২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১৬৩ জন শিশু রোগী ভর্তি হয়েছে; এর আগের দিন ছিল ১৭০ জন।
Published : 20 Mar 2024, 03:54 PM
আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়েছে। ফলে এক বেডেই দুই শিশুকে চিকিৎসা দিতে বাধ্য হচ্ছেন চিকিৎসকরা।
বুধবার দুপুরে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শয্যা সংখ্যা ৪৫ হলেও ভর্তি রয়েছে ১৬৩ জন। শয্যার তুলনায় রোগী বেশি হওয়ায় একই বিছানায় দুজন করে শিশু রাখা হয়েছে। অনেকের তো ভাগ্য আরও মন্দ; তাদের ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
শিশু ওয়ার্ডে কথা হয় পঞ্চগড় জেলা থেকে আসা রোমানা আক্তারের সঙ্গে। তিনমাস বয়সী সন্তানকে এ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন তিনি।
রোমানা বলেন, “এই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি। তাই একটি শয্যায় দুইজন শিশু রোগীকে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”
ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী থেকে আসা শাহিনা আক্তার বলেন, “হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত শয্যা নেই। এ কারণে আমার শিশু বাচ্চাকে নিয়ে মেঝেতেই থাকতে হচ্ছে এবং তার চিকিৎসা এখানেই চলছে।”
ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বলছে, শিশু ওয়ার্ডে গড়ে ১০০ শিশু রোগী ভর্তি থাকে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় এ ওয়ার্ডে ১৬৩ জন শিশু ভর্তি হয়েছে; এর আগের দিন ছিল ১৭০ জন।
১৬৩ জন শিশু রোগীর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৪৬ জন। জ্বর ও সর্দি নিয়ে ভর্তি ৭০ জন। নবজাতক শিশু রয়েছে ১৫ জন। আর শ্বাসকষ্টসহ অন্য রোগে আক্রান্ত ৩২ জন।
এছাড়া গত এক সপ্তাহে শিশু ওয়ার্ডে প্রায় এক হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছে বলেও হাসপাতাল থেকে জানানো হয়।
হাসপাতালের শিশু কনসালটেন্ট ডা. সাজ্জাত হায়দার শাহীন বলেন, শয্যার তুলনায় চার গুণ বেশি শিশু রোগী ভর্তি রয়েছে। তাই এক শয্যায় দুজন শিশু রোগীকে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও শিশু ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় রেখেও চিকিৎসা চলছে।
হঠাৎ রোগীর চাপ বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশুরা শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, সর্দি, জ্বর ও পেটের ব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাই চাপ বেড়েছে।
“এখন যে পরিস্থিতি, তাতে সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ সেবাটা দিচ্ছি। এখানে জনবল সংকট রয়েছে; জনবল বাড়ানো হলে আমরা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারব।”
আবহাওয়া পরিবর্তনের সময়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে এ চিকিৎসক বলছেন, “শিশুদের প্রচুর তরল ও ভিটামিন সি-জাতীয় খাবার দিতে হবে। শিশু ঘেমে গেলে জামাকাপড় পরিবর্তন ও ঘাম মুছে দিতে হবে।”
আবাহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানান ঠাকুরগাঁও সদরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নের কচুবাড়ি গ্রামের লাকি আক্তার। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত তার দুই বছরের সন্তানকে নিয়ে এ হাসপাতালের শরণাপন্ন হয়েছেন।তবে তাদেরও ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে।
লাকি বলেন, “এখন দিনে গরম ও রাতে ঠাণ্ডা অনুভব হচ্ছে। এ কারণে শিশুদের বিভিন্ন ধরনের রোগ হচ্ছে। আমার বাচ্চাটাও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। কিন্তু চিকিৎসা নিতে এসে বিপাকে পড়েছি। রোগী চাপ বেশি হওয়ায় বেডে জায়গা পাই নাই। এখন মেঝেতেই চিকিৎসা চলছে।”
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, তাদের হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডের সেবা মানসম্মত হওয়ায় আশপাশের জেলার অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের এখানে চিকিৎসা করান। এ কারণে এই হাসপাতালে সবসময় শিশু রোগীর চাপ থাকে।
“তবে গত এক সপ্তাহ ধরে শিশু রোগীর চাপ বেড়েছে।তারপরও আমাদের চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে ওয়ার্ডে শয্যা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।”