হাতে ভাজা মুড়ির কদর বাড়লেও পেশা ছেড়েছেন অনেকে

মুড়ি ১৩০-১৪০ টাকা কেজি পাইকারি বিক্রি করেন ভাজার সঙ্গে যুক্তরা, পাইকাররা বাজারে নিয়ে ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি করেন।

মাহিদুল ইসলাম মাহিমানিকগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2023, 08:55 AM
Updated : 28 March 2023, 08:55 AM

সারা বছরের তুলনায় রমজানে মুড়ির চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা থাকে তুঙ্গে। তবে বছরজুড়ে আয় না থাকায় এই মুড়ি ভাজার সঙ্গে জড়িত পরিবারের সংখ্যা কমেছে মানিকগঞ্জে। 

এই মুড়ির জন্য প্রথমে ভুষিভাঙা ধান সিদ্ধ করে শুকিয়ে চাল বের করতে হয়। পরে প্রথমে চালের সঙ্গে লবণ পানি মিশিয়ে বালু দিয়ে ভেজে এই মুড়ি তৈরি করা হয়। জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে রয়েছে এই বড় আকারের মুড়ির ব্যাপক চাহিদা। 

এক সময় মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার ধলাই এবং সরুপাই গ্রামের ১৫-২০টি পরিবার সংসার চালাতো মুড়ি ভাজার কাজ করেই। তবে এখন মাত্র তিনটি পরিবার মুড়ি ভাজার কাজ করে। 

সরুপাই এলাকার আব্দুস সালাম বলেন, “১৫-২০ বছর মুড়ি ভাজা ও বিক্রির কাজ করেছি। করোনাভাইরাসের সময় দুই বছর কোনো ব্যবসা ছিল না। পরে ইজিবাইক কিনেছি। এখন আর মুড়ি ভাজা বা পাইকারি বিক্রির পেশায় নেই আমি।” 

একই অবস্থা এই গ্রামের মুড়ি ভাজায় জড়িত অধিকাংশ পরিবারেই। 

ধলাই এলাকার মৃত তাহের আলীর স্ত্রী সকিনা বেগম (৬৫) বলেন, ভূষি ভাঙা ধান আনতে হয় বরিশাল থেকে। এক মণ ধান কিনতে দুই হাজার টাকার মতো খরচ হয়। ধান সিদ্ধ করা, চাল তৈরি ও ভাজা মেলা কষ্ট করা লাগে। প্রতি মণে ২৭ থেকে ২৮ কেজি চাউল হয়।’  

“সেই চাল থেকে মুড়ি ১৩০-১৪০ টাকা কেজি পাইকারি বিক্রি করি। পাইকাররা ১৫০-১৬০ টাকা বিক্রি করে।” 

সকিনা বেগম আরও বলেন, “তিন মেয়ে বিয়া দিছি। স্বামী মারা গেছেন। নিজের তো চলতে হইব। তাই মুড়ি ভাজি, বিক্রি করি। তয় ধানের দাম মেলা।” 

সকিনা বেগম জানান, প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় এই পেশায় নিয়োজিত আছেন। ২০ বছর ধরে পুরো কাজ নিজে একাই করেন। 

তবে সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের হালদার পাড়া গ্রামে এখন দিন-রাত চলছে মুড়ি ভাজার কাজ। হালদার পাড়ার গৃহিনী ও বাড়ির কর্তাদের এখন যেন দম ফেলার সময় নেই। 

হালদার পাড়ার সারোথী হালদার বলেন,  “প্রতিদিনই আজানের সময় ঘুম থেকে উঠতে হয়। উঠেই বসে পড়ি চুলার পাড়ে। প্রায় বিকাল পর্যন্ত মুড়ি ভাজতে হয়। পাইকার ব্যবসায়ীরা বাড়ি থেকে মুড়ি কিনে নিয়ে শহরের অধিক দামে বিক্রি করে।” 

সারোথী হালদার আরও বলেন, “মুড়ি ভাজা মেলা কষ্টের কাজ। তয় ৩০ বছর ধরে এ কাজ করছি। ধানের দাম, লাকড়ির দাম বেড়ে গেছে। লাভ আগের মতো হয় না।” 

তবে যারা মুড়ি তৈরি করেন তারা বাজারে বিক্রি করেন না। পাইকাররা তাদের বাড়ি থেকেই মুড়ি কিনে নিয়ে যায়। 

বায়রা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. আজহার উদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নে ১০টির মতো পরিবার হাতে ভেজে মুড়ি বিক্রি করে থাকেন। 

“সারা বছর মুড়ি ভাজার কাজ করলেও, রোজায় চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তখন অনেক পরিশ্রম করে নারী-পুরুষ একসাথে।” 

বায়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান জিন্নাহ্ (লাঠু) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের হালদার পাড়ার হালদাররা এগিয়ে যাচ্ছে। হালদার পাড়ার অনেক ছেলে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। 

“তবে কয়েকটি পরিবার এখনো মুড়ি ভেজে সংসার চালায়। পরিষদ থেকে যতটুকু সম্ভব সহায়তা করা হয়।”