি বাড়ি ফিরবেন বলে জানান।
বস্তা নিয়ে মাছ সংগ্রহে আসা কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ নুর বলেন, "অনেকে কুড়িয়ে নেওয়া মাছ বালিয়াড়িতে জড়ো করে বস্তা ভর্তি করে বিক্রি করেছে। আবার অনেকে বস্তায় করে নিয়ে যাচ্ছেন।"