‘বীর নিবাস’ নির্মাণে শিডিউল জমা দিতে না দেওয়ার অভিযোগ

৫০৫ ঠিকাদার শিডিউল কিনেছিলেন, সোমবার শেষ দিনে ২২টি জমা পড়েছে, জানান মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।

মাদারীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2024, 06:03 PM
Updated : 12 March 2024, 06:03 PM

মাদারীপুরে অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারিভাবে ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য শিডিউল কিনেও ‘বাধার কারণে’ জমা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ঠিকাদার; ঘটেছে মারামারির ঘটনাও। 

সাড়ে ছয় কোটি টাকার এ প্রকল্পের দরপত্রে অংশ নেওয়া এক প্রভাবশালী ঠিকাদার বাধা দেন বলে অভিযোগ তাদের। সোমবার দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে এ নিয়ে মারামারিও হয়েছে।  

এ প্রকল্পের পাঁচটি প্যাকেজের জন্য ৫০৫ ঠিকাদার শিডিউল কিনেছিলেন। সোমবার শেষ দিনে মোট ২২টি জমা পড়েছে বলে জানান দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যসচিব ও সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মশিউর রহমান। 

সদর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাস নির্মাণ প্রকল্পের’ আওতায় মোট ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকার কাজের জন্য ১৮ ফেব্রুয়ারি দরপাত্র আহ্বান করে সদর উপজেলা প্রশাসন।

পাঁচটি প্যাকেজের প্রতিটিতে সাতটি করে ঘর নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি প্যাকেজের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা করে।

শিডিউল জমা দিতে না পেরে ক্ষুব্ধ এক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করে বলেন, “ঠিকাদার শাজাহান হাওলাদারকে কাজটি পাইয়ে দেওয়ার জন্য সকাল থেকেই ইউএনও কার্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। অনেককে ভাড়া করে আনা হয়েছে। ঠিকাদাররা শিডিউল জমা দিতে গেলেই তারা মারধর করে, বাধা দেয় এবং তাদের বের করে দেয়।”

সদর উপজেলা পরিষদের সামনে ঠিকাদারদের মারধরের একটি ভিডিও সাংবাদিকদের হাতে এসেছে।

‘বীর নিবাস’ প্রকল্পের শিডিউল কিনেছিলেন উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খান। তিনিও শিডিউল জমা দিতে পারেননি।

তিনি বলেন, “আমি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা-পিআইও অফিসের বীর নিবাস প্রজেক্টের টেন্ডারের কাগজপত্র জমা দিতে সঠিক সময়ে এসেছি। কিন্তু আমাকে এখানকার কিছু লোক টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে দেয়নি। শিডিউলই জমা দিতে পারিনি। অথচ এই প্রকল্পের একটি প্যাকেজ আমার ইউনিয়নে রয়েছে।”

একই অভিযোগ করেন দুধখালি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবীর খান। তিনি বলেন, “সোমবার সকালে এসেছিলাম বীর নিবাসের টেন্ডারে অংশ নিতে। কিন্তু শিডিউল জমা দিতে দেয়নি। এই উপজেলা পরিষদের পাশে কিছু ঠিকাদারের বাড়িঘর আছে। তারা প্রভাব বিস্তার করে আমাকে শিডিউল জমা দিতে দেয়নি।”

মাদারীপুর পৌরসভার কাউন্সিলর সাইদুল বাশার টফি বাধার মুখেও শিডিউল জমা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আমি শিডিউল জমা দিতে পারলেও পরবর্তীতে একটি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। এই বিষয়টি নিয়ে আপাতত আমি আর কিছু বলতে চাই না।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ঠিকাদার বলেন, “এই টেন্ডার প্রক্রিয়াটি বিতর্কিত হয়ে গেছে। এটি বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করা হোক। আর ক্ষতিগ্রস্ত ঠিকাদারদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেওয়া হোক।”

তার দাবি, যারা শিডিউল জমা দিয়েছে তাদের সঙ্গে আপোস করার জন্য বৈঠকও হয়েছে।

ঠিকাদার শাজাহান হাওলাদারের কার্যালয় উপজেলা পরিষদের পাশেই। দুপুরে সেখানে গেলে তিনি শিডিউল জমাদানে বাধা এবং এ নিয়ে মারামারির বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।

তার লোকেরা শিডিউল জমা দিতে দেয়নি- এমন অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন। 

এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, “আমরা তো কাউকে টেন্ডার জমা দিতে নিষেধ করিনি। এই টেন্ডার নিয়ে অফিসের বাইরে ঠিকাদাররা আপোস করবে কি না সেটা তো আমরা বলতে পারব না।

“সোমবার যেসব ঠিকাদার শিডিউল জমা দিয়েছেন তাদের উপরেই মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যার দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি; তিনিও বিষয়টি দেখবেন।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল-মামুন বলেন, “মারামারি আমার অফিসে হয়নি। অফিসের বাইরে হলেও হতে পারে। ৫০৫টি শিডিউল বিক্রি হয়েছে সেখানে জমা পড়েছে ২২টি।

“আমরা তো শিডিউল জমা দিতে কাউকে নিষেধ করিনি। যারা জমা দিছে তাদের নিয়েই আমরা মূল্যায়ন কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেব।”