লোকবল কম থাকা সত্ত্বেও আমচাষিদের মাঝে এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে লিফলেট বিতরণ ও দলীয় আলোচনা করা হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাষ্য।
Published : 02 May 2023, 11:22 AM
জয়পুরহাটে মৌসুমের শুরুতে ব্যাপক পরিমাণ মুকুল ও কচি আম ধরলেও তা প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ঝরে পড়ছে। তাই আগে লাভের আশা থাকলেও এখন লোকসানের শঙ্কায় দিন পার করছেন আমচাষিরা।
এ অবস্থায় কৃষি বিভাগের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে আম বাগান, পতিত জায়গা, সরকারি রাস্তা-ঘাট ও ব্যক্তিভাবে সৌখিন আমচাষিদের বাগান সব মিলিয়ে জেলায় ৭৬৬ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়েছে।
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও দিনাজপুরের মতো জয়পুরহাট জেলার অনেক চাষি বাণিজ্যিকভাবে আম চাষে ঝুঁকেছেন।
আম চাষের তেমন পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় তীব্র খরা মোকাবিলা করতে পারেননি এখানকার অনেক আমচাষি। ফলে বোঁটা শুকিয়ে গাছ থেকে ঝরে পড়ছে কাঁচা আম।
সদর উপজেলার খঞ্জনপুরে আমবাগান মালিক দেওয়ান শফিউল ইসলাম বলেন, “বেশ কয়েকবছর ধরে আমবাগান করেছি। আমার বাগানে বিভিন্ন জাতের প্রায় হাজার খানেক আম গাছ আছে। মৌসুমের শুরুতে আমের মুকুল আসে এবং আমও ভালো ধরেছিল।
“কিন্তু প্রখর রোদ আর তাপদাহে কাঁচা আমগুলোর বেশির ভাগ ঝরে পড়ে গেছে। এ ব্যাপারে কোনো প্রতিকার খুঁজে পাচ্ছি না, বুঝতেও পারছি না যে আমগুলো রক্ষার জন্য আসলে কী করব।”
সদরের বনখুর এলাকার আরেক আমবাগান মালিক শাদমান আলিফ মিম রায়হান জয় বলেন, “প্রায় তিনশ আমগাছ থেকে বরাবরই ভালো ফলন পেয়েছি। গত বছর সাড়ে ৩শ মণ আম বিক্রি করেছি।
“কিন্তু এ বছর অতি খড়া ও অনাবৃষ্টির কারণে প্রায় ৮০ ভাগ আম ঝরে পড়েছে। ২০ ভাগ আম রয়েছে, তার মধ্যে অনেকগুলো আবার কড়া রোদে ফেটে যাচ্ছে, দাগ পড়ছে। আবার কিছু আম পাকার মতো হয়ে যাচ্ছে।”
এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগের কোনো সহযোগিতা বা পরামর্শ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
পাঁচবিবি উপজেলার শালইপুর গ্রামের রমজান আলী, কালাই উপজেলার মোলামগাড়িহাট গ্রামের মজিবর রহমান, আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর গ্রামের আবু হাসান, জয়পুরহাট শহরের সবুজ নগর এলাকার আসলাম হোসেনসহ সৌখিন ও ব্যক্তিগতভাবে যাদের অল্প আমগাছ রয়েছে এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অল্প সংখ্যক আমগাছ থাকায় তাদের কেউ কেউ গাছগুলোতে পানি ছিঁটিয়ে ভালো উপকার পেয়েছেন। বাগানগুলোতে বেশি আম ঝরেনি।
এ অবস্থায় আমচাষিরা কৃষি বিভাগের সহযোগিতা কিংবা পরামর্শ কামনা করছেন।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) সাদিয়া সুলতানা বলেন, “খরা-বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগমুক্ত অঞ্চল হওয়ায় সব ধরনের ফুল, ফল ও ফসল উৎপাদনের উর্বর ভূমি জয়পুরহাট।”
তীব্র গরমের কারণে আম ঝরে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও সহযোগিতা কিংবা পরামর্শ না দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “লোকবল কম সত্ত্বেও এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে আমচাষিদের মাঝে এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে লিফলেট বিতরণ ও দলীয় আলোচনা করা হয়েছে।”
এ সমস্যা কাটানো যাবে বলে আশ্বাস দেন কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।