শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যাওয়ার পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
Published : 21 Aug 2022, 04:52 PM
দুই দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে চার ঘণ্টার বেশি সময় পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিয়েছেন চা-শ্রমিকরা।
সরকার ঘোষিত ১৪৫ টাকা মজুরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে হবিগঞ্জের ২৪ চা বাগানের শ্রমিকরা রোববার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল জানান, শ্রমিকরা মোট চার ঘণ্টা ৪০ মিনিট ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে তারা স্বেচ্ছায় সড়ক থেকে সরে যায়।
তিনি বলেন, “তবে শ্রমিকরা আগামী ২৩ তারিখ পর্যন্ত আলিমেন্টাম দিয়েছে। এর মধ্যে তাদের মজুরি ৩০০ টাকা করা না হলে আবার আন্দেলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।”
সকাল থেকেই চা শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কর জগদীশপুর পয়েন্টের মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে জড়ো হতে থাকেন। ফলে ওই সড়কের প্রায় দুই থেকে তিন কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে বাড়তি পুলিশ মোতায়ন করা হয়।
শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যাওয়ার পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল আবার স্বাভাবিক হয় বলে মাধবপুর থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম কিবরিয়া জানিয়েছেন।
দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে ৯ অগাস্ট থেকে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন দেশের ২৪১টি চা বাগানের প্রায় সোয়া লাখ শ্রমিক। প্রথম চারদিন শ্রমিকরা প্রতিদিন দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। তারপর তারা বাগানের কাজে ফেরেন।
কিন্তু ১৩ অগাস্ট থেকে কাজে না গিয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা। তারা এ সময় বাগানের সেকশনে এবং রাজপথেও মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন।
এর মধ্যে বেশ কয়েকবার শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে এবং একবার ঢাকায় মালিকদের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হলেও তাতে কোনো ফল আসেনি। ফলে পাতা তোলার ভরা মৌসুমেও শনিবার টানা ১২ দিনের মতো আন্দোলন ও কর্মবিরতিতে ছিলেন শ্রমিকরা।
মালিকপক্ষ দাবি করছিলেন, এই সময়ে ধর্মঘট থাকায় পাতা তুলতে না পরায় বাগানের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।
তবে চা শ্রমিক নেতারা বলে আসছিলেন, শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান মালিকদের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী দুই বছর পর পর মজুরি বৃদ্ধি করার কথা থাকলেও মালিকরা চুক্তির আইন ভঙ্গ করছেন। ১৯ মাস ধরে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না।
নির্দিষ্ট সময়ে চুক্তি বাস্তবায়ন হলে দেড় বছর আগেই শ্রমিকদের মজুরি বাড়তো। কিন্তু তা না হওয়ায় বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে চা শ্রমিকরা কষ্ট করে জীবনাযাপন করছেন।
এরই মধ্যে শনিবার দুপুর থেকেই শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারের বাগানে বাগানে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন- এমন একটি খবর প্রচার হতে থাকে। শ্রমিকরা তখন বাগানে সমাবেশ, মিছিলে ছিলেন। তারা বাগান ছেড়ে শ্রম অধিদপ্তরের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। শ্রমিক নেতারা যখন ভিতরে বৈঠক করছিলেন, তখন বাইরে প্রচুর শ্রমিক অপেক্ষা করছিলেন।
বিকালে বৈঠক শেষে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে। দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা করার প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে শনিবার টানা ১২ দিনের আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার ঘোষণা দেন চা শ্রমিকরা।
তবে উপস্থিত শ্রমিকদের মধ্যে অবশ্য কেউ কেউ দাবি না মানার কথা তখন বলেছিলেন।