গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে; ফুলগাজী ও পরশুরামে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
Published : 07 Aug 2023, 12:19 PM
ফেনীতে মুহুরী নদীর তীর রক্ষা বাঁধের দুই স্থানে ভেঙেছে। ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকে অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সোমবার ভোরে এ ভাঙনের ফলে ২০০ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে জানান ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁইয়া।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জেলা আবহাওয়া অফিস জানায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, ফেনীর উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ফুলগাজী-পরশুরাম) মো. মনির আহমেদ জানান, সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ফুলগাজী ও পরশুরামে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া তিন নদীর বেড়িবাঁধের ২০টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে মুহুরী নদীর ফুলগাজী উপজেলার উত্তর দৌলতপুর ও উত্তর বরইয়া অংশে অন্তত ১০ মিটার করে ২০ মিটার ভেঙেছে।
ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, “তীর রক্ষা বাঁধের দুটি স্থান ভেঙে উত্তর বরইয়া, বিজয়পুর, কিসমত বিজয়পুর, দক্ষিণ বরইয়া, জগৎপুর, উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, বনিকপাড়াসহ অন্তত ১০ গ্রামের নীচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নীচু স্থানের ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন শতশত মানুষ।”
ওই ইউনিয়নের উত্তর বরইয়া গ্রামের বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, প্রবল বর্ষণ ও পানির তোড়ে ভোর ৪টার দিকে তার বাড়ির অংশে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ ১০ মিটার ভেঙে যায়।
বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে তার দুই একর জমির রোপা আমন ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে; ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ প্রকল্পের পাইপ বাঁধের নীচ দিয়ে নেওয়ার পর ভালো করে মাটি চাপা না দেওয়া, বাঁধসংলগ্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলন ও ইঁদুরের গর্তকে বাঁধ ভাঙায় দায়ী করছেন এনামুল।
একই গ্রামের আনোয়ার হোসেনের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নদীরক্ষা বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়।
পঞ্চাশোর্ধ রহিমা বেগম বলেন, ঘরের একদিক দিয়ে পানি ঢুকে অন্যদিক দিয়ে বের হচ্ছে। নদীর পানি ঘরে প্রবেশ করে আসবাবপত্রসহ সবকিছু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চুলাও পানিতে ডুবে যাওয়ায় সকাল থেকে রান্না হয়নি তারা পরিবারে।
সকালে ঘরে পানি ঢুকে বই-খাতা সব ভিজে গেছে বলে ওই গ্রামের সাদিয়া আক্তার নামের এক শিশু-শিক্ষার্থী জানায়।
ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার জানান, মুহুরী-কহুয়া-সিলোনীয়া নদ-নদীর দুপাশে ১২২ কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধ আছে। বাঁধের যে কয়েকটি স্থান ভেঙেছে, পানি একটু নেমে গেলে স্থানগুলো মেরামত করা হবে।
আর কোথাও যেন ভাঙতে না পারে সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা তৎপর আছে বলে জানান তিনি।
ফেনীর জেলা প্রশাসক মোছাম্মদ শাহীনা আক্তার বলেন, নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করছেন। পানিবন্দীদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।