কারখানার সিনিয়র ব্যবস্থাপক সুজাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এখনও মালিক পক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত আমাকে জানাননি।”
Published : 01 Nov 2023, 10:45 PM
চার মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুর মহানগরীর একটি তৈরি পোশাক কারখানার সামনে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নিয়েছেন শ্রমিকরা।
সোমবার থেকে মহানগরীর লক্ষ্মীপুরা এলাকার স্টাইল ক্রাফট ও ইয়াং ওয়ান্স বিডি লিমিটেডের শ্রমিকরা বন্ধ কারখানার অবস্থান করছেন। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত তারা অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন।
বুধবার পর্যন্ত কারখানা কর্তৃপক্ষের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানান আন্দোলনরত শ্রমিকরা।
দুপুরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকশ শ্রমিক তাঁবুর নীচে বসে আছেন। তাঁবুর সামনে একটি ব্যানারে তাদের দাবিগুলো লেখা রয়েছে।
শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, চলতি বছরের জুলাই থেকে তাদের বেতন এবং কোরবানির ঈদের বোনাস ছাড়াও অর্জিত ছুটির টাকা বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সুবিধার টাকা, চাকরি হতে অবসানজনিত আইনানুগ পাওনাদিও রয়েছে। পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কয়েকবার দাবি জানানো হয়। কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার তারিখ দিলেও টাকা দেয়নি।
শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়ন কমিটির নেতা মো. সুরুত আলী বলেন, “পরে আমরা কলকারখানা অধিদপ্তর এবং শ্রম আদালতের শরণাপন্ন হই। আদালতও কারখানা মালিককে ওই টাকা পরিশোধে তারিখ বেঁধে দেন।
“অগাস্ট মাসে কিছু শ্রমিককে ঈদ বোনাস দিলেও কাউকেই বেতন-ভাতা পরিশোধ করেনি। ২২ অক্টোবর এক মাসের বকেয়া বেতন দেওয়ার তারিখ নির্ধারণ করে দেয় শ্রম আদালত। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ ওইদিনও তা পরিশোধ করেনি।
সুরত আলী বলেন, “এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আবারও বিক্ষোভ ও কারখানার সামনের সড়ক অবরোধ করি। পরে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করি। কিন্তু টাকা পাইনি। তাই বাধ্য হয়েই কারখানার ফটকের সামনে অবস্থান ধর্মঘটের কর্মসূচি করছি।”
কারখানার শ্রমিক সুমি ও আকলিমা জানান, কাউকে কিছু অবগত না করেই সিনিয়র ব্যবস্থাপক সুজাউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক নোটিশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারাখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
কারখানা বন্ধের নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ঈদ পরবর্তী ৮ জুলাই কারখানা খোলার পর কারণে-অকারণে শ্রমিকরা উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত করে বেআইনিভাবে কাজ বন্ধ রাখে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বৈদেশিক কাজের অর্ডার বাতিল হয় এবং কারখানার সুনাম নষ্টসহ আর্থিক ক্ষতি হয়।
“১৭ অগাস্ট থেকে শ্রমিকরা পুনরায় বেআইনিভাবে কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের বার বার কাজে যোগদানের অনুরোধ করলেও তারা কাজে যোগদান করেননি। এতে তারা আরও চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।
“৩০ অগাস্টে শ্রমিকদের মজুরি ও বেতন প্রদানকালে আবারও তারা বেআইনিভাবে কারখানা কর্মকর্তাদের মারধর ও ভাঙচুর করে। এমতাবস্থায় ৩১ অগাস্ট থেকে শ্রম আইন মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তীতে নোটিশের মাধ্যমে কারখানা খোলার তারিখ জানানো হবে।”
এ ব্যাপারে সিনিয়র ব্যবস্থাপক সুজাউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “এখনও মালিক পক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত আমাকে জানাননি। তাই আমি এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।”
গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, “এ ব্যাপারে মালিকের বিরুদ্ধে শ্রম আইনে মামলা হয়েছে। ২২ অক্টোবর শুনানি ছিল। তিনি আসেননি। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। শিগগির মামলার রায় ঘোষণা করবে আদালত। তাতে তার জেলও হতে পারে। এখন এই অবস্থায় আছে।”