ঘূর্ণিঝড় মোখা: ঝুঁকিতে বাগেরহাটের বেড়িবাঁধ, প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা

উপকূলীয় শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদের ৩৫/১ পোল্ডারের তিনটি পয়েন্টের টেকসই বেড়িবাঁধের দেড় কিলোমিটার অংশ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2023, 11:53 AM
Updated : 13 May 2023, 11:53 AM

বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। এর প্রভাবে বাগেরহাটের প্রধান নদ-নদীর পানির উচ্চতা বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

তবে শনিবার দুপুর পর্যন্ত নদ-নদীগুলো শান্ত রয়েছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকভাবেই বইছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এসব নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে অন্তত তিন থেকে ছয় ফুট পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে কিছু এলাকা ঝুঁকিতে পড়বে বলে জানিয়েছেন পাউবোর বাগেরহাট অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ।

তিনি বলেন, “বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ২২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে শরণখোলার ৬৫ কিলোমিটার বাঁধ সুরক্ষিত আছে। সুন্দরবন সংলগ্ন মোংলা উপজেলায় কোনো বাঁধ নেই। আবার মোরেলগঞ্জ ও রামপাল উপজেলায় আংশিক বাঁধ রয়েছে। ফলে এসব এলাকা ঝুঁকিতে রয়েছে।”

আবহাওয়ার পূর্বভাস অনুযায়ী, এসব এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানান পাউবোর এই প্রকৌশলী।

যেসব এলাকার বাঁধের উচ্চতা কম সেসব এলাকায় সংষ্কার কাজ চলমান জানিয়ে তিনি বলেন, “নদী ও বাঁধ ভাঙন দেখা দিলে জরুরি সংস্কার কাজের জন্য জিওব্যাগ ও সিনথেটিক ব্যাগ মজুদ রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলে এসব ব্যবহার করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হবে।”

পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, উপকূলীয় শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদের ৩৫/১ পোল্ডারের তিনটি পয়েন্টের টেকসই বেড়িবাঁধের দেড় কিলোমিটার অংশ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

এ ছাড়া স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে জেলার নিন্মাঞ্চলের মাছের ঘেরগুলো ভেসে যাওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল দুপুরে বলেন, “জেলার মাছের ঘেরগুলো অধিকাংশ নদীবেষ্টিত এলাকায়। জোয়ারের পানির চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই ঘের থেকে মাছ যেন বের হয়ে যেতে না পারে সেজন্য মালিকদের ঘেরের চারপাশে নেট ও জাল দিয়ে ঘিরে দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”

মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাটে বাগদা ও গলদা মিলিয়ে ৭৮ হাজার ১০০টি ঘের রয়েছে। চলতি মৌসুমে চিংড়ি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ হাজার ৯৪৮ মেট্রিকটন।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহম্মদ বেলায়েত হোসেন জানিয়েছেন, বনবিভাগের সব স্টেশন, ক্যাম্প ও টহল ফাঁড়িতে কর্মরতদের নিরাপদে থেকে দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঝড়ের পূর্বাভাসের কারণে গত তিনদিন ধরে সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা কমেছে জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, “এর পরেও যারা আসছেন তাদের কাছকাছি ঘুরে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”

বাগেরহাটে ৪৪৬টি ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।

তিনি বলেন, “এসব কেন্দ্রে দুই লাখের বেশি মানুষ যেন আশ্রয় নিতে পারে, সেই প্রস্তুতি এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে। শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, চালসহ দুর্গত মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।”

এরপর পরিস্থিতি অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।