শ্রীমঙ্গলের রাজঘাটের রানার উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের কয়েকশ শিক্ষার্থীর সঙ্গে খেজুরিছড়া চা বাগানের প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও কিছু শিক্ষার্থীও মানববন্ধনে অংশ নেয়।
Published : 25 Aug 2022, 03:38 PM
মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে থাকা চা শ্রমিকদের সমর্থনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে স্থানীয় একটি স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গলের খেজুরিছড়া চা বাগানের নাট মন্দিরের সামনে
রানার উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের কয়েকশ শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। তাদের সঙ্গে খেজুরিছড়া চা বাগানের প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও কিছু শিক্ষার্থী যোগ দেয়।
দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ১৭ দিন ধরে আন্দালন করে যাচ্ছেন সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের প্রায় দেড়শ বাগানের শ্রমিক।
এর মধ্যে মাঝে একদিন প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের কথা শোনার পর কয়েকটি বাগানে শ্রমিকরা কাজে নেমেছিলেন কিন্তু পরে তারা আবার কাজ বন্ধ করেন।
তাদের ভাষ্য, প্রধানমন্ত্রীর নিজের মুখে না বললে তারা সরকারি কর্মকর্তাদের কথায় আস্থা রাখতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রী টেলিভিশনে হলেও তাদের উদ্দেশে আশ্বাস দিলে তারা কাজে ফিরবেন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া চা শ্রমিকের সন্তান কলেজছাত্র সঞ্জিত তাঁতী বলেন, তাদের লেখাপড়া করাতে ও অন্নবস্ত্র দিতে তাদের অভিভাবকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেন । নিজে না খেয়ে অনেক সময় কাজে যান এবং তাদের খেতে দেন। তাদের চোখের সামনে মা-বাবা অবর্ণনীয় কষ্ট করেন।
“এবার তো এর পরিবর্তন হওয়া উচিৎ। আর কত কষ্ট করবেন আমাদের মা-বাবারা?”
আরেক শিক্ষার্থী প্রীতি রানী বলেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এই মজুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বাস্তবতা নিরীখে যেন তাদের অভিভাবকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন; এ বিষয়েও যেন একটু সুদৃষ্টি দেন।”
এদিকে কাজ না করায় বুধবার সাপ্তাহিক মজুরি (তলব) পাননি শ্রমিকরা। এতে তাদের অর্থকষ্ট আরও বেড়ে গেছে।
চা শ্রমিক সন্তান অজিত বুনার্জী বলেন, বুধবার বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের একদিনের বেতন ও অতিরিক্ত ৫শ টাকা করে আনার জন্য বলেছিল। কিন্তু আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীরা তা গ্রহণ না করতে বলায় কেউ সে টাকা নেয়নি।
এদিকে এই সাপ্তাহে মজুরি না পাওয়ায় অনেক শ্রমিকই সংসার পরিচালনা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
ফুলছড়া চা বাগানের শ্রমিক সাবিত্রী নায়েক বলেন, “তলব নেই; দোকানদার বাকি দেয় না। আমরা মরে যাই। মরে যাওয়ার পরে কেউ এসে শেষ করুক।”
এ বিষয়ে সন্তানদের পক্ষে মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেওয়া মোহন রবি দাশ তার ফেইজবুকে লাইভে এসে বলেন, এখন হাজরি নেই শ্রমিকদের ঘরে খাবার নেই।
তাদেরকে জন্য বাগানের অবস্থাশালীদের কাছ থেকে বা অন্য কোনো জায়গা থেকে যথাসম্ভব অর্থ সংগ্রহ করে তাদের খাবার যোগান দিতে ছাত্রযুব সংসদের সদস্যদের আহবান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, চা শ্রমিক ইউনিয়নের ফান্ডে শ্রমিকদের লক্ষ লক্ষ টাকা আছে, চা বোর্ডের ফান্ড আছে; সেসব জায়গা থেকে তা সংগ্রহ করতে হবে।
এদিকে প্রতিদিনই কুঁড়ি বড় হয়ে বাড়ছে পাতার সংখ্যা।
বাংলাদেশীয় চা সংসদের সদস্য ও ফিনলে টি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তাহসিন আহমদ চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে শতশত কোটি টাকার চা নষ্ট হয়ে গেছে। এ শিল্প অন্য শিল্পের মতো নয়। এটি প্রকৃতি নির্ভর ও পচনশীল।
শ্রীমঙ্গললের বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাহিদুল ইসলাম বলেন, “শ্রম দপ্তরের উদ্যোগে নতুন কোনো বৈঠকের সিন্ধান্ত নেই। আমরা বৈঠক করেছি চা শ্রমিক নেতাদের সাথে। এখন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেখা হচ্ছে।”
দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে ৯ অগাস্ট থেকে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি শুরু করেন চা শ্রমিকরা। চারদিন চলার পরও কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ১৩ অগাস্ট থেকে তারা একেবারে কাজ বন্ধ করে দেন।
মৌলভীবাজারের ৯২টি, হবিগঞ্জের ২৪টি এবং সিলেটের ২৩টি বাগানের শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।