ইমাদ পরিবহনের বাসটিতে আফসানা ছাড়াও গোপালগঞ্জের আরও আট জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
Published : 19 Mar 2023, 05:34 PM
স্বামীর মৃত্যুর পর দুই মেয়েকে বাবার অভাব বুঝতে দেননি কানিজ ফাতেমা, কষ্ট করে তাদের পড়িয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। মেয়েদের ঘিরে রচনা করেছিলেন ভবিষ্যৎ স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকে থমকে দিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ আনতে যাওয়া বড় মেয়ে আফসানার মৃত্যু।
রোববার সকালে মাদারীপুরের শিবচরে বাস দুর্ঘটনায় নিহত আফসানা মিমির (২৬) মা কানিজ ফাতেমার (৫৩) আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশও যেন শোকে কাতর হয়ে পড়ে।
আহাজারিরত মায়ের কণ্ঠে বারবার আক্ষেপ ঝরছিল, ময়মনসিংহ থেকে সার্টিফিকেট আনতে যাওয়াই মেয়ের কাল হয়েছে।
পরিবারটিকে আগলে রাখা আফসানা সার্টিফিকেট আনতে যাওয়ার আগের দিন শনিবারও মায়ের জন্য এক মাসের ওষুধ কিনে দিয়েছিলেন – আহাজারি করতে করতে স্মৃতিচারণও করেছিলেন মা ফাতেমা।
গোপালগঞ্জ শহরের ব্যাংকপাড়ার বাসায় শোকার্ত স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন; কিন্তু কোনোভাবেই তাকে শান্ত করা যাচ্ছিল না।
মেধাবী ছাত্রী আফসানা ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। স্নাতকোত্তরের সনদপত্র আনতে তার ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে যাওয়ার কথা ছিল।
তাই ছোট বোন রুকাইয়া ইসলাম রূপাসহ আফসানাকে গোপালগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু কলেজের সামনে থেকে বাসে উঠিয়ে দিয়েছিলেন তার মা। রূপা গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।
আফসানা ও রূপা ছোট থাকতেই প্রায় ২০ বছর আগে তাদের বাবা আবু হেনা মোস্তফা কামাল মারা যান। তিনি বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা ছিলেন।
তখন থেকে কানিজ ফাতেমা দুই মেয়েকে নিয়ে শুরু করেন সংগ্রাম। কষ্ট করে আফসানা ও রূপার লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বাবার অভাব কখনোই তাদের বুঝতে দেননি।
রোববার বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুর এলাকায় ইমাদ পরিবহনের বাসটিতে আফসানা ছাড়াও গোপালগঞ্জের আরও আট জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
তাদের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম।
ইমাদ পরিবহন ম্যানেজার মো. বাসু শেখ জানান, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের বাসটিতে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন কাউন্টার থেকে ১৪ জন যাত্রী উঠেছিলেন।