ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি পঞ্চাশ বছর বয়স পেরুনো বেলায়েত শেখ।
মঙ্গলবার ‘সি’ ইউনিটের ফল প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ভর্তির সুযোগ পাওয়াদের তালিকায় তার রোল নম্বর নেই।
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকে ভর্তি পরীক্ষায় গত রোববার ‘সি’ ইউনিটভুক্ত কলা ও মানবিক অনুষদ এবং বঙ্গবন্ধু সাহিত্য ইনস্টিটিউটের প্রথম শিফটে পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি।
নির্ধারিত আসন সংখ্যার বিপরীতে ১০ গুণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীর মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। প্রকাশিত মেধা তালিকায় বেলায়েতের রোল নম্বর পাওয়া যায়নি।
বেলায়েত শেখের কাছে ফলাফল নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার হয়তো ভাগ্য মন্দ; সেজন্য জাবিতে হলো না। এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।”
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেলে কোথায় পড়বেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি পাবলিকে চেষ্টা করতেছি। পাবলিকে চান্স হলে আমার যে অর্থনৈতিক সমস্যাটা আছে এটা কেটে যাবে। আর যদি প্রাইভেটে পড়তে চাই এটার ক্ষেত্রে টাকা-পয়সার ব্যাপার আছে। আমাকে তো টাকা রোজগার করতে হবে। আমার তো আর আগের মতো যৌবন নাই যে দিনে-রাতে পরিশ্রম কইরা ইনকাম করব। আমার সংসারও চালাইতে হবে। প্রাইভেট আমার জন্য কষ্টকর হবে।”
এবারের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধের প্রথম দিন রোববার ‘সি’ ইউনিটভুক্ত কলা ও মানবিকী অনুষদ এবং বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিউটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই ইউনিটে আসন সংখ্যা ৪৬৬। আবেদনকারীর সংখ্যা ৫৩ হাজার ৪৩০। সে হিসাবে আসন প্রতি লড়েছেন ১১৪ জন।
আগ্রহের কমতি না থাকলেও আর্থিক দুরবস্থা ও বাবার অসুস্থতার কারণে ১৯৮৩ সালে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর লেখাপড়া থেকে ছিটকে গিয়ে সংসারের হাল ধরেছিলেন বেলায়েত শেখ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে নিজের ‘অপূর্ণতা’ তিনি পূরণ করতে চেয়েছিলেন ভাই-বোনদের মাধ্যমে, পরবর্তীতে সন্তানদের দিয়ে। কিন্তু তা পূরণ না হওয়ায় আক্ষেপ নিয়ে তিনিই আবার লেখাপড়া শুরু করেন।
বেলায়েত শেখ জানান, ২০১৭ সালে ঢাকার বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদরাসা থেকে ৪ দশমিক ৪৩ জিপিএ নিয়ে তিনি এসএসসি (ভোকেশনাল) পাস করেন। এরপর ২০২১ সালে রামপুরার মহানগর কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৫৮ পেয়ে পাস করেন এইচএসসি (ভোকেশনাল)।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায়ও তিনি পাশ করতে পারেননি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও ফলাফলের অপেক্ষায়।
তিনি বলেন, “রাজশাহীতেও হয়তো চান্স পাব না। পরীক্ষা তেমন ভালো হয়নি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব। অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিব না।”
বেলায়েতের জন্ম ১৯৬৮ সালে; শ্রীপুরের কেওয়া পশ্চিম খণ্ড এলাকায় স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। দৈনিক করতোয়া পত্রিকায় শ্রীপুর প্রতিনিধি হিসেবে কাজের পাশাপাশি তিনি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।