বগুড়া ছাত্রলীগ কমিটি: বিভক্ত আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক নতুনের পক্ষে

শহরের মুজিব মঞ্চে নবগঠিত কমিটিকে নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সমাবেশ করেছেন।

জিয়া শাহীনবগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2022, 06:13 PM
Updated : 11 Nov 2022, 06:13 PM

বগুড়া ছাত্রলীগের নুতন কমিটি নিয়ে কাঙ্খিত পদবঞ্চিতদের পাঁচ দিনের বিক্ষোভের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতা নতুন কমিটিকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। 

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের সাতমাথার মুজিব মঞ্চে ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটিকে নিয়ে সমাবেশ করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতারা। 

অন্যদিকে নতুন কমিটি বাতিল চেয়ে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে তালা দিয়ে সমাবেশ করেছন আন্দোলনকারীরা। 

তাদের সঙ্গে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন।  

বিক্ষোভকারীরা ছিলেন শহরের সাতমাথা টেম্পল রোডে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে; আর সেখান থেকে ৩০ গজ দূরে মুজিব মঞ্চের সভা করেন নবগঠিত কমিটির সদস্যরা। 

সরেজমিনে দেখা যায়, নবগঠিত কমিটির সমর্থনের ছাত্রলীগের ব্যানারে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত হন। স্লোগান আর মিছিলে সাতমাথায় তারা অবস্থান নেন। পরে মুজিব মঞ্চে সমবেত হন।   

সেখানে এক সমাবেশের আয়োজন করেন তারা। তবে তারা দলীয় কার্যালয়ে ঢোকেননি কিংবা বিক্ষোভকারীদের কাছে যাননি। 

অবশ্য সহিংসতা এড়াতে মাঝখানে আগে থেকেই পুলিশ শক্ত অবস্থানে ছিল।   

নতুন কমিটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আয়োজিত সমাবেশের প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু। সভা সঞ্চালনা করেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাস। 

নবগঠিত ছাত্রলীগের কমিটিকে নিয়ে চলমান গত কয়েকদিনের সংকট মাথায় রেখে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের অনুসারীদের নিয়ে এই প্রথম মাঠে এলেন।  

সভার প্রধান অতিথি মজনু বলেন, বগুড়া ছাত্রলীগে আপনারা যারা আছেন, প্রত্যেকেই যোগ্য ও ত্যাগী নেতা। কিন্তু কমিটির নেতৃত্বের পদ দুটি। আপনারা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সিভি জমা দিয়েছেন। কেন্দ্র সিভি যাচাই করে যে দুজনকে ভালো মনে করেছে পদ দিয়েছে। 

“আপনারা সবাই ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি সজিব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক মাহিদুল ইসলাম জয়কে মেনে নিয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আর যারা মনে করছেন কাঙ্ক্ষিত পদ পাননি, যারা অন্য পথে রয়েছেন, তাদেরও একসঙ্গে নিয়ে কাজ করবেন।” 

সভাপতি মজনুর প্রতি সমর্থন জানিয়ে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন নবাব, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাজেদুর ইসলাম শাহিন।  

এ সমাবেশে পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল মতিন, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল, জেলা শ্রমিক লীগ নেতা সামসুদ্দিন শেখ হেলাল, আব্দুল মতিনসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। 

কমিটির পক্ষের এ সমাবেশের পরপর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে কয়েকদিন ধরে অবস্থানরত ছাত্রলীগের একংশের নেতারা আরেকটি সমাবেশ করেন। 

ছাত্রলীগের নতুন কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভকারীদের আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুঞ্জুরুল আলম মোহন।  

ছাত্রলীগের কমিটিকে অবৈধ উল্লেখ করে মোহন বলেন, “আপনারা চারদিন ধরে একটি অযোগ্য কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। এ আন্দোলনের সঙ্গে আমি একাত্মতা ঘোষণা করছি। এই কমিটির বিষয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সাথে কথাবার্তা হবে। দুই দিনের মধ্যে এই কথাবার্তার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের একটি মিটিং ডেকে সমাধানের কথা বলেছে। এই দুই দিন তারা এখানে আসবেন না। আপনারা যারা আন্দোলন করছেন আপনারাও আসবেন না।”  

মঞ্জুরুল আলম মোহন আরও বলেন, “পার্টি অফিস উন্মুক্ত থাকবে। এখানে সবাই আসবে। শুধু যাদের নামে কমিটি ঘোষণা হয়েছে তারা আসবে না।” 

এই সমাবেশে ছাত্রলীগের বিক্ষোভকারী নেতা তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ, সিদ্ধার্থ কুমার সাহা, মাহফুজার রহমান, মিথিলেস কুমার প্রসাদ, রাকিবুল হাসান শাওন, নূর মোহাম্মাদ সাগরসহ আরও অনেক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।   

এর আগে বৃহস্পতিবার ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন সহ-সভাপতি টি জামান নিকেতা, যুগ্ম সম্পাদক আসাদুর রহমান দুলু, প্রচার সম্পাদক রনি প্রমুখ। 

বিরোধিতাকারী দলে শতাধিক নেতা-কর্মী রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির পদধারীর আছেন।   

সোমবার (৭ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের ৩০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সজীব সাহাকে সভাপতি এবং আল-মাহিদুল ইসলাম জয়কে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। 

কমিটি ঘোষণার পর কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে জেলা ছাত্রলীগের একাংশ তাদের অনুসারীদের নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর চারদিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের এই জেলা কার্যালয় তালাবন্ধ থাকে।