ভোটের আগে সিলেট বিএনপিতে গ্রেপ্তার আতঙ্ক, হয়রানির অভিযোগ

“অনেক নেতাকর্মী নিজের বাসা-বাড়িতে থাকতে পারছেন না; প্রতিরাতেই আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।”

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2023, 10:27 AM
Updated : 12 May 2023, 10:27 AM

সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে; এরই মধ্যে দলের ১৭ নেতাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আনুষ্ঠানিকভাবে এই সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণার মধ্যে দলটির নেতাদের অভিযোগ, হয়রানি করার জন্যই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আতঙ্কে এখন নেতাকর্মীরা বাসাবাড়িতে থাকতে পারছেন না।

তবে হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. ইলিয়াস শরীফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মামলা ও পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। আইন মেনে আসামিদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে।   

নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিরস্থায়ী মুক্তি ও দলের নেতাকর্মীদের ওপর থেকে সব মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ২ মে বিকালে সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় ছাত্রদলের একটি মিছিল বের হয়। মিছিল থেকে আট নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরে রাতে আটজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানার শাহজালাল (র.) তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (ফাঁড়ি ইনচার্জ) কাজী জামাল উদ্দিন একটি মামলা করেন। এতে পুলিশের ওপর হামলা এবং সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগ আনা হয়।

এই মামলায় এখন পর্যন্ত ১৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নেওয়া হয়। এর মধ্যে মঙ্গলবার ১৩ জন এবং বৃহস্পতিবার আরও চারজনকে একদিন করে রিমান্ড আদেশ দেন আদালত।

আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনে চতুর্থবারের মতো ভোট হবে। বর্তমান মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী এখনও নির্বাচনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। তিনি ২০ মে প্রার্থিতার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। ২৩ মে এই সিটিতে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন রয়েছে।

দলগতভাবে বিএনপি এই নির্বাচনে যাচ্ছে না, এই ভোটে দলের কোনো প্রার্থী নেই- সেটি মহানগর পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে বলে জানান জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলাম, আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি না করতে; তারপরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অনেক নেতাকর্মী নিজের বাসা-বাড়িতে থাকতে পারছেন না। প্রতিরাতেই আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

“মঙ্গলবার রাতেও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত পাঁচদিনে অন্তত ২৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, “প্রতিদিনই আমাদের দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে; রাতে গ্রেপ্তার হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। অনেক নেতাকর্মী নিজেদের বাসাবাড়িতে অবস্থান করেতে পারছেন না।

“প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলাম আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি না করতে। তবে তারপরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি ঢাকা যাওয়ার আগ পর্যন্ত ২০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমি ঢাকাতে ছিলাম তাই নতুন করে গ্রেপ্তার হওয়াদের তথ্য পাইনি।”

Also Read: সিলেটে ছাত্রদলের মিছিল থেকে আটক ৮

পুলিশ অ্যাসল্ট ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে হওয়া মামলায় আদালত বিএনপি ও ছাত্রদলের ১৭ নেতাকর্মীকে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন বলে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও আসামিপক্ষের আইনজীবী এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার ১৩ জনকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিন করে রিমান্ড আবেদন করলে সিলেট মহানগর হাকিম তৃতীয় আদালতের বিচারক শারমীন খানম একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই আদালতে বৃহস্পতিবার আরও চার জনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

গ্রেপ্তার নেতাকর্মীর সংখ্যা আরও বেশি উল্লেখ করে আইনজীবী বলেন, “আদালতে পুলিশ রিমান্ড আবেদনে বলেছে, আসামিরা আরও নাশকতামূলক কাজ করতে পারেন। তাদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়ার জন্য রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।

“তবে আমরা এর বিরোধিতা করে বলেছি, মামলার বিবরণের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটি গায়েবি মামলা। এই ধরনের মামলা রিমান্ড দেওয়ার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।”

মঙ্গলবার রিমান্ডে নেওয়া আসামি হলেন- সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন, সাবেক সহসাংগঠনিক মো. আবদুস সালাম, যুবদলের নেতা পারভেজ আহমদ, রাজু আহমেদ, ছাত্রদলের নেতা কামরুল হাসান, ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য জুনায়েদ হোসাইন, সাইফুল ইসলাম, মো. হাফিজুর রহমান, মহানগর বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক শামীম মজুমদার, ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ লাহিন, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য বদরুল ইসলাম, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ও জাসাস নেতা সিরাজ উদ্দিন।

বৃহস্পতিবার রিমান্ডে নেওয়া আসামি হলেন- সবুর আহমদ, সিরাজ উদ্দিন, রায়হান-১ এবং রায়হান-২।